
দ্য ওয়াল ব্যুরো: ফুটপাত আছে, কিন্তু হাঁটার জো নেই। কোথাও ফুটপাতের পেভার ব্লক উঠে গিয়ে কঙ্কালসার অবস্থা। কোথাও ফুটপাত দখল করে তৈরি হয়েছে দোকান।
শুধু তাই নয়, শহরের কিছু ফুটপাতের ওপরেই তৈরি হয়েছে টিনের ঘর। সেইসঙ্গে পসরা সাজিয়ে দু’পাশে বসে আছেন হকারেরা। পথচারীদের বার বার থমকাতে হচ্ছে। ফলে বেশিরভাগ মানুষই ফুটপাত ছেড়ে রাস্তা দিয়েই হাঁটতে বাধ্য হচ্ছেন।

উত্তরের শোভাবাজার, বিকে পাল এভিনিউ, দক্ষিণে দেশপ্রিয় পার্ক, টালিগঞ্জ থানা চত্বর, রাসবিহারী মোড়, শিয়ালদা স্টেশন চত্বর, মৌলালি ক্রসিং, নীলরতন মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল চত্বর, এমনকি ধর্মতলা, কলকাতা পুরসভার আশেপাশের রাস্তা, পার্কস্ট্রিট— সর্বত্রই ফুটপাতের অবস্থা বেহাল। পেভার ব্লক অনেকদিন আগেই উঠেছে। কিছু কিছু ফুটপাতে ইট-মাটি-বালি বেরিয়ে এসেছে। শেষ কবে সেগুলি মেরামত করা হয়েছিল, মনে করতে পারছেন না আশেপাশের লোকজন।

কেন এমন বেহাল দশা কলকাতার ফুটপাতের (Kolkata Footpath)
কলকাতার বেশিরভাগ ফুটপাত জুড়ে রয়েছে খাবারের দোকান। ভাত-রুটি থেকে শুরু করে চাউমিন, এগরোল— রকমারি খাবারের পসরা সাজিয়ে রয়েছে পরপর সব দোকান। কিন্তু যেটি নেই তা হল, পথচারীদের সুষ্ঠু ভাবে হাঁটার জায়গা।

শোভাবাজার মেট্রোর পিছনের ফুটপাতে বহুদিন ধরেই অস্থায়ী ছাউনি করে বসবাস করছেন ফুটপাতবাসীরা। ফুটপাতের ওপরে বা রাস্তায় রান্না হয়। দিনের বেলায় অনেকেই সেই ফুটপাত ব্যবহার করলেও রাতে রাস্তা দিয়েই যাতায়াত করেন। উল্টোদিকেই সৎসঙ্গ আশ্রম। যার সামনের ফুটপাথ বন্ধ করে থাকেন কয়েকটি পরিবার। সেখানেও ত্রিপলের ছাউনি। হেঁটে ঢুকে পথ না পেয়ে ফিরে আসতে হচ্ছে সেখানে।

বিকে পাল এভিনিউয়ের একটি ফুটপাতে ম্যাটাডোর গাড়ি ঢুকিয়ে মাল নামাতে দেখা গেল। লোকজন রাস্তা দিয়ে হাঁটছিলেন। বাস ধরার জন্য দ্রুত হাঁটছিলেন অর্পণ বন্দোপাধ্যায়। একটি বাড়ি থেকে আসা ড্রেনের জল সরাসরি বয়ে যাচ্ছে ফুটপাতের ওপর দিয়ে। তা দেখে রাস্তায় নেমে গেলেন তিনি। তরুণ কেন্দ্র সরকারি কর্মী অর্পণ বললেন, ‘গোটা কলকাতার ফুটপাতগুলির অবস্থা যাচ্ছেতাই। মানুষ যদি ফুটপাত দিয়ে হাঁটতেই না পারে, তাহলে ফুটপাত থেকে লাভটা কী? সরকারের এগুলো দেখা উচিত।’

কলকাতা পুরসভার আশেপাশের রাস্তার ফুটপাতও দীর্ঘদিন ধরে দোকানদারদের দখলে। ফুটপাত তো বটেই, এমনকি রাস্তার ওপরেও টুল রেখে বসিয়ে চলে খাবারের আয়োজন। বিভিন্ন বাসস্টপে বসার জায়গাটুকুও খাওয়ার টেবিল-চেয়ারে বদলে যায়। খরিদ্দারদের বসিয়ে খাবার খাওয়ানোর ব্যবস্থা আছে সেখানে। দোকানদাররা জানালেন, এজন্য তাঁরা টাকা দেন। তাঁদের নাকি অনুমতি নেওয়া আছে।

নিউমার্কেট থানার আসেপাশের ফুটপাত কার্যত মোটরবাইক পার্ক করে রাখার জায়গায় পরিণত হয়েছে।
শিয়ালদা স্টেশন থেকে এনআরএস মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে যাওয়ার ফুটপাতে খাবারের উচ্ছিষ্ট থেকে শুরু করে বাসন ধোওয়া, সবই চলে ফুটপাতে বসেই। ফলে নোংরা জল জমা হচ্ছে ফুটপাতের পাশে। ফুটপাত নয়, সাধারণ পথচারী কিংবা হাসপাতালে আসা রোগীর পরিজনদের তাই রাস্তাই ভরসা।

পার্কস্ট্রিটে ফুটপাতের ওপরেই স্কুটি চালিয়ে যেতে দেখা গেল অনেককে। মেট্রো স্টেশনে ঢোকার আগের ফুটপাত অসমান। হাঁটতে গেলে হোঁচট খাওয়ার জোগাড়। ফুটপাত জুড়ে দোকান তো রয়েছেই।

অথচ পুরসভার নিয়ম অনুযায়ী, ফুটপাতে হকার বসলেও পথচারীদের জন্য তিন ভাগ জায়গা ছেড়ে দিতে হবে। কিন্তু নিয়ম আছে খাতায়-কলমে। বেসরকারি সংস্থার কর্মী সৌমিজিৎ দাশগুপ্ত বললেন, ‘এ সমস্যা নতুন কিছু নয়। এরকমই চলবে।যা পরিস্থিতি, এরপর রাস্তাও দখল করে নেবে মানুষ।’

কলকাতা পুরসভার মেয়র পরিষদ (রাস্তা) অভিজিৎ মুখোপাধ্যায় বিষয়টিতে বললেন, ‘আমরা প্রতিটি বরো-তে নির্দেশ দিয়েছি মেরামতের ব্যাপারটা দেখার জন্য। তবে কবে কাজ হবে এখনই বলা সম্ভব নয়। হকাররা নির্দিষ্ট টাকার বিনিময়ে বসেছেন। যারা নির্মাণ সামগ্রী রেখেছেন, তাঁরাও পুরসভাকে নির্ধারিত টাকা দিচ্ছেন।’

বাংলাদেশের ঢাকা পুরসভা সম্প্রতি ফুটপাতে নির্মাণ সামগ্রী রাখার ক্ষেত্রে কড়া পদক্ষেপ নিয়েছে। সংবাদমাধ্যমে জানা গেছে, সেইসব নির্মাণ সামগ্রী বাজেয়াপ্ত করা হচ্ছে। এই প্রশ্নের উত্তরে অভিজিৎবাবু বললেন, ‘কোন পুরসভা কী করল, আমাদের জানার কথা নয়। আমরা কলকাতা পুরসভার বিষয়টা জানি।’
বঙ্গ সিপিএমে প্রথম সংখ্যালঘু সম্পাদক, লাস্ট ল্যাপে আলিমুদ্দিনের হটসিটে সেলিম