
দ্য ওয়াল ব্যুরো: দিন পনেরো আগে উত্তরপ্রদেশে গিয়ে রাবড়ি-রাজনীতি নিয়ে সরব হয়েছিলেন। এ সপ্তাহের গোড়ায় বলেন, রাজনীতিতে মানুষকে সত্য কথা বলার সাহস থাকা দরকার। সেই প্রসঙ্গেই বলেছিলেন, বিদ্যুতে লাগামহীন ভর্তুকি দিতে গিয়ে রাজ্য সরকারগুলি কী বিপদ ডেকে এনেছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর (Narendra Modi) কথার ধারাবাহিকতা মেনেই যেন বুধবার সুপ্রিম কোর্টে (Supreme Court) কেন্দ্রীয় সরকার জানাল, রাজনৈতিক দলগুলির বিনামূল্যে সুবিধা দেওয়ার প্রতিশ্রুতিগুলি বিলনোর পরিণতি অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাব ফেলছে এবং তা অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের দিকে নিয়ে যেতে পারে দেশকে। একথায়, মোদী সরকার আজ জনবাদী রাজনীতিকে সর্বোচ্চ আদালতের কাঠগড়ায় তুলেছে। প্রধান বিচারপতি এনভি রামানা (N V Ramana) মামলাটির গুরুত্ব মেনে নিয়ে বলেন, এটি একটি গুরুতর বিষয় সন্দেহ নেই। প্রতিটি রাজনৈতিক দল বিনামূল্যের সুবিধা প্রদানের মাধ্যমে উপকৃত হয় বলে মন্তব্য করেন প্রধান বিচারপতি।
মোদী সরকারের তরফে আজ এক মামলায় এই বিষয়ে আদালতে সরব হন সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা। তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশনের উচিত নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক দলগুলির এই ধরনের বিনামূল্যে সুবিধা প্রদানের প্রতিশ্রুতি বিলনোর বিষয়টি নিয়ে পদক্ষেপ করা। তাঁর কথায়, জনপ্রিয় প্রতিশ্রুতি ভোটারদের উপর বিরূপ প্রভাব ফেলে। সেই সঙ্গে অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের দিকে আমাদের ঠেলে দেওয়া হচ্ছে। মেহতার বক্তব্য, আমরা শুধু পরামর্শই দিতে পারি। পদক্ষেপ নির্বাচন কমিশনকে করতে হবে।
এই বিষয়ে মামলা করেছেন বিজেপি নেতা অশ্বিনীকুমার উপাধ্যায়। মামলায় তিনি দাবি করেছেন, রাজনৈতিক দলগুলির নিবন্ধীকরণ এবং পুনর্নবীকরণের সময়ই নির্বাচন কমিশনকে অন্যায্য সুবিধা প্রদানের প্রতিশ্রুতি বিলনোর বিষয়টি আটকাতে হবে।
সলিসিটর জেনারেল মামলায় উত্থাপিত বক্তব্যের সপক্ষে ইঙ্গিত করেন, বিনামূল্যে সুবিধা বিলনোর প্রতিশ্রুতি পালনে এক ধরনের ছলনার আশ্রয় নেওয়া হচ্ছে। অর্থাৎ ডান পকেটে যে অর্থ দেওয়া হবে তা বাঁ পকেট থেকে নিয়ে নেওয়া হবে।
প্রসঙ্গত, ভোটের আগে নিখরচায় সরকারি সুবিধা প্রদানের বিষয়টি নতুন না হলেও তা মূলত দক্ষিণের রাজ্যগুলিতে প্রচলিত ব্যবস্থায় পরিণত হয়েছিল। তামিলনাড়ুতে ভোটারদের থালা-বাটি-গ্লাস, ট্র্যানজিস্টার বিলি করা হয়েছে একটা সময়। এখন গোটা দেশেই মোবাইল, ট্যাব, ল্যাপটপ বিলনো হয়ে থাকে। সেই সঙ্গে বিনামূল্যে বিদ্যুৎ তো আছেই।
প্রধানমন্ত্রী সম্প্রতি বিদ্যুৎ উৎপাদন সংক্রান্ত বিষয়ে আলোচনায় উদ্বেগের সঙ্গে বলেন, দেশের বিদ্যুৎ উৎপাদন ও বণ্টনের সঙ্গে যুক্ত কোম্পানিগুলির রাজ্য সরকারেগুলির কাছে আড়াই লাখ কোটি টাকা বকেয়া। প্রধানমন্ত্রীর প্রশ্ন সরকারগুলি গ্রাহকদের ভর্তুকি দরে বিদ্যুৎ দিচ্ছে। কিন্তু কোম্পানিগুলির টাকা মেটাচ্ছে না।
এর আগে উত্তরপ্রদেশে একটি এক্সপ্রেসওয়ের উদ্বোধন করতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী রাবড়ি-রাজনীতির উল্লেখ করেন। উত্তর ভারতে অতিথি আপ্যায়নে রাবড়ি খাওয়ানোর রেওয়াজ আছে। প্রধানমন্ত্রী বলার চেষ্টা করেন, সরকারি টাকাকে রাজনৈতিক দল ও কোনও কোনও সরকার রাবড়ি ভাবতে শুরু করেছে। যত ইচ্ছে বিলোচ্ছে। তাঁর প্রশ্ন ছিল, জনতাকে খুশি করার নামে বিনা পয়সায় সরকারি সুবিধা বিলি করা হলে রাস্তা, এক্সপ্রেসওয়ে তৈরির টাকা আসবে কোথা থেকে?
নিখরচায় সরকারি সুবিধা প্রদানের বিষয়ে নানা সময়ে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের নামও এসেছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের লক্ষ্মীর ভাণ্ডার, স্বাস্থ্যসাথীর খরচ নিয়ে অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন। তাঁদের বক্তব্য, সুবিধা গরিব মানুষকে দেওয়া হোক। সবাই কেন সরকারি সুবিধা সস্তায় কিংবা বিনামূল্যে পাবে? আশ্চর্যের হল, কেন্দ্রীয় সরকার আপত্তি তুললেও তাদের আয়ুষ্মান ভারত প্রকল্পেও আয়ের কোনও মানদণ্ড রাখা হয়নি। যেমন প্রধানমন্ত্রী কৃষিকর্মণ যোজনাতেও নেই আয়ের মাপকাঠি।
প্রধান বিচারপতি আজ এই মামলায় কোনও অন্তবর্তী আদেশ দেননি। তাঁর বক্তব্য, এই ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের বক্তব্য শোনা দরকার। তিনি চান সব রাজনৈতিক দল, রিজার্ভ ব্যাঙ্ক, নীতি আয়োগ, ফিনান্স কমিশন, আইন কমিশন এবং নির্বাচন কমিশন তাদের মতামত দিক।
শুনানিতে উপস্থিত প্রবীণ আইনজীবী কপিল সিব্বলকেও প্রধান বিচারপতি বলেন, আপনিও মতামত দেবেন। প্রধান বিচারপতি ইঙ্গিত করেছেন, তিনি সব পক্ষকে নিয়ে একটি ফোরাম তৈরি করতে চান, যারা এই বিষয়ে করণীয় সম্পর্কে পরামর্শ দেবে।
মামলাকারী বিজেপি নেতার বক্তব্য, বিনামূল্যে সুবিধা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি এক ধরনের স্বেচ্ছাচারীতা। সুষ্ঠু নির্বাচনের পক্ষে কমিশনের নিয়মকানুনের তা পরিপন্থী। তিনি পাঞ্জাব, উত্তরপ্রদেশসহ কয়েকটি রাজ্যের বিধানসভা ভোটে রাজনৈতিক দলগুলির দেওয়া বিপুল সুবিধা ঘোষণা দৃষ্টান্ত হিসাবে মামলায় উল্লেখ করেছেন।
আরও পড়ুন: মন্ত্রিসভার রদবদলের ঠিক আগে ববি: ‘হাম রহে ইয়া না রহে…’