
উত্তরপ্রদেশ বিধানসভার নির্বাচনে সমাজবাদী পার্টির হয়ে প্রচারে গিয়েছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী। সাংবাদিক বৈঠকে তাঁর পাশেই ছিলেন সমাজবাদী পার্টির সুপ্রিমো অখিলেশ যাদব।
করোনার কারণে উত্তরপ্রদেশে ভোটের প্রচারে এখনও জনসভায় পুরোমাত্রায় ছাড় দেয়নি নির্বাচন কমিশন। কিন্তু তাতে কী? বাংলার মুখ্যমন্ত্রী ভার্চুয়াল সাংবাদিক বৈঠককেই জনসভার মঞ্চ করে তোলেন এদিন। একবারে ভরা মাঠে ভাষণ দেওয়ার মেজাজে প্রায় এক ঘণ্টা টানা বলে যান।
সাংবাদিক বৈঠকে দিল্লি ও উত্তরপ্রদেশের বিজেপি সরকারের মুণ্ডপাত করার পাশাপাশি বাংলার মুখ্যমন্ত্রী উন্নয়নে তাঁর বেঙ্গল মডেলও তুলে ধরেন বারে বারে। মমতা উল্লেখ করেন, কন্যাশ্রী, যুবশ্রী, সবুজ সাথী, স্বাস্থ্যসাথী, খাদ্যসাথী, লক্ষ্ণীর ভাণ্ডার, আদিবাসী, তফসিলি পেনশন ইত্যাদি জনকল্যাণমূলক প্রকল্পের কথা।
উত্তরপ্রদেশের বিধানসভা ভোটের ফলের সঙ্গে লোকসভা নির্বাচনের ভাগ্য জুড়ে আছে। ৮০টি লোকসভা আসনের এই রাজ্য বিধানসভা যে দল দখল নিয়ে পারে, লোকসভার লড়াইয়ে তারা এগিয়ে থাকে বরাবর। উত্তরপ্রদেশে বিজেপি সরকারকে হারিয়ে সমাজবাদী পার্টিতে লখনউয়ের তখতে ফেরাতে পারলে দিল্লির লড়াইয়ের সমীকরণ বদলে যাবে। সেই অঙ্ক মাথায় রেখে তৃণমূল নেত্রী বিজেপি বিরোধী ভোটকে সমাজবাদী পার্টির পক্ষে এককাট্টা করার লক্ষ্যে লখনউ গিয়েছেন। আগামী মাসে যাবেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সংসদীয় কেন্দ্র বারাণসিতেও। সেখানে বিশ্বনাথের মন্দিরে পুজো দেওয়ার পর বিজেপিকে হটাতে জনসভা করবেন।
২০২৪-এর লোকসভার লড়াইয়ের আগে সেটাই হবে তৃণমূল নেত্রীর গো-বলয়ে বিজেপির বিরুদ্ধে প্রথম সভা। কিন্তু এদিন লখনউয়ের সাংবাদিক বৈঠকে জনসভার মেজাজেই নরেন্দ্র মোদী ও বিজেপিকে নিশানা করার পাশাপাশি বাংলায় তাঁর সরকারের কাজকর্মের খতিয়ান তুলে ধরেন মুখ্যমন্ত্রী, ঠিক যেভাবে ভোটের ময়দানে ক্ষমতাসীন দলকে কাজের হিসাব দাখিল করতে হয় জনতার দরবারে। উত্তরপ্রদেশের এই ভোটে তৃণমূল প্রার্থী দেয়নি। তাহলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কেন বাংলায় তাঁর সরকারের কাজ নিয়ে একপ্রকার রিপোর্ট-কার্ড পেশ করলেন?
রাজনৈতিক মহলের ব্যাখ্যা, নিজের রাজ্যে কাজের সাফল্য তুলে ধরে দেশের বাকি অংশে গ্রহণযোগ্যতা তৈরির চালু রাস্তাতেই হাঁটলেন মুখ্যমন্ত্রী। ২০১৪-র লোকসভা ভোটের আগে এভাবেই তাঁর গুজরাট মডেল নিয়ে লড়াইয়ে অবতীর্ণ হয়েছিলেন নরেন্দ্র মোদী। সেবার বারাণসিকে প্রার্থী হওয়ার আগে বেনারস হিন্দু ইউনিভার্সিটিতে ছাত্রদের সামনে তুলে ধরেছিলেন গুজরাট মডেল।
তখন মোদীর রাজনৈতিক বায়োডাটায় সাফল্যের খতিয়ান বলতে গুজরাটে তিন দফার মুখ্যমন্ত্রিত্ব। অন্যদিকে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কেন্দ্রীয় সরকারের একাধিক মন্ত্রক সামলে এসে বাংলার মুখ্যমন্ত্রীর কুর্সিতে বসেন। এদিন তৃণমূল নেত্রী রাজনৈতিক জীবনের সাফল্যের খতিয়ানও তুলে ধরেন। বলেন, ভোট আমি ভালো বুঝি। সাতবার এমপি ছিলাম। দু’বার রেলমন্ত্রক, কয়লা মন্ত্রক, নারী কল্যাণ মন্ত্রক, ক্রীড়া ও যুবকল্যাণ মন্ত্রক সামলেছি। সংসদের স্ট্যান্ডিং কমিটির চেয়ারম্যান ছিলাম। আমার চোখে ভোটের ভবিষ্যৎ ধরা পড়ে। আমি উত্তরপ্রদেশে বিজেপির বিদায় আর সমাজবাদী পার্টির আগমন দেখতে পাচ্ছি।
ঘটনাচক্রে তৃণমূল নেত্রীর সাংবাদিক সম্মেলন চলাকালীন অদূরে বিজেপি রাজ্য দফতরে দলের সংকল্পপত্র বা নির্বাচনী ইস্তাহার প্রকাশ করছিলেন কেন্দ্রের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। বিজেপি তাতে স্বামী বিবেকানন্দের নামে একটি প্রকল্প চালুর প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। তারা বলেছে, দু কোটি ছেলে মেয়েকে ট্যাব/ল্যাপটপ ইত্যাদি দেবে। মমতা বলেন, এসব আমরা অনেক আগে করে দিয়েছি। সব নকল করছে। বলেন, বাংলায় ছেলেমেয়েদের পড়াশুনোর খরচ নিয়ে বাবা-মায়েদের ভাবতে হয় না। সব দায়িত্ব সরকার নিয়েছে। স্টুডেন্টস ক্রেডিড কার্ড চালু করা হয়েছে। ৪০ বছর বয়স পর্যন্ত পড়াশুনো চালিয়ে যাওয়ার জন্য স্বল্প সুদে ব্যাংক ঋণ মিলছে। সরকারি হাসপাতালে সব ধরনের চিকিৎসা ফ্রি।
মুখ্যমন্ত্রী এই সব সুবিধা দেওয়ার কথা বলার সময় বারে বারেই পাশে বসা অখিলেশের দিকে চাইছিলেন। বলেন, মানুষের জন্য কাজ করতে হবে। তারপর ভোট চাইতে হবে। যোগীর উদ্দেশে বলেন, এসব কাজ আগে করেননি কেন? তারজন্য আগে ক্ষমা চান।
সমাজবাদী পার্টি দিন কয়েক আগেই তাদের ইস্তাহার প্রকাশ করেছে। তাতে বিদ্যুৎ খরচে ছাড় দেওয়া, কৃষকদের নানা সুযোগ সুবিধা দেওয়া এবং দারিদ্রসীমার নিচে বসবাসকারী পরিবারগুলিকে বছরে ১৮ হাজার টাকা আর্থিক সহায়তা দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। তবে বাংলার মতো সব শ্রেণির মানুষের জন্য সর্বজনীন সুবিধার কথা নেই।