
দ্য ওয়াল ব্যুরো: স্কুল সার্ভিসের (SSC) নিয়োগ কেলেঙ্কারি নিয়ে উপর্যুপরি মামলায় সিবিআই (CBI) তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিলেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় (Justice Abhijit Ganguly)। যা নিয়ে সম্ভবত অস্বস্তিতে পড়েছে রাজ্য সরকার থেকে শাসক দল। সোমবারও তাঁর এজলাস বয়কট করলেন কলকাতা হাইকোর্টের একাংশ আইনজীবী।
গত কয়েকদিনে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের এজলাস লাগাতার বয়কট করে চলেছেন এই আইনজীবীরা। এঁদের অনেকেই তৃণমূলের আইনজীবী সংগঠনের সদস্য বলে জানা গিয়েছে। হাইকোর্টের প্রবীণ আইনজীবীদের বক্তব্য, এ ভাবে আসলে অস্থিরতা তৈরির চেষ্টা হচ্ছে। কারণ, এমনিতেই আদালতে অনেক মামলা জমে রয়েছে। তার উপর মামলা তালিকাভুক্ত হওয়ার পরেও শুনানি না হলে সাধারণ মানুষই সমস্যা পড়বেন।
মোদীর মন্ত্রীর ছেলের জামিন খারিজ সুপ্রিম কোর্টে, আত্মসমর্পণের নির্দেশ
বয়কটের হুমকির মুখেও বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় অবশ্য অনড়। এর আগে তিনি বলেছিলেন, তাঁর মাথায় বন্দুক ঠেকালেও, দুর্নীতি দেখলেই তিনি রুখে দাঁড়াবেন। সোমবার তিনি জানিয়েছেন, বাদী ও বিবাদীপক্ষ উপস্থিত থাকলেই তিনি মামলা শুনবেন। কোনও অনায্য দাবি তিনি মানবেন না।
এদিন বার অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক সহ বেশ কিছু আইনজীবীকে নিজের এজলাসে ডেকে পাঠান বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। প্রবীণ আইনজীবীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “আপনারা আসুন, নইলে কাজ করতে অসুবিধা হচ্ছে। সরকারি আইনজীবীরা এজলাসে না এলে বিচারপ্রার্থীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন”। তাঁর কথায়, “আপনারা দেখুন, যাতে ঝড়বৃষ্টি কমে যায়। আমি কারও সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করিনি। তাই অনুরোধ করছি সরকারি আইনজীবীরা যেন কাজে যোগ দেন।”
জবাবে প্রবীণ আইনজীবী চণ্ডীচরণ দে বলেন, “আপনার বিরুদ্ধে বার অ্যাসোসিয়েশন কোনও সিদ্ধান্ত নেয়নি। আসলে আপনার রায় শুনে ডিভিশন বেঞ্চ ভয় পাচ্ছে। কেউ মামলা নিতে চাইছেন না।” জবাবে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, “ভয় পাচ্ছেন? আমার তা মনে হয় না। ডিভিশন বেঞ্চের বিচারপতিরা আমার থেকে অনেক সিনিয়র, আমার তো মাত্র চার বছর হয়েছে। তাঁরা কেন মামলা থেকে নিজেদের সরিয়ে নেবেন? ডিভিশন বেঞ্চের ক্ষমতা আমি জানি। তাঁদের সঙ্গে আমার ব্যক্তিগত সম্পর্ক রয়েছে। তাঁরা কিন্তু আমাকে এমন কোনও কথা বলেননি।”
স্কুল সার্ভিস নিয়োগ কেলেঙ্কারি সংক্রান্ত দুটি মামলায় এসএসসি-র উপদেষ্টা কমিটির প্রাক্তন চেয়ারম্যান শান্তিপ্রসাদ সিনহাকে সিবিআইয়ের সামনে হাজিরা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। তা ছাড়া ওই মামলার শুনানিতেই প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়কেও সিবিআই দফতরে যেতে বলেছিলেন তিনি। এর পর থেকেই ক্ষোভের মুখে পড়েছেন বিচারপতি। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে দেখা গিয়েছে, এর পর সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়, আইন মন্ত্রী মলয় ঘটককে নবান্নে ডেকে পাঠিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। একের পর এক মামলায় আদালত সিবিআইয়ের নির্দেশ দেওয়ায় রাজ্য সরকার বিড়ম্বনায়। সূত্রের খবর, সরকার পক্ষ ঠিক মতো সওয়াল করতে পারছে কিনা তা নিয়েই কৈফিয়ত চেয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। কাকতালীয় ভাবে দেখা গিয়েছে, এর পরই আদালতে বয়কট উদ্যোগে আরও সক্রিয় হয়েছেন একাংশ আইনজীবী।