
দ্য ওয়াল ব্যুরো: চুরির ঘটনায় ধৃতের জামিন চেয়ে তার আইনজীবী যুক্তি ফাঁদলেন, মামুলি ঘটনা। ছোটখাটো চুরি। অভিযুক্তকে জামিন দেওয়াই বাঞ্ছনীয়। বিচারক জবাবে তাঁর নিজের বাড়ির একটি চুরির ঘটনা শোনালেন ভরা এজলাসে। বললেন, তিনি (Justice Surya Kanta) প্রথমে একজন কৃষক, তারপর বিচারক। এখনও সময় করে মাঠে যান। একদিন জমি থেকে নলকূপের পাম্প চুরি হয়ে গেলে তিনি তাঁর সহকারীকে থানায় পাঠান। পুলিশ সব শুনে বলে, আমরা কী করব। যে লোক চুরি করে থাকতে পারে, গতকালই অন্য একটি চুরির মামলায় তাকে আদালতে পেশ করে পুলিশ হেফাজতে চেয়েছিল। কিন্তু বিচারক জামিন দিয়ে দিয়েছেন।
বিচারক ব্যক্তিগত এই অভিজ্ঞতার কথা শুনিয়ে বোঝাতে চেয়েছিলেন, জামিন পাওয়ার পর ফের অপরাধ না করার গ্যারান্টি কেউ দিতে পারে না। আবার অপরাধ ছোট, শুধু এই যুক্তিতে জামিন হতে পারে না।
জেলা আদালত থেকে সেই বিচারক পদোন্নতি পেয়ে আজ সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি। পাঞ্জাব, হরিয়ানায় কৃষকদের ফসল কাটার পর মাঠে আগুন দেওয়াতে দূষণের সমস্যা নিয়ে মামলায় হাইকোর্টে সেই বিচারপতির এজলাসেই ওঠে একদিন। বিচারপতি বলেন, দূষণ হয় জানি। কিন্তু কৃষকেরা কেন মাঠে আগুন দিয়ে ফসলের গোড়া পুড়িয়ে দেয় সেটা কোনওদিন বোঝার চেষ্টা করল না সরকার। সরকারি আইনজীবীদের উদ্দেশে বলেন, আমি একজন কৃষক। আমার চেম্বারে আসবেন, বুঝিয়ে দেব, কেন কৃষকেরা দূষণ নিয়ে মাথা ঘামায় না।
হাইকোর্টে সেই বিচারপতির এজলাসেই বিতর্কিত তিন কৃষি আইনের বিরুদ্ধে মামলা উঠে ছিল। সরকারি আইনজীবীদের বক্তব্য শুনে প্রশ্ন করেছিলেন, আপনাদের কোনও ধারনা আছে আমাদের দেশে কৃষকদের পরিবার পিছু চাষের জমি কতটা? যে সব প্রযুক্তি, যন্ত্রপাতি ব্যবহারের কথা বলছেন, ছোট ছোট জমিতে সেগুলি ব্যবহার করার মতো আর্থিক সামর্থ ক’জন কৃষকের আছে? সরকার আসলে কৃষকের সমস্যা না জেনেই পদক্ষেপ করছে।
সুপ্রিম কোর্টের (Supreme Court) সেই বিচারপতি সূর্য কান্তই শুক্রবার বিজেপির প্রাক্তন জাতীয় মুখপাত্র নূপুর শর্মার (Nupur Sharma) মুখে ঝামা ঘষে দিয়েছেন। তাঁর ডিভিশন বেঞ্চের আর এক বিচারপতি ছিলেন জেবি পরদিওয়ালা। তবে সিনিয়র বিচারপতি হিসাবে বেঞ্চের মূল বক্তব্য বিচারপতি সূর্য কান্তই তুলে ধরেন। দু’দিন আগে মহারাষ্ট্রের রাজনৈতিক সঙ্কট নিয়ে মামলা এই দুই বিচারপতির বেঞ্চেই উঠেছিল। মামলার গুরুত্ব বিবেচনা করে সেটি শোনার সময় ধার্য করেছিলেন বিকাল ৫টা। যাতে অন্য মামলা এই সাংবিধানিক তর্ক-বিতর্কের মামলায় থমকে না যায়। দীর্ঘ চার ঘণ্টা শুনানি শেষে রাত ৯টায় রায় শোনান।
সেই বেঞ্চের কাছেই নূপুর শর্মার তরফে আর্জি জানানো হয়েছিল যাতে দেশের নানা আদালতে তাঁর বিরুদ্ধে হওয়া মামলাগুলি দিল্লিতে শুনানির ব্যবস্থা করা হয়। দুই বিচারপতি নূপুরের হাইকোর্টে না গিয়ে সরাসরি সুপ্রিম কোর্টে আসার সিদ্ধান্তেরও সমালোচনা করেন।
বেঞ্চ এদিন বলে, ‘নূপুর শর্মার আগ্রাসী, বেপরোয়া চরিত্র আমরা দেখেছি। ওঁকে দেশের মানুষের কাছে ক্ষমা চাইতে হবে।’ ইসলামের নবী সম্পর্কে অসম্মানজনক মন্তব্য করায় দেশে-বিদেশে সমালোচনার মুখে বিজেপি নূপুরকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে। বিচারপতি সূর্য কান্ত বলেছেন, এই মহিলা দেশের মানুষের আবেগকে অমর্যাদা করেছেন। দেশে যে ঘটনা ঘটেছে তার জন্য একা তিনি দায়ী। রাজস্থানের উদয়পুরে যে দুর্ভাগ্যজনক ও মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছে তার জন্যও এই মহিলার মন্তব্য দায়ী।’ বিচারপতি দিল্লি পুলিশ এবং যে টিভি চ্যানেলের অনুষ্ঠানে গিয়ে নূপুর আপত্তিজনক মন্তব্যটি করেছিলেন তাদের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন।
সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি হওয়ার আগে সূর্য কান্ত ছিলেন হিমাচল প্রদেশ হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি। হরিয়ানার হিসারের বাসিন্দা সূর্য কান্ত বিচারকের চাকরি করার আগে ছিলেন আইনজীবী। তিনি সংবিধান, পরিষেবা এবং নাগরিক অধিকার বিষয়ক আইনের একজন বিশেষজ্ঞ। একটা সময় হরিয়ানার অ্যাডভোকেট জেনারেল ছিলেন।