
দ্য ওয়াল ব্যুরো: সর্বভারতীয় স্তরে ইদানীং দুটি বিষয় আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে। এক, অর্থনীতির বেহাল দশা ও চরম মূল্যবৃদ্ধি পরিস্থিতি। দুই, নতুন করে মন্দির-মসজিদ বিতর্ক। একদিকে রান্নার গ্যাস, ডিজেল-পেট্রলের দাম বাড়ছে, মুদ্রাস্ফীতি বৃদ্ধির হার ৮ শতাংশে ঠেকেছে, কর্মসংস্থান সুযোগ কমছে এবং টাকার অবমূল্যায়ন অশনিসঙ্কেত দিচ্ছে। অন্যদিকে কখনও জাহাঙ্গিরপুরীতে গোষ্ঠী সংঘর্ষ হচ্ছে তো কখনও জ্ঞানবাপী মন্দিরে শিবলিঙ্গের খোঁজ নিয়ে তোলপাড় ফেলা হচ্ছে।
বুধবার পশ্চিম মেদিনীপুরে দলীয় মঞ্চে দাঁড়িয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee) বোঝাতে চাইলেন, এই দুই বিষয় সমান্তরাল ভাবে চলছে না। এ দুটি বিচ্ছিন্ন নয়। বরং পরস্পরের সঙ্গে যুক্ত। রান্নার গ্যাসের দাম বাড়ছে বলেই হিন্দু-মুসলমান বিতর্ক উস্কে দৃষ্টি ঘোরানোর চেষ্টা হচ্ছে।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়, “যখনই মানুষ প্রতিবাদ করছে, তখনই হিন্দু-মুসলমান দেখিয়ে দেওয়া হচ্ছে। আপনি পেটে খাবেন, নাকি শুধু জপ করবেন? যখনই দেখছে গ্যাসের দাম বাড়ছে, একটা দাঙ্গা লাগিয়ে দিচ্ছে, যখনই দেখছে পেট্রলের দাম বাড়ছে, একটা দাঙ্গা লাগিয়ে দিচ্ছে। রেল, সেল, অসামরিক বিমান সব বেচে দিচ্ছে। আর একশ দিনের প্রকল্প খাতে বাংলার প্রাপ্য টাকা পাঁচ মাস ধরে দিচ্ছে না।”
পর্যবেক্ষকদের অনেকের মতে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee) সঠিক স্থানে আঘাত করতে চেয়েছেন। এতটা স্পষ্ট করে এ ব্যাপারে এখনও জাতীয় স্তরের কোনও নেতা বলেননি। তাঁদের কথায়, মন্দির-মসজিদ নিয়ে বরাবরই সমাজের একাংশ মানুষের আবেগ রয়েছে। এ নিয়ে বিতর্কে তাই বুঝে বা না বুঝে অনেকে নিমজ্জিত হয়ে যান। ফলে এ ধরনের বিষয়কে সামনে রেখে প্রকৃত সমস্যা থেকে তাঁদের চোখ ঘোরানো সহজ হয়। অথচ তাঁরা হয়তো জানেন না প্রেক্ষাপট কী? কেন হঠাৎ করে জ্ঞানবাপী মসজিদের প্রসঙ্গ উস্কে দেওয়া হল। কেন হঠাৎ করে বিক্ষিপ্ত ভাবে গোষ্ঠী সংঘর্ষের ঘটনা ঘটছে। সুতরাং তাঁদের চোখ খুলে দেওয়া জরুরি।
অর্থনীতিবিদদের একাংশের মতে, সত্যিই দৃষ্টি ঘোরানোর জন্য যদি দাঙ্গা লাগানোর চেষ্টা হয় তা বিপজ্জনক। তাতে ঘরোয়া অর্থনীতির আরও সর্বনাশ হবে। বস্তুত ভারতের বর্তমান সামাজিক অর্থনৈতিক ও সামাজিক অবস্থা নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়ও। মঙ্গলবার তিনি স্পষ্ট করে বলেছেন, আমরা (পড়ুন ভারত) সামাজিক সংকটের মধ্যভাগে দাঁড়িয়ে রয়েছি। এখনই উচিত লাগাম টানা। কারণ, সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা অর্থনীতিকেও অস্থির করছে। এই অস্থির পরিস্থিতি বিনিয়োগের জন্য ভাল নয়। বহির্বিশ্বে তা ভাল বার্তা দিচ্ছে না। ভারতের বাইরে ভারতীয়দের এ নিয়ে রক্ষণাত্মক অবস্থান নিতে হচ্ছে। তাই এখনই সতর্ক না হলে আরও সমস্যা হতে পারে।
পরেশ অধিকারীর আবেদন শুনল না ডিভিশন বেঞ্চ, সিবিআইয়ের মুখোমুখি হওয়া নিয়ে জল্পনা