
বিহারের কিষাণগঞ্জ বিধানসভার উপ নির্বাচন হয়েছে গত সোমবার। বৃহস্পতিবার সেখানে গণনার পর দেখা গেল ১০২০৪টি ভোটের ব্যবধানে ওই আসনটি জিতে নিয়েছে মিম।
যার অর্থ একটাই একদা হায়দরাবাদের নিজামের পৃষ্ঠপোষকতায় তৈরি এই দল এ বার পা জমাতে নেমে পড়ল পূর্বের রাজ্যগুলিতেও। যা বাংলায় তৃণমূলের জন্য খুব একটা শুভ ইঙ্গিত নয় বলেই দলের নেতারা ঘরোয়া আলোচনায় বলতে শুরু করেছেন।
কিন্তু কেন উদ্বেগে তৃণমূল?
বস্তুত মিম কট্টর মুসলিম দল বলেই পরিচিত। বাংলা মুসলিম তথা সংখ্যালঘু ভোটই তৃণমূলের অন্যতম জোরের জায়গা। লোকসভা ভোটেও সংখ্যালঘু ভোটের নব্বই শতাংশেরও বেশি পেয়েছে তৃণমূল। বাংলায় শাসক দলের আশঙ্কার বিষয় হল, মিম পশ্চিমবঙ্গে সংগঠন বাড়ানোর চেষ্টা করলে সংখ্যালঘু ভোটের ভাগাভাগি হতে পারে। তাতে বিপদ হতে পারে তৃণমূলের।
প্রসঙ্গত, হাওড়া, হুগলি, উত্তর চব্বিশ পরগনার মতো জেলায় মজলিস-ই-ইত্তেহাদুল-মুসলিমিন ইতিমধ্যে সংগঠন তৈরি করে ফেলেছে। তাতে গ্রামাঞ্চলের বহু মৌলবী ও সংখ্যালঘু নেতা সামিল হতেও শুরু করেছে। এই প্রবণতা বাড়লে শাসক দলের চিন্তাও বাড়বে বলেই মনে করা হচ্ছে।
অতীতে ব্রিটিশ জমানায় হায়দরাবাদে জন্ম নিয়েছিল মিম। ১৯২৭ সালে হায়দরাবাদের নিজাম ওসমান আলি খানের পৃষ্ঠপোষকতায় নওয়াজ খান কিলেদার এই দল গড়ে তুলেছিল। নিজামের অনুগামী দল হিসাবেই তারা পরিচিত ছিল।
স্বাধীনোত্তর কালে হায়দরাবাদ আসন থেকে বহুবার লোকসভায় জিতেছে মিম। তাদের সর্বভারতীয় সভাপতি আসাদউদ্দিন ওয়াইসি বর্তমানে হায়দরাবাদ থেকে সাংসদ। তাঁর ভাই আকবরউদ্দিন স্থানীয় বিধায়ক।
চিরাচরিত ভাবে পুরনো হায়দরাবাদ শহরের পার্টি বলে পরিচিত থাকলেও আসাদউদ্দিনই পাঁচ বছর আগে থেকে অশ্বমেধ শুরু করেন। ২০১৪ সালের ভোটে মহারাষ্ট্র বিধানসভা ভোটে মিম দুটো আসন জিতে নেয়। সেই সঙ্গে সংখ্যালঘু ভোট কেটে কংগ্রেসের যাত্রা ভঙ্গ করে। এ বার লোকসভা ভোটেও মহারাষ্ট্রের একটি আসনে জিতেছে মিম।
সর্বভারতীয় রাজনীতিতে অনেকেরই ধারনা হল বিজেপি-র সঙ্গে তলে তলে আঁতাঁত রয়েছে মিমের। কারণ, তারা আসলে বিভিন্ন রাজ্যের ভোটে প্রার্থী দিয়ে মুসলিম ভোটে ভাগ বসাচ্ছে। তাতে ধর্মনিরপেক্ষ শক্তিগুলিকে দুর্বল হচ্ছে এবং লাভের লাভ হচ্ছে বিজেপি-র।
সার্বিক এই প্রেক্ষাপটেই বিহারের কিষাণগঞ্জে মিমের নির্বাচনী সাফল্য তৃণমূলকে ভাবাতে শুরু করেছে। বাংলায় শাসক দলের মধ্যে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে, আসাদউদ্দিন কি এ বার পশ্চিমবঙ্গেও ঘোড়া নিয়ে আসবেন!