
দ্য ওয়াল ব্যুরো: জাঁকিয়ে শীত পড়েছে লাদাখে। তুষারপাত শুরু হয়েছে। এই পরিস্থিতিতেই প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা আগলে বসে আসেন ভারতীয় জওয়ানরা। অস্ত্র হাতে চিনের বাহিনীকে ঠেকানোর জন্য প্রস্তুতি একেবারে পাকাপোক্ত। পাহাড়ি শীতের মোকাবিলা করতে ভারতীয় বাহিনীর জন্য রসদ ও অন্যান্য সরঞ্জাম পাঠানো হয়েছে সীমান্তে। পৌঁছে গেছে ট্রাক ট্রাক রেশন। হাড়হিম ঠান্ডা থেকে বাঁচতে জওয়ানদের জন্য শীতের পোশাক পাঠিয়েছে আমেরিকা।
প্রতিরক্ষা সূত্রে লাদাখ সীমান্তের একটি ছবি সামনে এসেছে। সেখানে দেখা গেছে, আপাদমস্তক সাদা গরম পোশাকে দাঁড়িয়ে রয়েছেন এক জওয়ান। হাতে সিগ সর রাইফেল। ভারতীয় সেনা সূত্রে জানানো হয়েছে, অতন্দ্র প্রহরীর মতো লাদাখ সীমান্ত পাহারা দিচ্ছেন যে জওয়ানরা তাঁদের জন্যই এই বিশেষ পোশাক পাঠিয়েছে আমেরিকা।
চিনের ফৌজ ছাড়াও লাদাখ সীমান্তের সবচেয়ে বড় প্রতিকূলতা হল সেখানকার প্রাকৃতিক পরিবেশ। পাহাড়ি খাঁজের বিপদসঙ্কুল পরিবেশে শত্রুসেনার মোকাবিলা করার জন্য দিনরাত জাগছেন ভারতীয় জওয়ানরা। সেই সঙ্গেই হাড়হিম ঠাণ্ডায় পাহাড়ি এলাকা হয়ে উঠেছে আরও দুর্গম। লাদাখে শীত পড়লেই তাপমাত্রা নেমে যায় হিমাঙ্কের প্রায় ৪০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড নিচে। এই তাপমাত্রায় পাহাড় চূড়োয় টহলদারির জন্য বিশেষ শীত পোশাকের প্রয়োজন পড়ে। ভারতীয় সেনার জন্য এমন শীতের পোশাক ও অন্যান্য সরঞ্জামের জন্য চার বছর আগেই চুক্তি হয়েছিল আমেরিকার সঙ্গে। সম্প্রতি ভারত-আমেরিকা ২+২ বৈঠকের পরে দুই দেশের সামরিক চুক্তিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার উপর গুরুত্ব দেওয়া হয়। সূত্রের খবর, প্রথম দফায় ভারতীয় সেনার জন্য ৬০ হাজার শীতের পোশাক পাঠিয়ে দিয়েছে আমেরিকা। তবে এই মুহূর্তে লাদাখ সীমান্তে মোতায়েন রয়েছেন প্রায় ৯০ হাজার জওয়ান। জানা গিয়েছে, আরও ৩০ হাজারের জন্য দ্বিতীয় দফায় পোশাক চলে আসবে খুব তাড়াতাড়ি।
সেনা সূত্রে খবর, লেহ থেকে হেলিকপ্টারে চাপিয়ে লাদাখ সীমান্তে মোতায়েন বাহিনীর কাছে খাবার, ফলের রসের প্যাকেট, গরম পোশাক, জুতো, তাঁবু, জ্বালানি ইত্যাদি পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। অতিরিক্ত বাহিনীর জন্য শীতের রসদ নিয়ে যাওয়া, পাশাপাশি পাহাড়ি এলাকায় দিনে ও রাতে নজরদারি চালানোর জন্য আধুনিক প্রজন্মের দুটি অ্যাডভান্সড লাইট হেলিকপ্টার (এএলএইচ) লাদাখে পাঠিয়েছে ভারতীয় বায়ুসেনা। পাহাড়ি ঠান্ডায় ও প্রতিকূল পরিবেশে রাতেও নজরদারি চালানোর ক্ষমতা আছে এই কপ্টারের। নিজের ওজনের থেকে অনেক বেশি ওজনের পে-লোড বয়ে নিয়ে যেতে পারে। অ্যাডভান্সড লাইট হেলিকপ্টার ছাড়াও লাদাখ সীমান্তে হ্যালের তৈরি লাইট ইউটিলিটি কপ্টার পাঠিয়েছে বায়ুসেনা। ৫০০০ মিটার উচ্চতায় দৌলত বেগ ওল্ডির অ্যাডভান্সড ল্যান্ডিং গ্রাউন্ডে সহজেই অবতরণ করতে পারবে এই হেলিকপ্টার। সিয়াচেনের দুটি হেলিপ্যাডেও ওঠানামা করার ক্ষমতা আছে এই কপ্টারের। যে কোনও দুর্গম পাহাড়ি খাঁজের কাছাকাছি নেমে এসে নজরদারি চালাতে পারবে এই কপ্টার। ওজনে হাল্কা হওয়ায় এর গতিও বেশি এবং খুব দ্রুত এই কপ্টার উড়িয়ে শত্রুঘাঁটির খবর নিয়ে আসতে পারবেন বায়ুসেনার পাইলটরা।
ভারতের এক সেনা আধিকারিক জানাচ্ছেন, গত ২৯ আগস্ট থেকে প্যাঙ্গং হ্রদ লাগোয়া এলাকার পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে আছে। দক্ষিণ প্যাঙ্গং ভারতের সেনার নিয়ন্ত্রণে থাকলেও উত্তরে ৩ নম্বর ফিঙ্গার পয়েন্টের কাছে সামরিক কাঠামো বানাচ্ছে চিনের সেনা। এদিকে এই সপ্তাহ থেকেই বরফ জমতে শুরু করেছে পাহাড়ি খাঁজে। নভেম্বরের মাঝামাঝি গোটা প্যাঙ্গং হ্রদ সংলগ্ন এলাকা বরফে ঢেকে যাবে। ভারতের সেনা জানাচ্ছে, সবচেয়ে বেশি চিন্তা দৌলত বেগ ওল্ডি ও দেপসাং সমতলভূমি নিয়ে। কারণ দেপসাং ভ্যালিতে এখনও ক্যাম্প খাটিয়ে রয়েছে লাল সেনা, সেখানে টহল দিতে পারছে না ভারতের বাহিনী। অন্যদিকে, দৌলত বেগ ওল্ডি লাগোয়া আকসাই চিনে সামরিক কাঠামো বানাচ্ছে চিন। তৈরি হচ্ছে হেলিপ্যাডও। আকসাই চিন থেকে কারাকোরাম পাস হয়ে ভারতের নিয়ন্ত্রণাধীন এলাকায় ঢুকে আসা সহজ। শীতের সময়ের ফায়দা নেই সেই চেষ্টা চালাতে পারে পিপলস লিবারেশন আর্মি। পূর্ব লাদাখে ইতিমধ্যেই ৩০ হাজার সেনা মোতায়েন করা হয়েছে। পূর্ব লাদাখের গালওয়ান উপত্যকা, দেপসাং সমতলভূমি, গোগরা, হটস্প্রিং ও প্যাঙ্গং রেঞ্জে এই অতিরিক্ত বাহিনী মোতায়েন থাকবে।