
দ্য ওয়াল ব্যুরো: সংসারের হাল ধরতে একসময় গ্রামে গ্রামে গ্রামে ঘুরে চানাচুর, বিস্কুট ফেরি করত। রাতে বাড়ি ফিরে চলত পড়াশোনা। মাধ্যমিকের আগেও চানাচুর বিক্রি বন্ধ করেনি। তাহলে খাবে কী! সব কাজ সবদিক সামলেই পরীক্ষার প্রস্তুতি নিয়েছে সে। এতকিছু করেও মাধ্যমিকে ৭০ শতাংশ নম্বর নিয়ে পাশ করল মুর্শিদাবাদের জিয়াগঞ্জের (Murshidabad Boy) বাসিন্দা ঋক রায়।
জানা গেছে, ঋকের বাবা অসুস্থ হয়ে চলাফেরার ক্ষমতা হারিয়ে দীর্ঘদিন শয্যাশায়ী ছিলেন। এমনকি ছেলের মাধ্যমিক পরীক্ষার কয়েকদিন আগেই মারা যান তিনি। রেশনে পাওয়া চাল, গমে আর সংসার চলছিল না। এমনই দুষ্কর সময়ে পরিবারের সদস্যদের মুখে ডাল-ভাত তুলে দিতে সংসারের ভার নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছিল বছর তেরোর এই ছেলেটি। ট্রেনে চেপে মুর্শিদাবাদ থেকে বীরভূমের মুরারইয়ের গ্রামে গ্রামে ঘুরে চানাচুর, বিস্কুট, লজেন্স বিক্রি করত। পাশাপাশি পড়াশোনাও চালিয়ে যেত। সে সব করেও মাধ্যমিকে এত ভাল রেজাল্ট করেছে ঋক (Murshidabad Boy)।
আরও পড়ুন: ভাইয়ের বাড়ি যেতে গিয়ে দুর্ঘটনা, জামাইয়ের বাইক থেকে পড়ে মৃত্যু শাশুড়ির
জিয়াগঞ্জের বীরেন্দ্র সিং সিঙ্ঘী হাইস্কুলের ছাত্র ঋক ভূগোলে লেটার সহ মোট ৪৯০ নম্বর পেয়েছে। চানাচুর-বিস্কুট বিক্রি করে সংসার টানার পাশাপাশি পড়াশোনা করে মাধ্যমিকে এই নম্বর পাওয়ায় তার লড়াইকে কুর্ণিশ জানাচ্ছেন স্থানীয় বাসিন্দারাও। বিজ্ঞান নিয়ে পড়ার ইচ্ছে থাকলেও আর্থিক কারণে তা হবে না। তাই ভূগোল নিয়ে পড়ে ভবিষ্যতে পরিবেশবিদ হতে চায় সে।
পরীক্ষার আগে বাবার মৃত্যুতে মানসিকভাবে রীতিমত ভেঙে পড়ে ঋক। পড়াশোনা একপ্রকার বন্ধ করে দেয়। যদিও স্কুলের শিক্ষক ও গৃহশিক্ষকরা বোঝানোর পরই পরীক্ষার প্রস্তুতি নতুন করে শুরু করে। ঋক জানিয়েছে, সংসারের হাল ধরতে প্রথমে বাবার পরিচিত এলাকায় ফেরি করতে শুরু করি। তারপর যেটুকু সময় পেতাম পড়াশোনা করতাম। তবে দুই গৃহশিক্ষক খুব সাহায্য করেছেন। পড়ার জন্য নির্দিষ্ট সময়ে যেতে না পারলেও অন্য সময়ে দেখিয়ে দিতেন। স্যারদের সাহায্য ছাড়া এই রেজাল্ট হতো না।