
দ্য ওয়াল ব্যুরো: ভারত জোড়ো যাত্রায় রাহুল গান্ধীর পাশে হাঁটছেন আদিত্য ঠাকরে। সংবাদমাধ্যমে এবং সমাজমাধ্যমে শুক্রবারের সেই ছবির সঙ্গে ছড়িয়ে পড়েছে ৪৭ বছর আগের একটি ছবিও (Memory of Indira-Balasaheb Revive)। সাদা-কালো ফ্রেমের সেই ছবিতে আছেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী (Indira Gandhi) এবং শিবসেনার প্রতিষ্ঠাতা বালা সাহেব ঠাকরে (Bala Saheb Thakre)। হাতজোড় করে দু’জনে দু’জনকে নমস্কার করছেন।
কংগ্রেসের ভারত জোড়ো যাত্রার (Bharat Joro Yatra) কান্ডারি রাহুল হলেন ইন্দিরা নাতি। অন্যদিকে, শিবসেনার নবীন মুখ প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী উদ্ধব ঠাকরের পুত্র আদিত্য হলেন বালাসাহেবের নাতি। দুই দলের তৃতীয় প্রজন্মের দুই মুখের পাশাপাশি হাঁটার দৃশ্য রাজনীতিতে বাড়তি গুরুত্ব পাচ্ছে রাহুলের ঠাকুমা এবং আদিত্যর দাদুর সম্পর্কের সুবাদে।
২০১৯-এ বিজেপির সঙ্গ ত্যাগ করে উদ্ধব কংগ্রেস ও এনসিপির সঙ্গে জোট বেঁধে সরকার গড়লে গেরুয়া শিবির সমাজমাধ্যমে ছড়িয়ে দিয়েছিল এই দুই দল সম্পর্কে বালাসাহেবের তীক্ষ্ণ সব মন্তব্যের সাক্ষ্যবহনকারী ভিডিও। উদ্ধবের ঝুলিতে ছিল একটি মাত্র সাদাকালো ছবি, যা গতকাল থেকে ফের দেখা যাচ্ছে সমাজমাধ্যমে।
বিজেপি বাল ঠাকরের যে ভিডিওগুলি বাজারে ছেড়েছিল তার একটিতে শিবসেনার প্রতিষ্ঠাতাকে বলতে শোনা যায়, বিজেপি আমাদের পরম বন্ধু। কারণ তারা হিন্দুত্বের পক্ষের শক্তি। আর কংগ্রেস আমাদের শত্রু। কারণ তারা হিন্দুত্বকে মানে না।
একটা সময় এনসিপি এবং শরদ পাওয়ার সম্পর্কেও চোখা চোখা মন্তব্য করেছেন বাল ঠাকরে। বলেছেন, এনসিপি কংগ্রেসেরই আর একটি খণ্ড। মহারাষ্ট্র ওদের অগ্রাধিকার নয়।
গত জুনে একনাথ শিন্ডে দলবল নিয়ে বিজেপির হাত ধরার সময় বালা সাহেবের এই সব কথাই উদ্ধব ঠাকরেকে স্মরণ করিয়ে দিয়েই বিক্ষুব্ধ নেতা দাবি করেছিলেন, কংগ্রেস ও এনসিপির হাত ছেড়ে ফের বিজেপির সঙ্গে সরকার গড়তে হবে। উদ্ধব সেই শর্ত না মানাতেই তাঁকে হঠিয়ে বিজেপির হাত ধরে মুখ্যমন্ত্রী হয়েছেন একনাথ।
কিন্তু ইতিহাস বলছে, তীব্র কংগ্রেস বিরোধী বালা সাহেব অন্তত দু’বার ইন্দিরা গান্ধীর সংকটে পাশে দাঁড়িয়েছেন। ১৯৭১-এ প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরাকে দল বিরোধী কাজের অভিযোগে বহিষ্কার করা হয়। নতুন দল গড়ে সরকার নিজের দখলে রাখেন ইন্দিরা। সেই সব দিনে বিরোধী দলগুলিও প্রবল ইন্দিরা বিরোধী। ব্যতিক্রম ছিলেন বালা সাহেব। ইন্দিরার নতুন দলের পাশে দাঁড়ান তিনি। মহারাষ্ট্রে ইন্দিরার দলের সঙ্গে বোঝাপড়া করে আদি কংগ্রেসের বিরুদ্ধে লড়াই করে শিবসেনা।
১৯৭৫-এ জরুরি অবস্থা জারির জেরে ইন্দিরা যখন গোটা দেশে রাজনীতিতে একঘরে, সেই সব দিনেও বালা সাহেব ঠাকরে ছিলেন ব্যতিক্রম। জরুরি অবস্থার পক্ষে দাঁড়ান তিনি। যদিও বলা হয়, ইমার্জেন্সির পক্ষে মুখ খুলতে একপ্রকার বাধ্য করা হয়েছিল তাঁকে। মহারাষ্ট্রের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী শঙ্কররাও চহ্বান তাঁকে শর্ত দিয়েছিলেন, ইমার্জেন্সির পক্ষে মুখ খুলুন অথবা জেলে যান। ততদিনে দেশে বিরোধী দলের প্রথমসারির নেতারা প্রায় সকলেই জেলে অথবা আত্মগোপন করেছেন। শোনা যায়, বালা সাহেব দলের স্বার্থে জেল এড়ানোর সিদ্ধান্ত নেন। কারণ, তিনি জেলে চলে গেলে দলটাকেই কংগ্রেস গ্রাস করে নেবে বলে ভয় ছিল তাঁর মনে।
কংগ্রেস-শিবসেনা গলাগলির সম্পর্ক মুছে যেতে শুরু করে আটের দশকের গোড়া থেকে। কংগ্রেসের ছত্রছায়া থেকে বেরিয়ে ক্রমে বিজেপির সঙ্গে সখ্য বাড়তে থাকে বালা সাহেবের। আর তাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেন বিজেপির নবীন নেতা প্রমোদ মহাজন। তাঁর তৎপরতাতেই শিবসেনা ও বিজেপির নির্বাচনী বোঝাপড়া যাত্রা শুরু হয় মুম্বই পুরসভার ভোট ঘিরে। সেই জোটের কাছে হার মানে কংগ্রেস। সেটা ১৯৮৪ সালের কথা। সেই থেকে ২০১৯ পর্যন্ত দু’দলের সম্পর্ক কম-বেশি মধুর ছিল। ২০১৯-এর পর থেকে চাকা ফের ঘুরতে থাকে। ৪৭ বছর আগের সম্পর্ককে পাথেয় করে গতকাল পাশাপাশি হেঁটেছেন ইন্দিরা ও বালা সাহাবের নাতি রাহুল ও আদিত্য।
রাহুলের মিছিলে হাঁটলেন উদ্ধবের ছেলে, রাজনীতির ঊর্ধ্বে রাখলেন ‘ভারতজোড়ো যাত্রা’কে