
শোভন চক্রবর্তী
কার্ল হেনরিখ মার্ক্স। যিনি কমিউনিস্ট ম্যানিফেস্টো লিখেছিলেন। যিনি বলেছিলেন, মানব সভ্যতার ইতিহাস আসলে শ্রেণিসংগ্রামের ইতিহাস। সেই মার্ক্স আসছেন বাঘাযতীনে। কাল শনি ও পরশু রবিবার—দু’দিন থাকবেন। একটা বাংলা মদের ঠেকে বাংলার শ্রমিক মন্টুর সঙ্গে দীর্ঘক্ষণ আড্ডা দেবেন। চুমুকও দেবেন গেলাসে। তারপর মন্টুকে বলবেন শ্রেণিসংগ্রাম ব্যাপারটা কী! তবে মন্টুর মতো করে। যেমন ভাবে মন্টু বুঝবেন, তেমন ভাবে।
আপনি একদম ঠিক পড়েছেন। মার্ক্স আসছেন বাঘাযতীনের বাংলা মদের ঠেকে। আড্ডা দেবেন মন্টুর সঙ্গে।
ব্যাপারটা কী?
বছর তিনেক আগে একটি বই লিখেছিলেন তরুণ সিপিএম নেতা ধ্রুবজ্যোতি চক্রবর্তী। তার নাম ছিল ‘মন্টু ও মার্ক্স’। সেই বইকে ভিত্তি করেই এবার নতুন নাটক উপস্থাপিত করতে চলেছে ‘ইচ্ছেমতো।’
মন্টু একজন সাধারণ লোক। বাংলার গ্রাম-শহর-মফস্বলের মন্টুরা যেমন হন আর কী! ক্লাব করেন, কালীপুজো করেন। মার্ক্স যা জানেন তাঁর সঙ্গে সেসব নিয়ে কথা বলছেন। এই ছিল ধ্রুবজ্যোতির বইয়ের মূল নির্যাস। সেটাকেই নাটকে রূপ দিয়েছে ইচ্ছেমতো। নাটকটি পরিচালনা করছেন কুশল চট্টোপাধ্যায়। মার্ক্সের চরিত্রে অভিনয় করছেন ‘ইচ্ছেমতো’র স্রষ্টা তথা তরুণ নাট্যকার সৌরভ পালোধী। মন্টুর চরিত্রে অভিনয় করছেন অরিন্দম সর্দার।
ধ্রুব অসমের করিমগঞ্জের ছেলে। ২০০১ সালে তুলনামূলক সাহিত্য নিয়ে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে এসেছিলেন। তারপর বাম ছাত্র আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েন। সেই যে কলকাতায় থেকে গিয়েছেন আর ফেরেননি। ২০১০ সালে সিপিএমের সর্বক্ষণের কর্মী হন ধ্রুব। এখন তিনি ডিওয়াইএফআইয়ের কলকাতা জেলার সম্পাদক। সিপিএমের তরুণ প্রজন্মের তাত্ত্বিক নেতাদের মধ্যে ধ্রুব অন্যতম। সম্প্রতি সিপিএমের তাত্ত্বিক মুখপত্র মার্ক্সবাদী পথে ধ্রুবর একটি লেখা খুবই সমাদৃত হয়েছে। এদিন তিনি নাটক সম্পর্কে বলেন, “আমি এখনও নাটকটা কী হচ্ছে, কী ভাবে হচ্ছে সেটা দেখিনি। তবে ইচ্ছেমতো ও সৌরভের উপর আমার ভরসা রয়েছে। ওঁরা ভালই করবেন।”
সৌরভ পালোধী বলেন, “নাটকে যেটা দেখানো হচ্ছে তা হল, মন্টুর মতো করে মার্ক্স তাঁর কথাকে বলছেন। মন্টু যে ভাষায় বোঝেন, যে উদাহরণ দিলে সমাজ, সিস্টেম ইত্যাদি সম্পর্কে তাঁর বোধ তৈরি হয় এবং মন্টু বুঝতে পারেন আসলে এই সমাজব্যবস্থাটা বৈষম্যে ভরা, এর একটা বিহিত হওয়া দরকার—মার্ক্স সেটাই করবেন।”
সৌরভ স্বঘোষিত সিপিএম। এর আগেও তাঁর পরিচালিত উৎপল দত্তের নাটক ‘ঘুম নেই’ অনেকের ঘুম উড়িয়ে দিয়েছিল। সাড়া ফেলেছিল ‘ক্যাপ্টেন হুররা’ও। এবার মন্টু ও মার্ক্স নিয়ে নতুন এক্সপেরিমেন্টে নামছে ইচ্ছেমতো।
সিপিএমের একটা অংশ রয়েছে, যাঁরা মনে করেন শক্ত শক্ত শব্দ বললেই বোধহয় পাণ্ডিত্য জাহির করা হয়। চারটে বইয়ের লাইন বলে দিলেই বোধহয় বিপ্লব ব্রেবোর্ন রোডে এসে দাঁড়ায়। কিন্তু তাতে গরিব এবং পিছিয়ে পড়া মানুষ যে আসলে কিছুই বোঝেন না সেই নেতারা সেটা বুঝতে চান না। অনেকের মতে, আসলে সৌরভ পালোধীরা সেই সিপিএম নেতাদের শেখাতে চাইছেন, মন্টুদের সঙ্গে কথা বলতে হলে মন্টুদের মতো করেই বলতে হবে। এই নাটকে মার্ক্স একটি সংলাপ বলছেন। তাতে তিনি বলছেন, নাথিং হিউম্যান ইজ এলিয়ন টু মি। অর্থাৎ সাধারণ মানুষের থেকে তিনি ভিন্ন নন।
২১ ও ২২ অগস্ট বাঘাযতীনে ইচ্ছেমতোর রিহার্সাল হলে চারটি করে নাটক প্রদর্শিত হবে। মন্টু ও মার্ক্স ছাড়াও সেই তালিকায় থাকছে ‘পুনশ্চ’ (পরিচালনা- প্রিয়া মজুমদার), ‘কৃষ্ণচূড়ার মতো’ (পরিচালনা- অপ্রতিম সরকার), ‘ড্রপ’ (পরিচালনা- সৌরভ পালোধী)। এর মধ্যে ‘ড্রপ’ নাটকটি আসলে ব্ল্যাক কমেডি। এতে ভয়েস ওভার দিয়েছেন মীর আসরাফ আলি।
‘ইচ্ছেমতো’-র তরফে বলা হয়েছে, দু’দিনই এই চারটি নাটক প্রদর্শিত হবে। কোভিড বিধি মেনে ৬৫ জন করে দর্শক এই নাটক দেখতে পারবেন। তবে দু’দিনের আটটি শোয়ের টিকিটই সম্পূর্ণ বিক্রি হয়ে গিয়েছে।