
অনিল মিস্ত্রি
পাঁচ দিন ধরে নাকে দড়ি দিয়ে ঘোরাচ্ছে কুলতলির বাঘ। কিছুতেই তাকে ধরা যাচ্ছে না। ভয়ে, আতঙ্কে রীতিমতো নাওয়া-খাওয়া ভুলেছেন কুলতলির মানুষজন। ঘনঘন গর্জনে গ্রাম কেঁপে উঠছে। যেখানে সেখানে দেখা যাচ্ছে বাঘের পায়ের ছাপ। শেষমেশ দক্ষিণরায় কোথায় আছে, তা বুঝতে পেরেছেন বনকর্মীরা। সাজিয়েছেন টোপের ফাঁদ। মাঝেমাঝে উঁকিও মারছে বাঘ, কিন্তু তত অবধিই সার। ধরা সে দেয়নি!
এই মুহূর্তে সবার চোখ পিয়ালি নদীর পাড়ে, ডোমাজোড়া, শেখপাড়ায়। সেখানেই একটি ৫-৭ কাঠা এলাকা জুড়ে গড়ে ওঠা বসত-জঙ্গলে। অর্থাৎ বনের মাঝেই বাড়িঘর আছে সেখানে। সংখ্যায় ১০-১৫টি। সেখানেই কোথাও একটা লুকিয়ে আছে বাঘ। টানা দিন পাঁচেক ধরে বাঘ তাড়া করে বেড়ানো বনকর্মীদের এ যাবৎ সাফল্য বলতে এতটাই, বাঘটি ঠিক কোথায় আছে তা বুঝে উঠতে পারা।
এই মুহূর্তে একশোর ওপর বনকর্মী ও পুলিশ মিলে ঘিরে রেখেছে ওই ৫-৭ কাঠা বসত-জঙ্গল এলাকা। নাইলন ও স্টিলের তার দিয়ে ঘেরা হয়েছে আশপাশ। এলাকার বাসিন্দারা সকলে বাড়ির ভেতরেই আছেন, বেরোচ্ছেন না।
আজ সকাল থেকে এক বার নয়, দু’-দু’বার দেখা গেছে বাঘকে। মনে করা হচ্ছে, সেটি পুরুষ বাঘ। তাকে ধরার জন্য দুটো খাঁচা পাতা হয়েছে, ছাগলের টোপ দিয়ে। কিন্তু বাঘটি ছাগলের দিকে আসছেই না। এতে করে মনে হচ্ছে, বাঘটির হয়তো এর আগে এভাবে ফাঁদে পড়ার অভিজ্ঞতা আছে!
কিন্তু সে যাই হোক না কেন, টানা কয়েকদিন এভাবে চলার পরে এবারে যেন বিষয়টি হয়ে দাঁড়াচ্ছে বাঘে-মানুষে ধৈর্যের পরীক্ষা! তবে এ পরীক্ষায় বাঘ এখনও খানিকটা এগিয়ে। কারণ সবে দিন পাঁচেক হয়েছে। বাঘ কমপক্ষে আট দিন না খেয়ে থাকতে পারে। সুন্দরবনের বাঘ যেহেতু অনেক বেশি রিমোট জঙ্গলে থাকে, তাই তারা আরও বেশি দিন না খেয়ে থাকতে পারে।
এখন বাঘ ধরা নিয়ে আরও বড় একটা সমস্যা তৈরি হয়েছে। এলাকায় বাঘ ধরা দেখতে জড়ো হয়েছেন হাজার পাঁচেক মানুষ। এই এত বড় ভিড়কে সামলানোই এখন বড় চ্যালেঞ্জ। এঁদের না সরালে বাঘ হয়তো কোনওদিনই বেরোবে না। যে একশো বনকর্মী ও পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে এলাকা, তা মূলত এই ভিড় সামলাতেই।
এই বাঘ অভিযানের সমস্ত খুঁটিনাটি ও ব্যবস্থাপনা আয়োজন করেছে সুন্দরবন বায়োস্ফিয়ার রিজার্ভ।
এই অবস্থায় অনেকেরই মনে পড়ে গেছে বছর পাঁচেক আগের ঘটনা। এমনটাই হয়েছিল ঝড়খালিতে। সাতদিন লুকোচুরি খেলার পরে ধরা দিয়েছিল বাঘ। এবার কুলতলিতেও কি তেমনটাই হবে! আরও কতদিনের অপেক্ষা, দেখা যাক!
(লেখক ওয়াইল্ড লাইফ প্রোটেকশন অফ ইন্ডিয়ার সুন্দরবন প্রতিনিধি।)