
দ্য ওয়াল ব্যুরো: তুষারপাত শুরু হয়ে গেছে কারাকোরাম ও কৈলাস রেঞ্জে। অক্টোবরের পর থেকেই প্যাঙ্গং হ্রদ সংলগ্ন পাহাড়ি এলাকায় তাপমাত্রা পৌঁছবে মাইনাস ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। বরফে ঢাকবে পাহাড়ি খাঁজ বা ফিঙ্গার এলাকাগুলো। গত জুন মাস থেকে এই ফিঙ্গার পয়েন্টগুলো নিয়েই সবচেয়ে বেশি চিন্তা ভারতের। কারণ পাহাড়ি দুর্গম এলাকায় সেনা ও সামরিক অস্ত্র মোতায়েন করার কাজ সহজ নয়। শীতের সময় ওই এলাকা আরও দুর্গম হয়ে ওঠে। তাই সেই সময় লাল সেনা অনুপ্রবেশের চেষ্টা চালালে তাদের ঠেকাতে শক্তপোক্ত প্রতিরক্ষা ব্যবস্থারই দরকার ভারতের। তার প্রস্তুতি শুরু হয়ে গেছে এখন থেকেই।
ভারতীয় সেনা সূত্রে খবর, ফিঙ্গার পয়েন্ট ৪ এখন ভারতের সেনার নিয়ন্ত্রণে। প্যাঙ্গং হ্রদের উত্তর ও দক্ষিণের উঁচু পাহাড়ি এলাকাগুলোতেই নিয়ন্ত্রণ কায়েম রেখেছে ভারতীয় বাহিনী। দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় যুদ্ধ করার জন্য মোতায়েন করা হয়েছে তিব্বতি সেনাদের নিয়ে তৈরি মাউন্টেন ফোর্স তথা স্পেশাল ফ্রন্টিয়ার ফোর্সকে। তাদের কাছে আছে অত্যাধুনিক ইগলা ফায়ারিং সিস্টেম, কাঁধে নিয়ে মিসাইল ছোড়া যায় যে অস্ত্র থেকে।
প্যাঙ্গং সো হ্রদের ধার ঘেঁষেই রয়েছে ফিঙ্গার পয়েন্ট ৩ ও ফিঙ্গার পয়েন্ট ৪। ভারতীয় সেনা সূত্র জানাচ্ছে, প্যাঙ্গং হ্রদের দুই দিকেই সেনা মোতায়েন করে রেখেছে চিন। ফিঙ্গার পয়েন্ট ৩ এর কাছে পাহাড়ি পাদদেশে লাল সেনার তৎপরতা লক্ষ করা গেছে।
৫৮০০ মিটার উচ্চতায় ফিঙ্গার পয়েন্ট ৪ এলাকায় উঠে পড়েছে ভারতের সশস্ত্র বাহিনী। যুদ্ধ পরিস্থিতি তৈরি হলে সেখান থেকে অস্ত্র চালনা ও পাহাড়ি ঢাল বেয়ে সহজে ওঠানামা করার প্রস্তুতি চলছে। ফিঙ্গার ৩ এর কাছেই রয়েছে ধ্যান সিং পোস্ট। অন্যদিকে, হ্রদের অপর পাড়ে থাংকুং, ফুরচুকলা, রেজাং লা-তেও চিনের বাহিনীর মোকাবিলা করতে তৈরি ভারতীয় সেনারা। পরস্পরের দিকে যুদ্ধট্যাঙ্ক তাক করে বসে আছে দুই দেশের বাহিনীই।
ভারতীয় বাহিনীর নর্দার্ন কম্যান্ড আগেই জানিয়েছিল, পাহাড় হোক বা সমতলভূমি, যে কোনও প্রতিকূল পরিবেশে যুদ্ধ করার মতো প্রশিক্ষণ আছে ভারতীয় সেনার। আবহাওয়ার বদল হোক বা প্রাকৃতিক বিপর্যয়, কোনও কিছুই টলাতে পারবে না ভারতের বীর জওয়ানদের। মাউন্টেন ফোর্সকে গেরিলা যুদ্ধের বিশেষ প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়, পাহাড়ি এলাকার সীমান্ত পাহারা দেওয়ার জন্য তাদের কাছে আধুনিক অস্ত্রও আছে। তাই চিনের সেনা আগ্রাসন দেখানোর চেষ্টা করলে তা বরদাস্ত করা হবে না। ভারতীয় সেনার দাবি,চিনের সেনা সমতলভূমিতেই যুদ্ধের প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত। লাদাখের মতো এবড়ো খেবড়ো পাহাড়ি খাঁজে অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে আক্রমণ করার মতো ক্ষমতা তাদের নেই। পাহাড়ি এলাকায় কী ধরনের রণকৌশল নিতে হবে, সে জ্ঞানও ঠিকমতো নেই চিনের সেনার।
সাধারণভাবেই লাদাখের পাহাড়ি এলাকায় শীতের তাপমাত্রা মাইনাস ৩০ থেকে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে পৌঁছে যায়। পাহাড়ি রাস্তায় বরফ জমে এলাকা আরও দুর্গম হয়ে ওঠে। কিন্তু এই সব প্রতিকূল পরিস্থিতির সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেওয়ার মতো প্রশিক্ষণই আছে ভারতের বাহিনীর। চরম শীতেও পাহাড়ি খাঁজে শত্রু সেনার উপরে আচমকা প্রত্যাঘাত হানতে পারে লাদাখের স্পেশাল ফ্রন্টিয়ার ফোর্স। শক্তিতে তারা যেমন দুর্দান্ত তেমনি সামরিক কৌশলেও অপ্রতিরোধ্য। ভারতীয় সেনা সূত্র জানাচ্ছে, প্যাঙ্গং হ্রদের দক্ষিণে রেজাং লা-রেচিন লা ও কৈলাস রেঞ্জে ভারতীয় সেনা শক্তিশালী ডিফেন্স নিয়ে তৈরি। এই এলাকায় চিনের বাহিনীর অনুপ্রবেশের চেষ্টা কোনও মতেই সম্ভব নয়। অন্যদিকে, কালা টপ ও হেলমেট পাহাড়ি এলাকাও ভারতীয় সেনার নিয়ন্ত্রণে থাকায় সেদিক দিয়েও লাল সেনা শক্তি প্রদর্শন করতে পারবে না। কারাকোরাম পাস লাগোয়া দৌলত বেগ ওল্ডি ও দেপসাং ভ্যালিতেও যুদ্ধট্যাঙ্ক মোতায়েন করেছে ভারত। আকাশযুদ্ধের পরিস্থিতি তৈরি হলে প্রস্তুত রয়েছে কমব্যাট ফাইটার এয়ারক্রাফ্টও।