
দ্য ওয়াল ব্যুরো: শিল্পপতি গৌতম আদানির সংস্থার (adani) বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ নিয়ে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে তোলপাড় চলছে সংসদে। বিরোধীরা সরকারের কাছে কৈফিয়ত চেয়ে ধুন্ধুমার করায় মুলতবি করতে হয়েছে লোকসভা। দিল্লিতে পরিস্থিতি যখন এমনই তখন বাংলায় দাঁড়িয়ে বিস্ফোরক দাবি করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অবশ্য গৌতম আদানির নাম মুখে আনেননি। তবে বলেন, আরে কাল তো সরকার প্রায় পড়ে যাচ্ছিল। কেন পড়ে যাচ্ছিল জানেন? শেয়ার বাজারে ধস নেমে গিয়েছিল। তারপর কীভাবে বাঁচিয়েছে জানেন? একে তাকে ধরেছে। কাদের ধরেছে তাঁদের নাম বলে সমস্যায় ফেলব না। কাউকে বলেছে, ২০ হাজার কোটি টাকা দাও, কাউকে বলেছে ৩০ হাজার কোটি টাকা দাও, কাউকে ১০ হাজার কোটি টাকা দাও। ছ’-আট জনের থেকে এভাবেই টাকা নিয়ে কোনওমতে বাঁচিয়েছে।
প্রসঙ্গত, বুধবার কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন বাজেট পেশ করার পর প্রাথমিক ভাবে শেয়ার বাজার তেজি হতে দেখা গিয়েছিল। কিন্তু দুপুর গড়াতেই দেখা যায় তা ফের দ্রুত নামছে। অনেকের মতে, মূলত আদানি শিল্পগোষ্ঠীর বিনিয়োগ ও ব্যবসার মূলধন নিয়ে সন্দেহের বাতাবরণ একাংশে তৈরি হয়েছে, তাই শেয়ার বাজারে প্রভাব ফেলেছে বলে মনে করা হচ্ছে। এ হেন পরিস্থিতিতে ফলো অন পাবলিক অফার বাবদ বাজার থেকে ২০ হাজার কোটি টাকা তুলেও ফেরত দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছেন গৌতম আদানি।
মোটামুটি ভাবে আম ধারণা হল গৌতম আদানি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ঘনিষ্ঠ শিল্পপতি। নরেন্দ্র মোদী জমানায় গত আট বছরে উল্কার মতো তাঁর উত্থান হয়েছে। সেই আদানির ব্যবসা ও বিনিয়োগ নিয়ে মার্কিন সংস্থা হিন্ডেনবার্গ রিসার্চ প্রশ্ন তুলে দিয়েছে। আদানি সেই অভিযোগ অস্বীকার করেছে। সেই সঙ্গে তাদের মত হল, আসলে ভারতকে আক্রমণ করা হচ্ছে। এই অবস্থায় হিন্ডেনবার্গ পাল্টা বলেছে, জাতীয়তাবাদের জামা পরে জালিয়াতি চলবে না। আদানি জাতীয় পতাকা গায়ে জড়িয়ে ভারতকে লুঠ করছে বলেও মন্তব্য করেছে তারা।
সার্বিক এই পরিস্থিতিতে কেন্দ্রের সরকার যখন চাপে তখন বৃহস্পতিবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘি ঢালার চেষ্টা করেছেন বলেই মনে করছেন পর্যবেক্ষকরা। আদানি শিল্পগোষ্ঠীতে স্টেট ব্যাঙ্ক, এলআইসি সহ রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের বিনিয়োগ রয়েছে। আদানির শেয়ারের দাম কমে যাওয়ায় এলআইসির প্রায় বিশ হাজার কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে বলে জানা গিয়েছে।
এদিন সেই প্রসঙ্গ তুলে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, এরা ব্যাঙ্ক, এলআইসি তুলে দেবে। আগামী দিনে আপনার আমানতের টাকা ফেরত পাবেন না। এলআইসির টাকা ফেরত পাবেন না। ভেবে দেখুন। দেশটাকে ওরা বেচে দিচ্ছে। পারছে না। ম্যানেজ করতে পারছে না। কারণ ওদের কোনও প্ল্যানিংই নেই।
পর্যবেক্ষকদের অনেকের মতে, আদানি শিল্পগোষ্ঠীকে নিয়ে যে বিতর্ক তৈরি হয়েছে তাতে বিজেপি কিছুটা রক্ষণশীল হয়ে পড়েছে। এই পরিস্থিতিতে আক্রমণের তেজ বাড়়ালেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। যাতে জাতীয় স্তরে আরও বেকায়দায় পড়ে বিজেপি সরকার।
আদানি কাণ্ডের প্রতিবাদে সংসদে কংগ্রেসের পাশে বাকি বিরোধীরা, অধিবেশন স্থগিত