
চিনের সেনা যে মুখোমুখি অবস্থান থেকে পিছু হটবে (ডিসএনগেজমেন্ট) না, এটা আগে থেকেই বুঝে গিয়েছিল ভারত। তাই শীতের লাদাখে রণকৌশল ঠিক হয়ে গিয়েছিল অনেক আগেই। গালওয়ান, গোগরা, হটস্প্রিং, প্যাঙ্গং হ্রদের উত্তর ও দক্ষিণের পাহাড়ি এলাকা, ফিঙ্গার পয়েন্ট এমনকি দেপসাং ভ্যালি, দৌলত বেগ ওল্ডিতেও এক মাস আগে থেকেই সেনার সংখ্যা বাড়িয়ে রাখা হয়েছে। অতিরিক্ত ৫০ হাজার সেনা মোতায়েন করা হয়েছে। এইসব প্রস্তুতি দেখে ভড়কে গেছে চিন। এতদিন সামরিক কাঠামো বানাতেই ব্যস্ত ছিল তারা। বাঙ্কার বানিয়ে তার ভেতরে সেঁধিয়ে যাওয়ার ইচ্ছা ছিল। কিন্তু সে কাজ শেষ হতে সময় লাগবে। এর মধ্যে বরফ পড়তে শুরু করে দিয়েছে লাদাখে। তাপমাত্রা হিমাঙ্কের নিচে। পাহাড়ি খাঁজ আরও দুর্গম হয়ে উঠেছে। এমন পরিবেশে টিকে থাকতে গেলে যে ধরনের পোশাক দরকার তা এতদিনে পাঠানো হচ্ছে পিপলস লিবারেশন আর্মিকে।
ভারতীয় সেনা সূত্র জানাচ্ছে, লাদাখে এখন তাপমাত্রা মাইনাস ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর কয়েকদিন পর থেকেই তাপমাত্রা মাইনাস ৪০ থেকে ৫০ ডিগ্রিতে নেমে যাবে। এমন পরিবেশেও সীমান্ত আগলে রাখার জন্য দিনরাত জাগছেন ভারতীয় জওয়ানরা। অস্ত্র হাতে সর্বক্ষণ সজাগ দৃষ্টি। তাই আগে থেকেই শীতের বিশেষ পোশাক পাঠিয়ে দিয়েছে প্রতিরক্ষা মন্ত্রক। লেহ থেকে হেলিকপ্টারে চাপিয়ে লাদাখ সীমান্তে মোতায়েন বাহিনীর কাছে খাবার, ফলের রসের প্যাকেট, গরম পোশাক, জুতো, তাঁবু, জ্বালানি ইত্যাদি পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। অতিরিক্ত বাহিনীর জন্য শীতের রসদ নিয়ে যাওয়া, পাশাপাশি পাহাড়ি এলাকায় দিনে ও রাতে নজরদারি চালানোর জন্য আধুনিক প্রজন্মের দুটি অ্যাডভান্সড লাইট হেলিকপ্টার (এএলএইচ) লাদাখে পাঠিয়েছে ভারতীয় বায়ুসেনা। এসব প্রস্তুতি এতদিন চিনের বাহিনীর ছিল না। এখন ভারতীয় সেনাদের দেখে তাদেরও টনক নড়েছে।
তবে যতই শীতের পোশাক আর অস্ত্র আসুক না কেন, ভারতের পার্বত্য বাহিনীর সঙ্গে দুর্গম পাহাড়ি খাঁজে এঁটে ওঠা মোটেও সহজ হবে না চিনের কাছে। নর্দার্ন কম্যান্ড বলছে, পাহাড় হোক বা সমতলভূমি, যে কোনও প্রতিকূল পরিবেশে যুদ্ধ করার মতো প্রশিক্ষণ আছে ভারতীয় সেনার। আবহাওয়ার বদল হোক বা প্রাকৃতিক বিপর্যয়, কোনও কিছুই টলাতে পারবে না ভারতের বীর জওয়ানদের। মাউন্টেন ফোর্সকে গেরিলা যুদ্ধের বিশেষ প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়, পাহাড়ি এলাকার সীমান্ত পাহারা দেওয়ার জন্য তাদের কাছে আধুনিক অস্ত্রও আছে। তাই চিনের সেনা আগ্রাসন দেখানোর চেষ্টা করলে তা বরদাস্ত করা হবে না।
পাহাড়ি খাঁজ, ভাঁজ যেখানে সাধারণ মানুষের পা রাখা অসম্ভব ব্যাপার সেখানেই অবাধ গতি এই বাহিনীর। আগ্নেয়াস্ত্রে নির্ভুল নিশানা। উঁচু পাহাড়ি এলাকার প্রচণ্ড ঠান্ডা, প্রতিকূল পরিবেশেও যুদ্ধ করার বিশেষ প্রশিক্ষণ আছে এই বাহিনীর। গা ঢাকা দিয়ে অতর্কিতে শত্রুপক্ষের উপর হামলা চালাতে পারে স্পেশাল ফ্রন্টিয়ার ফোর্স। তাদের গতি অতি সতর্ক, এক মুহূর্তের জন্যও টের পাবে না শত্রু পক্ষ। রণকৌশলে প্রতি পদক্ষেপে চ্যালেঞ্জ করতে পারে চিনের পিপলস লিবারেশন আর্মিকে। যেহেতু তিব্বতি সেনাদের নিয়ে এই ফৌজ বানিয়েছে ভারত, তাই চিনের বাহিনীর রকমসকম এদের নখদর্পণে। কীভাবে, কোথা দিয়ে আক্রমণের কৌশল নিতে পারে চিনের সেনা তা আগেভাগেই আঁচ করতে পারে এই বাহিনী। তাই কোনওভাবেই সুবিধা করতে পারবে না লাল ফৌজ। এখন শুধু তারা হাঁকডাকই করবে, ভারতীয় জওয়ানদের মুখোমুখি হওয়ার সাহস খুব একটা নেই তাদের।