
দ্য ওয়াল ব্যুরো: তুর্কমেনিস্তানের (Turkmenistan) উত্তরে আছে সাড়ে তিন লক্ষ বর্গ কিলোমিটার বিস্তৃত কারাকুম মরুভূমি (Karakum Desert)। তার মধ্যেই আছে ‘নরকের দরজা’ (Gate of Hell)। স্থানীয় মানুষ তাকে বলেন ‘দরওয়াজা ক্রেটার’। সেখানে ১৯০ ফুট দীর্ঘ আর ৭০ ফুট গভীর গর্তের মধ্যে দাউদাউ করে জ্বলে আগুন। হিসহিস করে আগুনের শিখা উঠে আসে মরুভূমির গর্ভ থেকে। কেউ জানে না কবে থেকে ওই আগুন জ্বলছে।
একটা গুজব চালু আছে, সোভিয়েত বিজ্ঞানীদের জন্যই নাকি মরুভূমিতে আগুন জ্বলে উঠেছিল। ১৯৭১ সালে তাঁরা কারাকুম মরুভূমির ওই অঞ্চলে তেলের জন্য খোঁড়াখুড়ি করছিলেন। এমন সময় বিরাট এক গর্তের সন্ধান পাওয়া যায়। তার ভেতরে ছিল বিষাক্ত গ্যাস। বিজ্ঞানীরা ভেবেছিলেন, আগুন ধরিয়ে দিলে একসময় গ্যাস পুড়ে যাবে। তাই তাঁরা আগুন জ্বালান। কিন্তু তারপরে দীর্ঘ ৫১ বছরে আগুন নেভেনি। প্রশ্ন হল কেন আগুন নেভেনি? ঠিক কী পরিমাণ গ্যাস জমা আছে ওই গর্তের মধ্যে?
তুর্কমেনিস্তানের সরকারি নথিপত্রে অবশ্য উল্লেখ নেই, কে বা কারা প্রথমে ‘নরকের দরজা’-র খোঁজ পেয়েছিল। কানাডার অভিযাত্রী জর্জ কোউরোউনিস একবার জানতে চেষ্টা করেছিলেন, আগুনের উৎস কী। পরে তিনি ‘ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক’ পত্রিকার সাক্ষাৎকারে বলেন, “আগুনের যা উত্তাপ, গর্তের কাছে যাওয়াই যায় না। রাতদিন সেখানে আগুন জ্বলছে। গর্তের কাছাকাছি গেলেই তার হিসহিস শব্দ পাওয়া যায়।”
দেখুন ভয়ংকর ভিডিও।
তুর্কমেনিস্তানের ভূতত্ত্ববিদরা অনেকে মনে করেন, ছ’য়ের দশকে ওই গহ্বর সৃষ্টি হয়। আটের দশকের আগে সেখানে আগুন জ্বলেনি। ২০১০ সালে ওই গহ্বরের কাছে গিয়েছিলেন দেশের প্রেসিডেন্ট গুরবানগুলি বার্দমুখামেদভ। তিনি হুকুম দিয়েছিলেন গর্ত বুজিয়ে দিতে হবে। কিন্তু সেই গর্ত বোজানোর সাধ্য হয়নি কারও। ২০১৩ সালে প্রেসিডেন্ট ঘোষণা করেন, ওই গর্তে আছে প্রাকৃতিক সম্পদ। তাকে রক্ষা করতে হবে। ২০১৮ সালে তিনি গহ্বরের নতুন নামকরণ করেন ‘শাইনিং অব কারাকুম’, অর্থাৎ কারাকুমের জ্যোতি।
‘নরকের দ্বার’ এখন বিশ্ব জুড়ে পর্যটকদের অন্যতম আকর্ষণের জায়গা। কিন্তু গত শনিবার প্রেসিডেন্ট বার্দমুখামেদভ সরকার নিয়ন্ত্রিত টিভিতে ফের বলেছেন, ওই গহ্বর বুজিয়ে দেওয়া হবে। তাঁর যুক্তি, ওই আগুন পরিবেশের ক্ষতি করছে। স্থানীয় মানুষের স্বাস্থ্যেরও ক্ষতি হচ্ছে। তাঁর কথায়, “আমরা ওই আগুনের জন্য মূল্যবান প্রাকৃতিক সম্পদ হারাচ্ছি। ওই সম্পদ পেলে আমরা মানুষের স্বার্থে আরও বেশি কাজ করতে পারব।”
বিজ্ঞানীদের মতে, ওই গহ্বরের মধ্যে বিপুল পরিমাণ হাইড্রোকার্বন সঞ্চিত আছে। তুর্কমেনিস্তান সরকার এখন আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞদের সাহায্য নিয়ে ওই আগুন নেভানোর চেষ্টা করবে। তারা আদৌ সফল হবে কিনা, তা নিয়ে কৌতুহল সৃষ্টি হয়েছে নানা মহলে।