
শোভন চক্রবর্তী
টলটলে চোখ। মাঝখানে সিঁথি করে পেতে আঁচড়ানো চুল। নাকে একটা গোল রিং। বাঁদিক দিয়ে চোখ ছুঁয়ে চুল নেমেছে গালে বেয়ে। গোটা মুখে রোদের ছটা।
এ হেন এক মেয়ের ছবিতে ছয়লাপ হয়ে গিয়েছে তামিলনাড়ুর রাস্তাঘাট। হ্যাঁ সিনেমার পোস্টার। তামিল সিনেমা (Tamil Movie)। আসছে শুক্রবার তামিলনাড়ুর হলে হলে মুক্তি পেতে চলেছে পরিচালক জয়প্রকাশ রাধাকৃষ্ণনের ছবি ‘থালাইকুথল (Thalaikoothal)।’ আর সে ছবিতে অন্যতম চরিত্রে অভিনয় করছেন বাংলার মেয়ে কথা নন্দী (Katha Nandi)।

কথা উত্তর কলকাতার মেয়ে। বাগবাজার, সরু গলি, টানা রিক্সা, ট্রামের ঘণ্টি যাপনে নিয়ে যে মেয়ে বড় হয়েছে এ শহরে, তাঁর ছবিই এখন তামিলভূমের রাস্তাজুড়ে।
ঘটনা হল, এই ছবিতে কথা অভিনয় করছেন তরুণ দক্ষিণী স্টার কাথিরের বিপরীতে। আর তাঁর সেই চরিত্রের নাম পেচি। তামিল ভাষায় পেচি মানে কথা। অর্থাৎ কলকাতার কথা তামিলভূমে পেচি। কাকতালীয়ভাবেই নাম মিলান্তি হয়ে গিয়েছে সদ্য যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় মাস্টার্স করা কথার।
দ্য ওয়ালকে অভিনেত্রী জানালেন ছবিতে সুযোগ পাওয়ার নেপথ্য কাহিনিও। সেটাও যেন একটা সিনেমা! কীভাবে রাধাকৃষ্ণন আপনার সন্ধান পেলেন? কথা বলেন, ‘ইনস্টাগ্রামে উনি আমার ছবি দেখে মেসেজ করেছিলেন। কিন্তু সেই মেসেজ আমি দেখিনি। আমি অন্য একটি ছবিতে ছোট একটি চরিত্র করেছিলাম। সেই প্রোডাকশন হাউসের সঙ্গে যোগাযোগ করে উনি আমার নম্বর জোগাড় করেন।’।’
পরে কথা জানতে পারেন, এই ছবির জন্য চার বছর ধরে নায়িকা খুঁজছিলেন রাধাকৃষ্ণন। অবশেষে বাগবাজারের মেয়েটিকেই বেছে নেন তিনি। গত বছর এই ছবির শ্যুটিং হয়। কথা জানিয়েছেন, তাঁর শ্যুটিং লোকেশনগুলির মধ্যে ছিল মাদুরাই, তুতিকোরিন এবং তেনকাশি।

কীভাবে ডিঙোলেন ভাষার বেড়া? এ ব্যাপারেও কথা বুঝিয়ে দিলেন ঋত্বিক ঘটকের সেই বিখ্যাত উক্তি—‘সিনেমাই তো আসলে একটা ভাষা।’ কথার কথায়, ‘শ্যুটিং শুরুর কয়েক মাস আগে আমায় চেন্নাই ডাকা হয়েছিল। সেখানেই ভাষার সঙ্গে পরিচয় করানো হয়। চিত্রনাট্যের অর্থ, সংলাপ বলার ভঙ্গি ইত্যাদি রিহার্সাল হতো। সপ্তাহখানেক ছিলাম।’
ডাফ হাইস্কুল ফর গার্লসে মাধ্যমিক পর্যন্ত পড়াশোনা করেছেন কথা। তারপর উচ্চমাধ্যমিক দেন টাকি গার্লস থেকে। উচ্চমাধ্যমিকে কথা কমার্স নিয়ে পড়লেও স্নাতকে তাঁর বিষয় ছিল বাংলা।
এই একটি ছবিই যেন দক্ষিণের জানলা খুলে দিয়েছে কলকাতার মেয়েটির জন্য। রাধাকৃষ্ণনের থেকেই কথার নম্বর নেন ‘জাল্লিকাট্টু’ চলচ্চিত্রের জন্য সেরা পরিচালকের জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত মালায়ালি পরিচালক লিজো জোস পেল্লিসেরি। বর্তমানে তিনি দক্ষিণী সুপারস্টার মোহনলালকে নিয়ে তাঁর পরবর্তী ছবি তৈরি করছেন। সেই ছবিতেও একটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে মোহনলালের সঙ্গে দেখা যাবে বাংলার এই মেয়েকে। আপাতত সেই ছবির শ্যুটেই রাজস্থানে রয়েছেন কথা। মরুরাজ্য থেকেই ফোনে সাক্ষাৎকার দেন দ্য ওয়াল-কে।

নতুন ছবিতে কাজের সুযোগ হলেও মন ভাল নেই তাঁর। একটা ছবির জন্য এই ছবির প্রিমিয়ারে বা রিলিজের দিন তামিলনাড়ুতে থাকতে পারছেন না তিনি। আরও একটি আফসোস রয়েছে বাগবাজারের মেয়েটির। তা হল বাবাকে নিয়ে হল রিলিজ না দেখতে পারা। যে বাবা তাঁকে তাঁর ইচ্ছে মতো বড় হওয়ার প্রশ্রয় দিয়েছেন চিরকাল। কথার বাবার নিয়মিত ডায়ালিসিস চলে। এক তো শারীরিক কারণে তাঁকে নিয়ে যাওয়া যাবে না। তার উপর কথা নিজেও এখন রাজস্থানে।
ওটিটি প্ল্যাটফর্মে বেশ কিছু কাজ করেছেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সদ্য প্রাক্তনী। ইদানীং মডেলিংও করছেন। তবে সিনেমা তো সিনেমাই। তার কি কোনও বিকল্প হয়? কিন্তু যে মেয়ে দক্ষিণী সিনেমায় একের পর এক দরজা খুলে নিচ্ছে তাঁকে কি ডাকবেন বাংলার কোনও পরিচালক?