
দ্য ওয়াল ব্যুরো: করোনার মতোই কি ছড়াচ্ছে চিকেন পক্স (Chickenpox)? চিন্তায় মাথায় হাত পড়েছে স্বাস্থ্য দফতরের। গত কয়েক মাসে কলকাতা শহরেও চিকেন পক্সে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে চলেছে। বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালে এখনও অবধি ২৬ জনের মৃত্যুর খবর মিলেছে। সংক্রমণ নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যাও বেড়ে চলেছে। সংক্রমণ ছড়ানো বন্ধ করতে করোনার মতোই ফেস-মাস্ক ও পারস্পরিক দূরত্ব মেনে চলার নির্দেশ দিচ্ছেন স্বাস্থ্য আধিকারিকরা।
কিছুদিন আগেই বেলেঘাটা আইডিতে চিকেন পক্সে (Chickenpox) মৃত্যু হয়েছিল এক ব্যক্তির। দু’জনের অবস্থা সংকটজনক ছিল। গতকাল বৃহস্পতিবার আরও একজনের মৃত্যু হয়েছে। মৃতের বয়স ৬৭ বছর। স্কুল অব ট্রপিক্যাল মেডিসিন থেকে তাঁকে বেলেঘাটা আইডিতে স্থানান্তরিত করা হয়। কিন্তু বাঁচানো যায়নি।
বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ঋতু পরিবর্তনের সময়ে হাম (Measles) ও বসন্তের প্রাদুর্ভাব বেশি দেখা যায়। তবে বিশ্ব উষ্ণায়নের ফলে এখন এই সব রোগ হওয়ারও কোনও নির্দিষ্ট সময় নেই। জলবায়ু যেভাবে বদলাচ্ছে, তাতে সংক্রামিত রোগগুলো ক্রমেই বিপজ্জনক হয়ে উঠছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য় সংস্থা (হু) ও ইউনিসেফের সমীক্ষা বলছে, বিশ্বজুড়েই হাম, পক্সে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে।
আমেরিকার আকাশে চিনের বেলুন! সেনা ঘাঁটি, পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির কারখানায় উঁকিঝুঁকি দিচ্ছে
স্মল পক্স বা গুটিবসন্তের মতো সাংঘাতিক না হলেও জলবসন্তের (chickenpox) সাম্প্রতিক দাপট দেখে চিকিৎসকদের কপালে ভাঁজ পড়েছে। কারণ একটা সময় ছোটবেলায় চিকেন পক্স হলেও তা সেরে যেত। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে, ভ্যারিসেলা জুস্টার নামক ভাইরাস যা চিকেন পক্সের জন্য দায়ী তাই ক্রমশ অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠছে। সংক্রমণ এমন পর্যায়ে পৌঁছচ্ছে যে মানুষজনের প্রাণহানি হচ্ছে। বাঁকুড়া, উত্তরবঙ্গ থেকেও সংক্রমণ ও মৃত্যুর খবর আসছে।
বেলেঘাটা আইডির কোভিড নোডাল অফিসার কৌশিক চৌধুরী বলছেন, করোনার সময় যে ধরনের সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল, তা আবারও মেনে চলার সময় এসেছে। কারণ কোভিডের মতোই ছড়িয়ে পড়ছে চিকেন পক্স। স্পর্শ থেকে এই সংক্রমণ ছড়ায় না ঠিকই, তবে আক্রান্তের হাঁচি-কাশি, মুখ থেকে বেরনো থুতু-লালার মাধ্যমে ভাইরাস ছড়াতে পারে। তাই সাবধান থাকতেই হবে।
স্বাস্থ্য আধিকারিকরা বলছেন, আবহাওয়ার পরিবর্তনের কারণেই চিকেন পক্সের মতো রোগের প্রকোপ বেশি দেখা যায়। ইনফ্লুয়েঞ্জার মতোই ভাইরাস ঘটিত রোগ। ভ্যারিসেলা জুস্টার (ভি-জেড ভাইরাস) নামে এক ধরনের ভাইরাসের জন্য এই রোগ হয়।
রোগের লক্ষণ কী কী? চিকেন পক্স হলে আগে জ্বর হবে। পরের ২-৩ দিনের মধ্যে জ্বরের মাত্রা বাড়তে থাকবে। সেই সঙ্গে সারা শরীরে ব্যথা হবে। ছোট ছোট গুটির মতো র্যাশ বের হবে। খসখসে হয়ে যাবে ত্বক, চুলকানি হবে। সারা শরীর, মুখেও র্যাশ ছড়িয়ে পড়বে। ৫-৭ দিন পর্যন্ত র্যাশ বের হবে। পরে ধীরে ধীরে সেগুলিই জলভরা ফোস্কার মতো আকার নেবে। ফোস্কার ভিতরের রস ঘন হয়ে পুঁজের মতো হয়ে শুকিয়ে উঠবে।
চিকেন পক্স খুবই ছোঁয়াচে রোগ। খুব দ্রুত আক্রান্ত ব্যক্তির থেকে সুস্থ মানুষের শরীরে তা ছড়িয়ে পরে। সাধারণত আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি, কাশি বা থুতুর সঙ্গে ভাইরাস ছড়ায়। এমনকি, রোগীর সংস্পর্শে এলেও রোগ ছড়াতে পারে। শরীরে ভাইরাস ঢোকার সপ্তাহ দুয়েকের মধ্যে ধীরে ধীরে উপসর্গ দেখা দিতে শুরু করে। চিকেন পক্সের ভ্যাকসিন নেওয়া থাকলে এই রোগের প্রকোপ থেকে রেহাই মেলে।