
নিছকই দুর্ঘটনা নাকি ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতেই তেহরানের ইমাম খোমেইনি বিমানবন্দরের বাইরে ভেঙে পড়েছিল বোয়িং ৭৫২ বিমান সেই নিয়ে দিনকয়েক ধরেই উত্তেজনা তুঙ্গে। গতকালই একটি ভিডিও ফুটেজ সামনে এনে কানাডার গোয়েন্দা বিভাগ দাবি করে, ভূমি থেকে আকাশে ছোড়া যায় এমন ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতেই ভেঙে পড়ে যাত্রীবাহী বিমান। ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ার প্রমাণও মিলেছে ভিডিওতে। ইরানের রেভোলিউশনারি গার্ডসের এলাকার কাছ দিয়ে যাচ্ছিল বিমানটি, তখনই এই হামলা হয়। প্রথমে অস্বীকার করলেও পরে ক্ষেপণাস্ত্র আঘাতের কথা স্বীকার করে নেয় ইরান। শনিবার ইরানের সরকারি টেলিভিশন চ্যানেলে এই ঘটনার দায় স্বীকার করে ইরান সেনার তরফে বিবৃতি দিয়ে জানানো হয়, মিসাইলের আঘাতেই ভেঙে পড়েছিল বিমান, তবে ইচ্ছাকৃতভাবে হামলা চালানো হয়নি। ভুলবশত দুর্ঘটনা ঘটে গেছে। ঘটনার দায় স্বীকার করে ক্ষমাও চান ইরানি প্রেসিডেন্ট হাসান রৌহানি।
ইরান ‘ভুল’ মেনে নেওয়ার পরেই একের পর এক বিবৃতি দিয়ে শাস্তির দাবি তুলতে থাকে ইউক্রেন, কানাডা। ইউক্রেনিয়ান প্রেসিডেন্ট ভোলোদিমির জ়িলেন্সকি ফেসবুকে দীর্ঘ পোস্ট করে লেখেন, “ঘটনার বিচারবিভাগীয় তদন্তের দাবি জানাচ্ছি। আশা করব এমন ঘটনার জন্য ইরান অনুতপ্ত এবং নিজেদের ভুল মেনে নেবে। খুব দ্রুত ও নিরপেক্ষ তদন্ত চাই। এতগুলো প্রাণহত্যার জন্য ক্ষতিপূরণও দিতে হবে ইরানকে।”
যাদের ভুলে এই দুর্ঘটনা ঘটেছে, তাদের কঠোর শাস্তির দাবি জানিয়েছেন কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোও। কানাডার তরফে বিবৃতি দিয়ে বলা হয়েছে, বিমানটিতে ৬৩ জন কানাডার নাগরিক ছিলেন। এটা জাতীয় বিপর্যয়। মৃতদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে ইরানকে।
১৭৬ জন যাত্রী নিয়ে গত বুধবার তেহরান থেকে উড়়েছিল ইউক্রেনের পিএস৭৫২ বিমান। ওড়ার কিছু ক্ষণের মধ্যেই তেহরান বিমানবন্দরের বাইরে ভেঙে পড়ে সেটি। বিমানে ৮২ জন ইরানি, ১১ ইউক্রেনীয়, ১০ সুইস, ৪ আফগান, ৬৩ কানাডীয়, ৩ ব্রিটিশ এবং ৩ জন জার্মান নাগরিক ছিলেন। প্রাথমিক ভাবে দুর্ঘটনার কারণই সামনে আসে। কিন্তু পরে ক্ষেপণাস্ত্র হানার বিষয়টি জোরালো হতে শুরু করে। প্রথমে ইউক্রেন, পরে আমেরিকা বিষয়টি নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করে। এর পরে কানাডা, ব্রিটেনও একই দাবি তুলে জানায়, ইরানের ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্রেই বিমানটি ভেঙে পড়েছে। এবার ইরানও স্বীকার করে নিল বিমানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলাই হয়েছে। তবে সেটা সম্পূর্ণ অনিচ্ছাকৃত ভাবে। ইরান সরকারের তরফ থেকে বোয়িং এবং আমেরিকার ন্যাশনাল ট্রান্সপোর্টেশন সেফটি বোর্ডকে (এনটিএসবি)তদন্তের অনুমতি দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।