
২০০৭ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ছেড়ে নোভার্টিস এজি-তে যোগ দেন ক্লজ। কয়েক বছর আগে অবসর নিয়েছেন তিনি। তবে ভাইরাস নিয়ে গবেষণা বন্ধ করেননি। এক সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ক্লজ বলেছেন, নতুন করোনা অর্থাৎ নভেল করোনাভাইরাসও সার্সের মতোই। ২০০৩ সালে যে সার্স ভাইরাস মানুষের শরীরে সংক্রামিত হয়েছিল সেই ভাইরাসই ফের জিনের গঠন বিন্যাস বদলে ফিরে এসেছে এমন সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। গবেষকের বক্তব্য, শীত আসছে। এই সময় করোনাভাইরাসের ‘সেকেন্ড ওয়েভ’ আসার সম্ভাবনা রয়েছে।
শীতের সময় করোনার দ্বিতীয় ধাক্কা আসতে পারে এমন সম্ভাবনার কথা আগেই বলেছিল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। ভাইরোলজিস্ট ক্লজ বলছেন, সার্স-কভ-২ ভাইরাসের চরিত্র আর পাঁচটা সাধারণ ভাইরাসের থেকে অনেকটাই আলাদা। খুব কমদিনের মধ্যেই যেভাবে গোটা ফুসফুসকে সংক্রামিত করে ফেলছে এই ভাইরাস, সেটা সাধারণ ফ্লু ভাইরাসের পক্ষে কোনওভাবেই সম্ভব নয়। তাছাড়া মানুষের শরীরে দ্রুত সংক্রমণ ছড়ানোর জন্য জিনের গঠন বদলে ফেলছে খুব দ্রুত। নতুন ভাইরাল স্ট্রেন হয়ে উঠছে আরও বেশি সংক্রামক। তার ইনকিউবেশন পিরিয়ড অর্থাৎ বেঁচে থাকার সময়ও বাড়ছে। গবেষক বলছেন, শীতের সময় এমনিতেই ঠাণ্ডা ও শুষ্ক হাওয়ায় ভাইরাস বা প্যাথোজেনদের ইনকিউবেশন পিরিয়ড বেড়ে যায়। আর সার্স-কভ-২ যেহেতু কম তাপমাত্রায় বেশিদিন টিকে থাকতে পারে তাই শীতের সময়তেই এই ভাইরাস ফের তার জিনের গঠন বদলে নতুনভাবে ফিরে আসতে পারে।
ক্লজ স্টরের বক্তব্য, আমেরিকা-সহ কিছু দেশে যেভাবে লকডাউন শিথিল করা হয়েছে তাতে সংক্রমণ আরও বেশি ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। গবেষকের দাবি, প্রথম ভ্যাকসিনেই পুরোপুরি নির্মূল করা যাবে না এই ভাইরাসকে। কারণ মানুষের শরীরে ‘হার্ড ইমিউনিটি’ তৈরি হতে অনেক বেশি সময় লাগবে। ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, চিলির মতো দেশে কত মানুষ ভ্যাকসিন পাবেন সে নিয়েও সন্দেহ প্রকাশ করেছেন ক্লজ। তিনি বলছেন, সমাজের একটা গোষ্ঠীর মানুষের মধ্যে যদি পর্যাপ্ত অ্যান্টিবডি তৈরি না হয় তাহলে কোনওভাবেই হার্ড ইমিউনিটি গড়ে উঠবে না। ভাইরাসের সংক্রমণও থামানো যাবে না।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ডিরেক্টর জেনারেল টেড্রস আধানম ঘেব্রেইসাসও একই কথা বলেছিলেন। তাঁর বক্তব্য ছিল, করোনা অতিমহামারী এক ভয়ানক স্বাস্থ্য সঙ্কটের পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছেছে। আগের পরিস্থিতি ফিরে আসার সম্ভাবনা কম। ভাইরাসের সংক্রমণ এমনভাবে ছড়িয়ে পড়েছে যে ‘ওল্ড নর্মাল’-এ ফিরে যাওয়ার রাস্তা বন্ধ। আগামী দিনে সংক্রমণ ঠেকাতে কড়া পদক্ষেপ না করলে আরও ভয়াবহ পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হবে বিশ্বকে।