Latest News

KMC: নামেই মডেল বেলগাছিয়ার বস্তি, পুর-পরিষেবা নিয়ে অভিযোগের অন্ত নেই বাসিন্দাদের

দ্য ওয়াল ব্যুরো: ঢোকার মুখেই চোখে পড়বে চকচকে বড় তোরণ। যাতে লেখা রয়েছে ‘মডেল বস্তি’। যার ওপরে উর্দুতে লেখা ‘শুকরিয়া, ফির তসরিফ লাইয়ে’। অর্থাৎ, ধন্যবাদ, আবার আসবেন। কিন্তু বিশেষ কোনও দরকার না থাকলে, এখানে কেউ আর আসতে চাইবে না, এমনটাই মত বেলগাছিয়া বস্তির বাসিন্দাদের।

কয়েকবছর আগে কলকাতা পুরসভা কয়েকটি বস্তিকে মডেল বস্তি হিসেবে গড়ে তোলার কাজ শুরু করে। তারমধ্যে ৩ নম্বর ওয়ার্ডের এই ঘিঞ্জি বস্তিটিও ছিল। কিন্তু বাসিন্দাদের অভিযোগ, নামেই ‘মডেল বস্তি’। বাস্তবে সমস্যার শেষ নেই। দিন কয়েক আগে সেখানে গিয়ে দেখা জানা গেল, এই এলাকায় মূলত সংখ্যালঘু নিম্নবিত্ত অংশের প্রায় ৪০ হাজার মানুষের বাস। ভাঙা রাস্তা। জঞ্জালে ভরে থাকা গালিপিট, রাস্তাঘাট। পলি জমে জমে নিকাশি নালার বেহাল দশা। সব মিলিয়ে নরকযন্ত্রণা বাসিন্দাদের।

Image - KMC: নামেই মডেল বেলগাছিয়ার বস্তি, পুর-পরিষেবা নিয়ে অভিযোগের অন্ত নেই বাসিন্দাদের

কী কী পরিকাঠামো থাকলে একটি বস্তিকে আদর্শ বস্তি হিসেবে তুলে ধরা যেতে পারে? কলকাতা পুরসভার নিয়ম অনুযায়ী, প্রাথমিক শিক্ষাকেন্দ্র, কমিউনিটি হল, ভোকেশনাল ট্রেনিং সেন্টার, শিশুদের পার্ক, পরিশ্রুত পানীয় জল, পরিচ্ছন্ন রাস্তাঘাট, সুষ্ঠু নিকাশি এবং আলো। এগুলোকেই একটি আদর্শ বস্তির পরিচায়ক হিসেবে ধরা হয়। জায়গা থাকলে ছোট বাজার তৈরি এবং জলাশয় থাকলে তাও সাজিয়ে রাখতে হবে মডেল বস্তিতে। কিন্তু অভিযোগ, এর কোনওটাই নেই ‘বেলগাছিয়া মডেল বস্তিতে।’

সেখানকার মাদ্রাসি গলি, এসকে টেলার্স এবং জেকে ঘোষ রোডের বাসিন্দাদের অভিযোগের অন্ত নেই। বস্তি সংলগ্ন এলাকায় চকবাজার। বাজারের নোংরা রাস্তায় হাঁটার উপায় নেই। এলাকার প্রবীণ বাসিন্দা মহম্মদ কলিমুদ্দিন বললেন, ‘নিকাশির অবস্থা জঘন্য। নালা আটকে রয়েছে। আবর্জনার গন্ধে নাকে রুমাল চাপতে হয়। অথচ নাম রেখে দিয়েছে মডেল বস্তি। কিন্তু বস্তি উন্নয়নে কোনও কাজ হয়নি।’

অভিযোগ, গত কয়েকবছর ধরেই রাস্তার অবস্থা যথেষ্ট খারাপ। রাস্তা কোথাও উঁচু কোথাও নিচু হয়ে গিয়েছে। কোথাও ভাঙাচোরা ইঁট। ফলে পথ চলতে সমস্যা হয়। একটু বৃষ্টিতেই জল জমে যায়। বস্তির মুদি দোকানদার মহম্মদ সাব্বির বললেন, ‘রাস্তা ঠিক করার কথা বহুদিন ধরে শুনছি। কাজের কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। আমরা এলাকার তৃণমূল ক্যাডার, কাউন্সিলরকে জানিয়েছিলাম। সবাই হচ্ছে, হবে করছে।’

তাহলে এই বস্তিকে মডেল বস্তি বলা হচ্ছে কেন? উত্তরে সাব্বির বললেন, ‘ওদের ইচ্ছে হয়েছে, তাই নাম দিয়েছে।’

হিন্দি ও বাংলা, দুই ভাষাতেই সমান সাবলীল বস্তির বেশিরভাগ লোকজন। তবে কমবেশি সকলেই উর্দু জানেন। এলাকার দর্জি আরশাদ সালিম বললেন, ‘আমাদের বাড়ি ছিল দমদমে। কলকাতার দাঙ্গার সময় আমরা এখানে চলে আসি। আব্বার কাছে শুনেছি তখন গান্ধীজীও কলকাতায় ছিলেন। আমি বাংলার ছেলে। তৃণমূল করি। কিন্তু ভোট মিটলেই আমাদের আর খোঁজ নেয়না কেউ। আগের কাউন্সিলর আসতেনই না। নতুন কাউন্সিলর অবশ্য আসেন। খোঁজ নেন।’

বস্তিতেই রয়েছে মসজিদ। নাম বড়ি মসজিদ। আছরের নামাজ শেষে সেখানকার মোয়াজ্জেন গোলাম রসুল বললেন, ‘আমাদের দিকে কোনও নজর নেই। সব রাস্তা ভাঙা। পানীয় জলের তেমন কোনও সমস্যা না থাকলেও, বাকি পুর-পরিষেবা নেই বললেই চলে। নোংরা ফেলার কোনও ভ্যাট নেই। তাই লোকজন যেখানে খুশি আবর্জনা ফেলে যাচ্ছেন।’

মসজিদ থেকে বেরিয়ে স্থানীয় এক রোজাদারের মন্তব্য, আগের কাউন্সিলর বস্তির উন্নতির জন্য চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু যেই টাকা আসত, এলাকার তৃণমূলের ছোট নেতাদের মধ্যে খেয়োখেয়ি শুরু হয়ে যেত। তাই এই অবস্থা।

Image - KMC: নামেই মডেল বেলগাছিয়ার বস্তি, পুর-পরিষেবা নিয়ে অভিযোগের অন্ত নেই বাসিন্দাদের

এখানে টালা থেকে খাওয়ার জল আসে। এখন রমজান মাস। তাই ভোর চারটে থেকে রাত জল সরবরাহ শুরু হয়। কিন্তু বেশীরভাগ পানীয় জলের সংযোগে বন্ধ করার কলটি নেই। তাই অবিরাম পরিশ্রুত পানীয়জল পড়ে নষ্ট হচ্ছে। কারও কোনও হেলদোল নেই।

এলাকার যুবক আরশাদ আইয়ুব বললেন, ‘এসব তো ছোটখাটো সমস্যা। এখানে পাবলিক টয়লেটের খুব দরকার। কিন্তু নেই। তাই রাস্তাঘাটেই সবাই স্নান করে। কমিউনিটি হল নেই। কারও বাড়িতে অনুষ্ঠান হলে আগে দরখাস্ত করতে হয় বেলগাছিয়া উর্দু হাইস্কুল বা বেলগাছিয়া মুসলিম হাইস্কুলে।’

এদিন দেখা গেল, এসকে টেলার্সের গলিতে ভূগর্ভস্থ নিকাশি নালা আরও চওড়া করা হচ্ছে। এই কাজে প্রায় ৩০ লক্ষ টাকা খরচ হচ্ছে বলে পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে। ওয়ার্ডের কাউন্সিলার দেবিকা চক্রবর্তী বললেন, ‘ভোটের প্রচারে এসেই এইসব অভিযোগ শুনেছি। জমা জলের সমস্যা, নিকাশি, আবর্জনার সমস্যা সব মেটানোর কাজ চলছে। কমিউনিটি হলের জন্য জায়গা খোঁজা হচ্ছে। স্বাস্থ্যকেন্দ্রও তৈরি হবে।’

ওয়ার্ডের প্রাক্তন কাউন্সিলর ও রাজ্যসভার তৃণমূল সাংসদ ডা. শান্তনু সেন বললেন, ‘অনেক লড়াই করে এই বস্তিকে মডেল বস্তি তৈরি করার কাজ শুরু করেছিলাম। কিছু কাজ হয়েছে। কিছু বাকি রয়েছে। কোভিডের জন্য দুবছর কাজ বন্ধ ছিল। যিনি দায়িত্বে আছেন, এবার নিশ্চয়ই করবেন।’

কলকাতা পুরসভার বস্তি বিভাগের মেয়র পরিষদ স্বপন সমাদ্দার বিষয়টিতে বললেন, ‘মডেল বস্তি তৈরির ক্ষেত্রে সেখানকার ভৌগোলিক অবস্থা অনেকাংশে নির্ভর করে। জায়গা কম থাকলে সমস্যা হয়। তখন অনেককিছুই তৈরি করা যায়না।’

You might also like