
দ্য ওয়াল ব্যুরো: মুম্বইয়ের (Mumbai) রাস্তায় দাঁড়িয়ে এক মহিলা উবের অটোর জন্য অপেক্ষা করছিলেন। কিন্তু কিছুতেই পাওয়া যাচ্ছিল না অটো। অফিস যেতে দেরি হচ্ছিল, চিন্তা বাড়ছিল তাঁর। ঠিক তখনই পাশে এসে দাঁড়াল একটি অটো (Auto Driver)। সেই অটো থেকে মুখ বাড়িয়ে এক বৃদ্ধ চোস্ত ইংলিশে জিজ্ঞেস করলেন, ‘কোথায় যাবেন?’
ধড়ে প্রাণ ফিরল সেই মহিলার। বললেন, ‘শহরের শেষ অপর প্রান্তে যাব, দেরি হয়ে গেছে।’ শুনে সেই চোস্ত ইংরেজিতেই বৃদ্ধ জবাব দিলেন, ‘উঠে আসুন ম্যাডাম।’ অটো ড্রাইভারের মুখে এমন ইংরেজি শুনে হতবাকই হয়ে গিয়েছিলেন ওই মহিলা।
নিকিতা আইয়ার নামে ওই মহিলা মুম্বইয়ের এক বেসরকারি সংস্থায় কাজ করেন। প্রতিদিনের মত অটো করে অফিস যাওয়ার জন্য ওই দিনও অপেক্ষা করছিলেন তিনি। সেখানেই আলাপ হয় ওই ৭৪ বছরের বৃদ্ধের সঙ্গে। ৪৫ মিনিটের এই সফরকে স্মরণীয় করে রাখতে সোস্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করে নিজের অভিজ্ঞতা ভাগ করে নিয়েছেন নিকিতা।
যেতে যেতে ওই বৃদ্ধের জীবন সম্পর্কে বহু তথ্য পেয়েছেন নিকিতা। তার প্রায় সবই সোশ্যাল মিডিয়ায় জানিয়েছেন তিনি। বিস্মিত নিকিতা, ওই বৃদ্ধ অটো ড্রাইভারের থেকে জানতে চান যে তিনি কী করে এত ভাল ইংরেজি বলতে পারেন?
উত্তরে তিনি জানান যে, তিনি একজন প্রাক্তন অধ্যাপক। মুম্বইয়ের এক নামী কলেজে তিনি ইংরেজির অধ্যাপক ছিলেন। ২০ বছর ওই কলেজের সঙ্গে যুক্ত থাকার পর অবসর নিয়েছেন। কিন্তু পরিস্থিতি এতটাই খারাপ যে ৬০ বছরে অবসর নেওয়ার পর তাঁর হাতে কোনও টাকা ছিল না। নেই পেনশনও। পেট তো চালাতে হবে। সেই থেকে ১৪ বছর ধরে অটো চালাচ্ছেন তিনি।
প্রতিদিন হাজার টাকা করে আয় হয় তাঁর। যা দিয়ে ওই বৃদ্ধ ও তাঁর ‘বান্ধবী’র ভালই চলে যায়। বান্ধবী? শুনে প্রথমটা একটু চমকেই উঠেছিলেন নিকিতা আইয়ার। সন্দেহের অবসান ঘটান ওই বৃদ্ধ নিজেই। বলেন, ‘আমি আমার স্ত্রীকে গার্লফ্রেন্ড বলে ডাকি।’ শুনে হেসেই ফেলেন নিকিতা।
নিকিতা জানতে পারেন ওই বৃদ্ধের নাম পাত্তাভি রমন। আদি বাড়ি কর্নাটকে। এমএ, এমএড করেছেন। কিন্তু কর্নাটকে চাকরি না পেয়ে মুম্বইয়ে চলে আসেন। সেখানেই এক বেসরকারি কলেজে চাকরি পান। কিন্তু ২০ বছর চাকরি করেও ব্যাঙ্কে তেমন টাকা জমেনি তাঁর। মাসিক মাত্র ১০-১৫ হাজার বেতনে তা কীকরে সম্ভব? প্রশ্ন করেন রমন।
নিকিতা আইয়ারের এই ‘অনুপ্রেরণামূলক গল্প’ মুহূর্তে মন জয় করে নেন নেটিজেনদের। কোন কাজই যে ছোট নয়, ফের একবার এই কথাটাই প্রমাণ হল মুম্বইয়ে এই ঘটনায়।