Latest News

অনুব্রত প্রশ্নে ভিন্ন মেরুতে মমতা-অভিষেক, কেন ও কী কারণে?

দ্য ওয়াল ব্যুরো: অনুব্রত মণ্ডল গ্রেফতারের পর তৃণমূল ঠিক কী বলেছিল মনে পড়ে? দিনটা ছিল ১১ অগস্ট। সেদিন তৃণমূল ভবনে সাংবাদিক বৈঠক করে মন্ত্রী ও দলের মুখপাত্র চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে (Abhishek Banerjee) উদ্ধৃত করে বলেছিলেন, দুর্নীতির প্রশ্নে তৃণমূল জিরো টলারেন্স নিয়ে চলছে। কারও বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উঠলে সেই লড়াই তাঁকেই লড়তে হবে।

অর্থাৎ চন্দ্রিমা বুঝিয়ে দিয়েছিলেন, এই যে অনুব্রত মণ্ডলের (Anubrata Mondal) বিরুদ্ধে গরু পাচারে জড়িত থাকার অভিযোগ উঠছে, সেই লড়াইটা এবার অনুব্রতকেই লড়তে হবে। দল তাঁর জন্য লড়াই করবে না।

আরও পিছনে হাঁটলে দেখা যাবে, গত ২৮ জুলাই তৃণমূল ভবনে বসে এই কথাটাই বলেছিলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।

কিন্তু স্বাধীনতা দিবসের প্রাক সন্ধ্যায় অভিষেকের সেই নীতি বা অবস্থান এক প্রকার খারিজ করে দিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। এক তো, অনুব্রত মণ্ডলকে গ্রেফতার করা নিয়েই সওয়াল করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই সঙ্গে বেহালায় দলীয় মঞ্চে দাঁড়িয়ে তাঁর স্বভাবগত আক্রমণাত্মক ভঙ্গিমায় বলেছেন, “কাল যদি আমার বাড়িতে যায়, কী করবেন? রাস্তায় নামবেন তো?”

পর্যবেক্ষকদের অনেকের মতে, দিদির এ কথার অর্থ পরিষ্কার। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বুঝিয়ে দিয়েছেন, অনুব্রতর লড়াই তাঁর একার নয়। তা দলেরও। এবং সেখানে থেমে না থেকে সমষ্টিগত আন্দোলনের ডাক দিয়েছেন দিদি।

‘কেষ্টকে কেন গ্রেফতার করা হয়েছে?’ অনুব্রতকে নিয়ে মুখ খুললেন মমতা

এখন প্রশ্ন উঠতে পারে তা হলে কি মমতা-অভিষেকের মধ্যে মতান্তর হচ্ছে?

তৃণমূলের এক প্রবীণ নেতার কথায়, রাজনৈতিক দলে মতান্তর খুবই স্বাভাবিক বিষয়। অভিষেক বয়সে নবীন। রাজনীতিতে তাঁর রোম্যান্টিসিজম রয়েছে। দিদি পোড় খাওয়া রাজনীতিক। তিনি স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছেন, অনুব্রত মণ্ডল গ্রেফতার হওয়ার পর দলের অনেকেই রক্ষণশীল হয়ে যাচ্ছেন। বিশেষ করে এই লড়াই অনুব্রতর একার লড়াই বলে দেওয়ার পর অনেকে হয়তো গুটিয়েও যাচ্ছেন। দিদি সম্ভবত বুঝতে পারছেন, এই ধারা বিপজ্জনক! বরং পাল্টা আক্রমণই এ ক্ষেত্রে আত্মরক্ষার সেরা উপায় হতে পারে। তাই অনুব্রতর পাশে দাঁড়িয়ে দলকে আন্দোলনমুখী হতে বলেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

তৃণমূলের ওই প্রবীণ নেতার কথায়, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এদিনের বক্তৃতা দলের সবার দশ বার করে শোনা উচিত। কারণ, উনি বুঝিয়ে দিয়েছেন রাজনীতিতে নৈতিকতা রাখতে হবে। কিন্তু প্রশ্ন হল, দুর্নীতির অভিযোগ তুলে যাঁরা রোজ ধমকাচ্ছেন, চমকাচ্ছেন আর প্রধানমন্ত্রীর কাছে চিঠি লিখছেন, তাঁরা কতটা নীতিবাগীশ। সুতরাং এই ধমকানো, চমকানোর সামনে কেঁচো হয়ে গেলেই বিপদ। বরং পাল্টা চমকাতে হবে। সম্ভবত সেই কারণেই নাম না করেও শুভেন্দু অভিকারীর উদ্দেশে এদিন যারপরনাই কটাক্ষ করেছেন তৃণমূলনেত্রী।

তবে এ ক্ষেত্রে আরও একটি প্রশ্নও প্রাসঙ্গিক। তা হল, পার্থ চট্টোপাধ্যায় ও অনুব্রতকে কেন এক বন্ধনীতে রাখলেন না দিদি? কেন তিনি শুধু অনুব্রতর কথা বললেন, পার্থ নামও মুখে আনলেন না?

পর্যবেক্ষকদের মতে, পার্থ ঘনিষ্ঠ অর্পিতার বাড়ি থেকে যে ভাবে নগদ টাকা উদ্ধার হয়েছে, তার পর তাঁকে আড়াল করার জায়গা ছিল না। তা ছাড়া টাকা, মহিলা, বিলাসিতা সব মিলিয়ে বিষয়টি কদর্য আকার ধারণ করেছিল। কিন্তু অনুব্রতকে তিন দিন হেফাজতে রাখার পরেও তেমন কিছু উদ্ধার বা বাজেয়াপ্ত করতে পারেনি সিবিআই। তা দেখে নিয়েই সম্ভবত পাল্টা আক্রমণাত্মক হয়েছেন দিদি। তা ছাড়া, অনুব্রত বড় সংগঠক। তাই তাঁর পাশে দাঁড়িয়ে জোড়াফুলের সমস্ত কর্মী, সংগঠককে বার্তা দিতে চাইলেন মমতা।

You might also like