
গুজব কয়েক দিন ধরেই শোনা যাচ্ছিল। প্রতিবাদী শিক্ষক নেতা মইদুল নাকি এবার রাজনীতির পথে নামবেন। সেই গুজবেই সিলমোহর পড়ে গেল। রবিবারই তৃণমূলে যোগ দিলেন তিনি। শিক্ষক ঐক্য মুক্তমঞ্চের প্রত্যেক জেলা থেকে ১৫ জন করে মোট ৩০০ জন এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনার আরও ২ হাজার সদস্য তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন। এদিন ডায়মন্ড হারবারে তাঁদের হাতে দলীয় পতাকা তুলে দেন ব্রাত্য বসু নিজে।
শিক্ষকদের আন্দোলন ঘনিয়েছিল গত ১৮ অগস্ট, শিশুশিক্ষা কেন্দ্রের পাঁচ শিক্ষিকাকে বহু দূরে বদলির জন্য বিজ্ঞপ্তি জারি করাকে কেন্দ্র করে। কলকাতা কিংবা উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনার শিশুশিক্ষা কেন্দ্র থেকে সরিয়ে তাঁদের উত্তরবঙ্গে বদলি করে দেওয়া হয় আচমকা। শিক্ষা দফতরের এই পদক্ষেপের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে নামে শিক্ষক ঐক্য মুক্ত মঞ্চ। অনুরোধ, আবেদন করে লাভ না হওয়ায় তাঁরা বিকাশ ভবনের সামনে অনশন শুরু করেন।
এই অনশন চলাকালীনই ২৪ অগস্ট আচমকা বিকাশ ভবনের সামনেই বিষ খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন ৫ শিক্ষিকা। আশঙ্কাজনক অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাঁদের, বর্তমানে সুস্থ হয়েছেন তাঁরা।
চুঁচুড়ার কুম্ভকর্ণ! পুলিশ এসে, তালা ভেঙে ঘুম ভাঙাল
এই ঘটনায় ওই ৫ শিক্ষিকার বিরুদ্ধেই আইনভঙ্গের অভিযোগে মামলা দায়ের করে পুলিশ। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে জোর তর্ক-বিতর্কও শুরু হয়ে যায়। অসুস্থ ৫ শিক্ষিকাকে ‘বিজেপি ক্যাডার’ বলে মন্তব্য করে বিপাকে পড়েন শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু। বিজেপি, সিপিআইএম এই ঘটনার তীব্র বিরোধিতা করে। রাজ্য সরকারের তীব্র সমালোচনা করেছেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি তথা লোকসভায় কংগ্রেস দলনেতা অধীর চৌধুরী বলেছিলেন, শিক্ষিকাদের আত্মহত্যার চেষ্টা সারা বাংলাকে লজ্জিত ও কলঙ্কিত করছে। এত কিছুর পরেও সেই শিক্ষক ঐক্য মঞ্চের সদস্যদেরই তৃণমূলে যোগদানের খবর সামনে এল।
অন্যদিকে শিক্ষকনেতা মইদুল ইসলামের নাম সামনে এসেছিল, কালীঘাটে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়ির সামনে আদিগঙ্গায় সাঁতার কেটে প্রতিবাদ জানানোর ঘটনায়।
শিক্ষক নেতা মইদুল ইসলামের বক্তব্য, তাঁরা শিক্ষক। তাই শিক্ষার স্বার্থটাই আগে। মোদী সরকারের জাতীয় শিক্ষানীতি ও শিক্ষাক্ষেত্রে বেসরকারিকরণের বিরোধিতা করছেন তাঁরা। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যেভাবে সরকারকে সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দিচ্ছেন, সেই প্রচেষ্টায় তাঁরা খুশি। তাই আগামীদিনেও মুখ্যমন্ত্রীর পথেই হাঁটতে চান তাঁরা।
মইদুল বলেছেন, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায় তাঁরা আস্বস্ত। মুখ্যমন্ত্রীর প্রশাসনিক কাজেও খুশি। এই মুহূর্তে তাঁদের সামনে সবচেয়ে বড় বাধা হল মোদী সরকারের জাতীয় শিক্ষানীতি। তাই মুখ্যমন্ত্রীর নেতৃত্বে এর বিরুদ্ধেই আন্দোলন জারি রাখতে চান তাঁরা।
এদি তৃণমূলে যোগ দেওয়ার পর মইদুল বলেন, “পেশাগতভাবে আন্দোলন করেছি সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে। এই আন্দোলন হঠকারী ছিল। সরকার আলোচনা চেয়েছে। তাই অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ডাকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত শক্ত করতে তৃণমূলে যোগ দিলাম। শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুও সময় দিয়েছেন আগামী সপ্তাহে। আলোচনা হবে।”