Latest News

কলকাতার মানবিক ছবি, পুলিশের স্নেহের স্পর্শে কেঁদে ভাসালেন ভবঘুরে মহিলা

দ্য ওয়াল ব্যুরো: গায়ে নেই পর্যাপ্ত শীতের বস্ত্র, খাবারও জোটেনি। শরীর নুইয়ে পড়েছে। তাও অবিচলভাবে ফ্লাইওভারের ওপর দাঁড়িয়ে ট্রাফিক ডিভাইডারগুলো নিয়ে একের পর এক ফেলে দিচ্ছেন এক মহিলা। পাশ দিয়ে স্পিডে গাড়ি বেরিয়ে যাচ্ছে, তাতেও হুঁশ নেই সেই মহিলার। বরং ছোট ছোট নুড়িপাথর ছুড়ে মারছেন চলন্ত গাড়িগুলির দিকে। অবশেষে হুঁশ ফিরল এক কর্তব্যরত ট্রাফিক সার্জেন্টের ডাকে।

ডিউটিতে যাওয়ার সময় ঢাকুরিয়া ফ্লাইওভারের ওপর ওই মহিলাকে অসংলগ্ন অবস্থায় দেখতে পান সাউথ ইস্ট ট্রাফিক গার্ডের সার্জেন্ট পলাশ চক্রবর্তী। অভিজ্ঞ চোখে বুঝতে পারেন মহিলাটা মানসিক ভারসাম্যহীন। উপেক্ষা না করে ব্রিজের ধারেই গাড়ি সাইড করে এগিয়ে যান তিনি। মহিলাটির কাছে জানতে চান কী হয়েছে?

প্ৰথমে হুঁশ না ফিরলেও পলাশের বারংবার ডাকে সাড়া দেন মহিলাটা। একরাশ অভিযোগ তুলে ধরেন পলাশের কাছে। মন দিয়ে সব শোনেন পলাশবাবু। জানতে পারেন মহিলার দুঃখের গল্প।

মহিলাটি পলাশবাবুকে জানান যে, তাঁর সমস্ত জিনিসপত্র, এমনকি গায়ের শালটা পর্যন্ত কেড়ে নিয়েছে কেউ, শীতের রাতে রাস্তায় শুয়েই ঘুমোন, কিন্তু এক টুকরো গরম কাপড় নেই। বলতে বলতে ক্রমশই উত্তেজিত হয়ে ওঠা মহিলাটিকে শান্ত করেন পলাশবাবু।

খাওয়ার কথা জানতে চাইলে মাথা নেড়ে খিদের কথা জানান, তখনই এক মানবিক ছবির সাক্ষী থাকল তিলোত্তমা। নিজের টিফিন থেকে খাবার দিতে চাইলেন পলাশ চক্রবর্তী। তবু, অনড় মহিলা নিলেন না এক একটুকরো খাবারও। হাজার সাধাসাধি করেও লাভ হল না।

এমনকি শীতের পোশাক কিনে দিতে চাইলে নিতে চাননি তিনি। কিন্তু স্নেহকে উপেক্ষা করতে পারেন না কেউই। পলাশবাবু জোর করে টাকা দিতে চাইলে, তাঁকে ধরে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। উগরে দেন মনের ক্ষোভ। জানান, সম্বলহীন জীবনে ব্যঙ্গ বিদ্রূপ এবং নিষ্ঠুরতা ছাড়া বড় কিছু জোটেনি কখনও তাঁর।

তবুও অভিযোগ করেননি কাউকে, কিন্তু পলাশবাবুর সহৃদয়তা বাঁধ ভেঙে দেয় তাঁর। কান্না হয়ে নেমে আসে হাজারও অভিমান। পলাশ চক্রবর্তী তাঁর কাছে পুলিশ নয়, যেন সন্তান। সেই স্নেহ যেন বারবার ফিরে আসুক রাস্তার এই অবহেলিত মানুষদের জন্য। তাঁদের জন্য ব্যারিকেড হয়ে দাঁড়াক এমনই হাজার পলাশ।

You might also like