
দ্য ওয়াল ব্যুরো: দু বছর উত্তরপ্রদেশের (Uttar Pradesh) জেলে আটক থাকা সাংবাদিক সিদ্দির কাপ্পান (Journalist Siddique Kappan) বৃহস্পতিবার একটু আগে মুক্তি (released) পেলেন। একটু আগে জেল থেকে বেরিয়ে সিদ্দিক বলেন, আমি নির্দোষ। সাংবাদিকতা করার জন্য আমাকে জেলে কাটাতে হল।
সিদ্দিককে উত্তরপ্রদেশের যোগী আদিত্যনাথ সরকারের পুলিশ দু বছর আগে গ্রেফতার করে তিনি হাতরাসের ধর্ষণের ঘটনা কভার করতে যাওয়ার পথে। কেরলের বাসিন্দা সিদ্দিক একটি মালওয়ালি সংবাদমাধ্যমের দিল্লির সংবাদদাতা। পুলিশের অভিযোগ ছিল তিনি দেশ বিরোধী কার্যকলাপে যুক্ত। তাঁর বিরুদ্ধে ইউএপিএ-র ধারায় মামলা করে জামিন আটকে দেওয়া হয়েছিল। হাইকোর্ট, সুপ্রিম কোর্টে লড়াই করে কয়েক মাস আগে তাঁর জামিন মঞ্জুর হয়। কিন্তু নিয়মের ফাঁসে আটকে ছিল জেল থেকে মুক্তি।

আজ জেল থেকে বেরিয়ে সিদ্দিক বলেন, ‘আমি আমার লড়াই চালিয়ে যাব। জামিন পাওয়ার পরও আমাকে জেলে আটকে রাখা হয়েছিল। আমাকে এভাবে জেলে আটকে রেখে কাদের লাভ হল আমি জানি না। এই দু বছর ছিল আমার জীবনের কঠিন সময়। কিন্তু আমি কখনই ভয় পাইনি।’
কাপ্পানকে গ্রেফতার করা হয়েছিল ২০২০-র অক্টোবরে। হাতরাসে যাওয়ার পথে পুলিশ তাঁকে আটক করে জেলে ঢুকিয়ে দেয়। পুলিশের অভিযোগ ছিল, সাংবাদিকের বেশে কাপ্পান আসলে হাতরাসে অশান্তি সৃষ্টির জন্য যাচ্ছিলেন।
হাতরাসের সেই ঘটনায় গোটা দেশে যোগী সরকারের মুখ পোড়ে। দিনের বেলা দলিত সম্প্রদায়ের একটি মেয়েকে মাঠ থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে গণধর্ষণ করে গ্রামেরই একদল তরুণ। তারা উচ্চবর্ণের ঠাকুর সম্প্রদায়ের। পুলিশের বিরুদ্ধে ঘটনার তদন্তে গাফিলতির অভিযোগ ওঠে। প্রশাসনের বিরুদ্ধে চিকিৎসায় অবহেলার অভিযোগও করে পরিবার। শেষ পর্যন্ত মেয়েটিকে বাঁচানো যায়নি।
গ্রামে জনবিক্ষোভের ভয়ে পুলিশ মৃতদেহ পরিবারের হাতে না দিয়ে ভোররাতে নিজেরাই দাহ করে। গ্রাম সিল কর দিয়ে বাইরের লোকজনের যাওয়া আটকে দেওয়া হয়। বাধা দেওয়া হয় সাংবাদিকদেরও।
এই ঘটনার দিন পনরো পর হাতরাস যাচ্ছিলেন সিদ্দিক। পুলিশ তাঁকে আটক করে প্রথমে দীর্ঘ সময় জেরা করে। পরে গ্রেফতার করে আদালতে তাঁর বিরুদ্ধে দেশদ্রোহিতার ধারায় মামলা করে। বেআইনি কার্যকলাপ প্রতিরোধ আইনের ধারায় মামলা দেওয়ায় আটকে যায় জামিন।
উত্তরপ্রদেশের সরকার বারে বারে তাঁর জামিনের আবেদনের বিরোধিতা করে। জামিন আরও আটকে যায় এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট তাঁর বিরুদ্ধে বেআইনি পথে অর্থ লেনদেনের মামলা ঠুকলে। ইডি অভিযোগ করে নিষিদ্ধ সংগঠন পপুলার ফ্রন্ট অফ ইন্ডিয়ার সঙ্গে সিদ্দিকের যোগাযোগ আছে। ওই সংগঠনের সঙ্গে তাঁর আর্থিক লেনদেনের প্রমাণ পেয়েছে তারা। গতকাল ইডির মামলাতেও জামিন সংক্রান্ত জটিলতা থেকে মুক্ত হন সিদ্দিক।
তবে কেন সিদ্দিকের প্রতি এত কঠোর মনোভাব নিয়েছে উত্তরপ্রদেশ প্রশাসন তা এখনও স্পষ্ট নয়। হাইকোর্ট, সুপ্রিম কোর্ট তাঁর জামিন মঞ্জুর করতে চাইলেও সরকার দেশের স্বার্থ বিপন্ন হওয়ার কথা বলে বিরোধিতা করেছে বারে বারে। ওই সাংবাদিকের মুক্তি চেয়ে দেশ-বিদেশের সাংবাদিক সংগঠন, বিশিষ্টজন উত্তরপ্রদেশ সরকারের কাছে আর্জি জানালেও প্রশাসন তাতে কর্ণপাত করেনি। মাস দেড়েক আগে সুপ্রিম কোর্ট এই সাংবাদিকের জামিন মঞ্জুর করে।
পেশোয়ার বিস্ফোরণের পর পাকিস্তানে আত্মসমালোচনা, অনুশোচনা মন্ত্রীদের