Latest News

উনিশেই কি উল্টে যাবে?

শঙ্খদীপ দাস: ছাপ্পান্ন ইঞ্চির ডায়ালগটার কথা মনে পড়ে! বিষ্যুদবার পশ্চিম উত্তরপ্রদেশের কাইরানা লোকসভার ফলাফলের সঙ্গে এখনও কি সেটা মানানসই। হয়তো তা নয় বলেই, অনেকে এর মধ্যেই বলতে শুরু করেছেন উল্টো গিনতি শুরু হয়ে গেল! ছাপ্পান্ন থেকে দ্রুত অবতরণ হচ্ছে মোদীর! উনিশের ভোটেই উল্টে যাবে!

কিন্তু তাই কি! এখনই কি বলে দেওয়া যাচ্ছে, উনিশে কী হবে!

চুম্বকে দেখে নেওয়া যাক দেশ  জুড়ে দশ রাজ্যের উপ নির্বাচনের ফলাফল কী দাঁড়াল। গত লোকসভা ভোটে উত্তরপ্রদেশের ৮০টি আসনের মধ্যে ৭১টিই জিতে নিয়েছিল বিজেপি। সে বার চতুর্মুখ ভোট হয়েছিল। ভোট কাটাকাটির সুবিধা নিয়ে হিন্দিবলয়ের সব থেকে বড় রাজ্যে সোনা ফলিয়েছিলেন মোদী-অমিত শাহ। কিন্তু কাইরানা দেখিয়ে দিল, অস্তিত্ব সংকটে ভুগতে থাকা উত্তরপ্রদেশের আঞ্চলিক দলগুলি এবং কংগ্রেস এককাট্টা হয়ে গেলে চোদ্দোর ভোটের ঠিক উল্টোটা হওয়াও অসম্ভব নয় উনিশে। ৭১ থেকে বিজেপি নেমে আসতে পারে ১৭ বা তারও নীচে। চোদ্দোর ভোটে কাইরানায় আড়াই লক্ষ ভোটে জেতা আসন মহাজোটের কাছে এ দিন ৪৪ হাজার ভোটে হেরেছে বিজেপি। জানিয়ে রাখা ভাল, মাস কয়েক আগেই সপা-বসপা জোটের কাছে উত্তরপ্রদেশের গোরক্ষপুর এবং ফুলপুর লোকসভা আসন দু’টি হাতছাড়া হয়েছিল বিজেপি-র। তাও গোরক্ষপুর আবার মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের পাঁচ বারের জেতা আসন ছিল।

শুধু উত্তরপ্রদেশ কেন, উপ নির্বাচনে অশনিসংকেত দিল মহারাষ্ট্রও। গত লোকসভা ভোটে মহারাষ্ট্রে ২৩টি আসনে জিতেছিল বিজেপি। শিবসেনা জিতেছিল ১৮টি আসনে। গেরুয়া শিবিরে বিজেপি-র এই সব থেকে পুরনো বন্ধু উপ নির্বাচনে প্রার্থী দিয়েছিল বিজেপি-র বিরুদ্ধেই। ফলে উপ নির্বাচনে একটি লোকসভা আসন ধরে রাখতে পারলেও, বৃহস্পতিবার বিজেপি-র হাত ছাড়া হয়েছে একটি আসন। উদ্ধবের সঙ্গে এর পরেও বনিবনা না হলে মহারাষ্ট্র চিন্তায় রাখবে বিজেপি-কে।

উপভোট এ-ও দেখাল, বিহারেও দুর্ভোগ ঘনাচ্ছে এনডিএ-র কপালে। রাজ্যে বিজেপি-নীতীশ জোট ক্ষমতায় থাকলেও, সংযুক্ত জনতা দলের থেকে বিধানসভার একটি আসন ছিনিয়ে নিলেন লালু-পুত্র তেজস্বী যাদব।

এ সবের অর্থ একটাই। চোদ্দোর তুলনায় উনিশের ভোটে অনেক আসন কমে যেতে পারে বিজেপি-র। তা হলে আসন বাড়ছে কাদের? তারা হল সপা, রাষ্ট্রীয় লোকদল, আরজেডি, এনসিপি-র মতো যারা একেবারে আঞ্চলিক শক্তি। এবং তাৎপর্যপূর্ণ হল, এর মধ্যে কিন্তু এখনও কংগ্রেস নেই।

এবং আসল প্যাঁচটা এখানেই। এখনও পর্যন্ত মোদী-অমিত শাহদের সামনে ওটাই রূপোলি রেখা। কেন না সম্প্রতি বেঙ্গালুরুতে কুমারস্বামীর শপথ মঞ্চে যে বিরোধী জোটের ছবিটা দেখেছিল গোটা দেশ, যাকে অনেকেই ফেডারেল ফ্রন্ট নাম দেওয়ার চেষ্টা করছেন, সেটা আদতে সোনার পাথরবাটি। কংগ্রেসের নেতৃত্বে কোনও জোট না হলে এ ধরনের আঞ্চলিক শক্তির জোটের উপর মানুষ ভরসা করবে কি না তা নিয়ে ভরপুর সংশয় রয়েছে। কারণ, এই আঞ্চলিক দলগুলির একে তো রাজনৈতিক মতিস্থিরতা নেই। অনেকটাই ব্যক্তিগত স্বার্থকেন্দ্রিক। দুই, কোনও আঞ্চলিক নেতার নেতৃত্ব অন্য জন ঠান্ডা মাথায় মানবেন কি না, তা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। তা ছাড়া কংগ্রেস ভাল ফল না করলে পাটীগণিতের অঙ্কেই পিছিয়ে থাকবে এই জোট।

ফলে মূল চ্যালেঞ্জ এখন রাহুল গান্ধীর সামনে। কেন্দ্রে নরেন্দ্র মোদী সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিষ্ঠান-বিরোধী ঝোড়ো হাওয়া শুরু হয়েছে। তেলের দাম হু হু করে বাড়ছে। হিন্দি বলয়ে কৃষকেরা ক্ষিপ্ত। আর্থিক বৃদ্ধির দর মন্থর। কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে না। এমনকী যে দুর্নীতি দমনের প্রত্যাশা জাগিয়ে ক্ষমতায় এসেছিলেন মোদী, সে লক্ষ্যও পূরণ হয়নি। এ বছরের শেষ দিকে মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান, ছত্তীসগড়ে বিধানসভা ভোট। এই সব বিষয়গুলিকে সামনে রেখে এই তিন রাজ্যের মধ্যে অন্তত দু’টিতে ক্ষমতা দখল করতে না পারলে রাহুলের পক্ষে নিজেকে প্রধানমন্ত্রীর পদপ্রার্থী বলে তুলে ধরাই কঠিন হয়ে পড়বে। এবং সেই অবস্থায় সোনার পাথরবাটি মার্কা খিচুড়ি জোটকে দেখিয়ে নরেন্দ্র মোদীরা মানুষকে অস্থিরতার ভয় দেখানোর সুযোগ পাবেন। নব্বইয়ের দশকের শেষ দিকে যুক্তফ্রন্ট সরকারের আমলে যা তৈরি হয়েছিল।

ফলে উনিশে উল্টে দেওয়ার স্বপ্নই যদি থাকে, তা হলে রাহুলের উচিত দ্রুত নিজেকে পাল্টানো। ভুল-ত্রুটি শুধরে এখন থেকেই ঝাঁপিয়ে পড়া রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ, ছত্তীসগড়ে ক্ষমতা দখলের জন্য।

আরও পড়ুন: মহেশতলা দেখাল, বাংলায় বিকল্প নেই তৃণমূলের

You might also like