
করোনা মহামারীর চেয়েও ভয়ঙ্কর বিপদ আসছে আগামী দশ বছরে, কেন বলছেন বিশ্বখ্যাত পরিবেশবিদ
দ্য ওয়াল ব্যুরো: ভাইরাসের অতিমহামারী দেখেই কাঁপছে বিশ্ববাসী, কিন্তু এর চেয়েও ভয়ঙ্কর বিপদ ধেয়ে আসছে পৃথিবীর দিকে। বিশ্বখ্যাত পরিবেশবিদ, ব্রিটিশ সম্প্রচারক, লেখক, ইতিহাসবিদ, তথ্যচিত্র নির্মাতা স্যর ডেভিড অ্যাটেনবরোর মুখে শোনা গেল এমন সতর্কবাণী। স্যর ডেভিড বলছেন, আগামী পাঁচ থেকে দশ বছরের মধ্যেই আরও একটা বিপর্যয়ের মুখোমুখি হতে হবে মানবসভ্যতাকে। জলবায়ু বদলের ভয়ঙ্কর প্রভাব পড়তে চলেছে পৃথিবীর ওপরে। এখনও রাষ্ট্রনেতারা সতর্ক না হলে আর নিজেদের মধ্যে সমঝোতা করে বিশ্ব উষ্ণায়ণকে রোখার চেষ্টা না করলে তা অতিমহামারীর চেয়েও বেশি প্রাণঘাতী হবে।
স্যর ডেভিড অ্যাটেনবরো শুধু পরিবেশবিদ নন, তিনি পরিবেশ আন্দোলকারীও। জলবায়ু বদল নিয়ে পৃথিবীজোড়া আন্দোলনের অন্যতম মুখ। স্কটল্যান্ডের গ্লাসগো-তে জাতিসংঘের ‘ক্লাইমেট চেঞ্জ কনফারেন্স’ (সিওপি২৬)-এর পিপলস অ্যাডভোকেট হিসেবে যোগ দিয়েছেন স্যর ডেভিড। পরিবেশ দূষণের সর্বগ্রাসী প্রভাব কী হতে পারে, সে নিয়ে প্রচার চালাচ্ছেন বহু বছর ধরেই। ৯৫ বছরের পরিবেশবিদ বলছেন, এই অতিমহামারী অনেক কিছু শিখিয়ে গেছে। এর থেকেই শিক্ষা নিক রাষ্ট্রনেতারা। মহামারী রোধে যেমন হাতে হাত মিলিয়ে বিশ্বকে বাঁচানোর অঙ্গীকার করা হয়েছে, জলবায়ু বদল নিয়েও গুরুত্ব দিয়ে ভাবা হোক।
স্যর ডেভিড বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তন কতটা বিপজ্জনক হতে পারে তার একটা উদাহরণ হল এই অতিমহামারী। কোভিড সংক্রমণ যেভাবে মানুষের মধ্যে ছড়িয়েছে এবং যেভাবে মৃত্যু বেড়েই চলেছে তার থেকে শিক্ষা নেওয়া উচিত সকলের। এত প্রাণহানি, অর্থনীতির বিপর্যয় এই সবই সঙ্কেত দিচ্ছে মানবসভ্যতা এখনও সমঝে না গেলে আরও বড় ক্ষতি হয়ে যেতে পারে। ২০১৫ সালে প্যারিস জলবায়ু চুক্তির মতোই সিওপি২৬ সম্মেলনেও বিশ্ব উষ্ণায়ণ প্রতিরোধ করার নানা কর্মসূচী নেওয়া হয়েছে। অনেক দেশই যোগ দিয়েছে এই সম্মেলনে। সেখানে প্রতিনিধিত্ব করছেন স্যর ডেভিড অ্যাটেনবরো। ব্রিটিশ সরকারের মন্ত্রী ভারতীয় বংশোদ্ভূত অলোক শর্মা এই সামিটের প্রেসিডেন্ট মনোনীত হয়েছেন।
জলবায়ু বদল ও প্রাণী সংরক্ষণ নিয়ে প্রচারই শুধু নয়, অনেক তথ্যচিত্রও বানিয়েছেন স্যর ডেভিড অ্যাটেনবরো। তিনি বিখ্যাত চলচ্চিত্র প্রযোজক ও অভিনেতা স্যর রিচার্ড অ্যাটেনবরোর ছোট ভাই। ডেভিডকে গ্রেট ব্রিটেনের জাতীয় ব্যক্তিত্ব হিসেবে গণ্য করা হয়। ১৯৬৮ থেকে ১৯৭২ সাল পর্যন্ত তিনি বিবিসি টেলিভিশন প্রোগ্রামিং ইউনিটের পরিচালক ছিলেন। জীব বিবর্তনের নিদর্শন নিয়ে ‘লাইফ অন আর্থ’, ‘দ্যলিভিং প্ল্যানেট’, ‘লাইফ ইন দ্য ফ্রিজার’ সহ একাধিক লাইফ সিরিজের পরিচালনা করেছিলেন তিনি। প্লাস্টিক দূষণ নিয়ে স্যর ডেভিডের ক্যাম্পেন একসময় বিশ্বে আলোড়ন তোলে।
‘ব্লু প্ল্যানেট-টু’ তথ্যচিত্রে সামুদ্রিক বাস্তুতন্ত্রের ওপরে প্লাস্টিকের কুপ্রভাব নিয়ে এমন তথ্য তুলে ধরেছিলেন তিনি যা প্রভাবিত করেছিল ইংল্যান্ডের রানিকেও। নিজের প্রাসাদগুলিতে প্লাস্টিকের স্ট্র ও বোতল নিষিদ্ধ করেছিলেন তিনি। ডেভিড দেখিয়েছিলেন, বছরের পর বছর প্লাস্টিকের স্ট্র থেকে যায় সমুদ্রে, কচ্ছপ বা মাছের নাকে-মুখে আটকে প্রাণ বিপন্ন করে। এই তথ্যচিত্রের পরেই প্লাস্টিক বিরোধী অভিযান শুরু হয় নানা দেশে। যোগ দেন লক্ষ লক্ষ মানুষ। ম্যাকডোনাল্ডস, কোস্টা কফি-সহ বহু পাব ও রেস্তোরাঁ প্লাস্টিরে স্ট্র-এর বদলে পেপার স্ট্র ব্যবহার করতে শুরু করে, সেই সময় যাকে বলা হত ‘ব্লু প্ল্যানেট এফেক্ট’।
বিশ্ব পরিবেশ আন্দোলনে স্যর ডেভিড অ্যাটেনবরোর মতামতকে গুরুত্ব দিয়ে শোনা হয়। তাই তিনিই এবার অগ্রণী ভূমিকা নিয়ে জলবায়ু বদলের ভয়ঙ্কর প্রভাব নিয়ে মানুষজনকে সচেতন করছেন। পরিবেশবিদ বলছেন, বিশ্ব উষ্ণায়ণে পৃথিবীর তাপমাত্রা বাড়ছে। আন্টার্কটিকায় বরফ গলতে শুরু করেছে। ৩ ডিগ্রি তাপমাত্রা বৃদ্ধি মানেই সমুদ্রের জলস্তর আধ মিটার উঁচু হবে, মেরুপ্রদেশের বরফ গলে নির্গত হবে মিথেন। বরফ না-থাকায় সূর্যের তাপ আর রশ্মি শুষে নেওয়ার উপায় থাকবে না। বিশ্ব উষ্ণায়ন একসময় ছিল শুধুই বিপদের আগাম পূর্বাভাস। এবার সরাসরি তার ফল ভুগতে শুরু করবে একটা গোটা মানবজাতি।