
শোভন চক্রবর্তী, রফিকুল জামাদার
‘বন্ধুর চেয়ে পার্টি বড়।’
বলেছিলেন, ভারতে কমিউনিস্ট পার্টি প্রতিষ্ঠার পুরোধা ব্যক্তিত্ব মুজফফর আহমেদ (কাকাবাবু)। অর্থাৎ যে কোনও ব্যক্তিগত সম্পর্কের ঊর্ধ্বে হল দল। কিন্তু বলা যত সহজ, তা কি করা অত সোজা? তা যে সোজা নয়, তা যে বেশ কঠিন এবং তেমন পরিস্থিতি এলে যে অনেক দিন ধরে লালঝাণ্ডা ধরা মানুষকেও মন আর মাথার দড়ি টানাটানিতে পড়তে হয় তা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছেন ভবানীপুরের প্রবীণ সিপিএম নেত্রী ভারতী সেনগুপ্ত।
শুক্রবার তৃণমূল কংগ্রেস কলকাতা পুর ভোটের প্রার্থী ঘোষণা করেছে। তাতে দেখা গিয়েছে, ৭৩ নম্বর ওয়ার্ডে প্রার্থী করা হয়েছে কাজরী বন্দ্যোপাধ্যায়কে। কে তিনি? তাঁর একটা পরিচয় অনেকেই জানেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাই কার্তিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্ত্রী কাজরী। অর্থাৎ দিদির ভাইয়ের বউ। কিন্তু তাঁর আরও একটি পরিচয় রয়েছে। তিনি সিপিএম বাড়ির মেয়ে।
কাজরীর মা ভারতী সেনগুপ্ত ভবানীপুরের প্রবীণ সিপিএম নেত্রী। একটা সময়ে দলের লোকাল কমিটিরও সদস্যা ছিলেন। এখন নেতৃত্বে না থাকলেও দলের সদস্য। এতদিন তিনি রাজনীতি করেছেন কিন্তু এমন বিবেকের সংঘাতে তাঁকে পড়তে হয়নি।
এবার নিজের মেয়ে প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দলের প্রার্থী। কী করবেন কমিউনিস্ট মা? দ্য ওয়াল-এর তরফে যোগাযোগ করা হয়েছিল ভারতী সেনগুপ্তর সঙ্গে। তাঁকে জিজ্ঞেস করা হয়, কী করবেন? পার্টি আগে না মেয়ে?
জবাব দিলেন প্রবীণ বাম নেত্রী। সেই জবাবে স্পষ্ট তাঁর মানসিক দোটানা। বললেন, “আমি পঞ্চাশ বছর ধরে বাম রাজনীতি করছি। পার্টিকে আমি ফেলতে পারব না। আবার ও আমার নিজের মেয়ে। ওকেই বা ফেলি কী করে?”
কিন্তু দুটো একসঙ্গে করবেন কী ভাবে? এই প্রশ্নে কিছুটা অসহায় শোনাল প্রবীন বাম নেত্রীর গলা। বললেন, “আমি পার্টির কাছে অনুমতি চাইব। একটা দিন মেয়ের সঙ্গে বেরোতে চাই। যা করব পার্টিকে জানিয়েই করব। একবার ওর সঙ্গে হাঁটতে চাই। বেশি তো হাঁটতে পারব না। পাড়ায় যখন আসবে, তখন একটু!”
কিন্তু এমনটা হলে কী করবে সিপিএম?
সিপিএমের কলকাতা জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্যের কথায়, এমন অনুমতি পার্টি কখনও দিতে পারে না। এটা সম্ভব নয়। ভারতীদি দীর্ঘদিনের পার্টিনেত্রী। তিনি নিশ্চিত বুঝবেন, আমাদের পার্টিতে শৃঙ্খলাটাই অলঙ্কার।
সিপিএমের এক প্রবীণ নেতার কথায়, কমিউনিস্ট পার্টিতে এমন উদাহরণ অনেক রয়েছে যারা ব্যক্তিগত সম্পর্কের চেয়ে পার্টিকেই অগ্রাধিকার দিয়েছে। স্বামী নকশাল, স্ত্রী সিপিএম— তাদের মতাদর্শগত অবস্থান প্রভাবিত হয়নি ব্যক্তিগত সম্পর্কের জন্য। কে কেমন ভাবে পার্টিকে দেখছেন সেটা বড় কথা।
তবে ভবানীপুরের ভারতী বুঝছেন পার্টি আর নাড়ির টানের মধ্যে দ্বন্দ্বমূলক বস্তুবাদ।