
সুকমল শীল
কলকাতা পুর নির্বাচনে বহু নতুন মুখ যেমন এসেছে, পাশাপাশি তেমনই ভরসা রাখা হয়েছে অনেক পোড়খাওয়া মুখে। তেমনই একটি মুখ অতীন ঘোষ। যাঁর দাবি, এলাকার সব ভোটারের মুখ তিনি চেনেন।
১১ নম্বর ওয়ার্ড। হাতিবাগান মোড় থেকে অরবিন্দ সরণি, নলীন সরকার স্ট্রিট, ডালিমতলা লেন, কলকাতার এইসব পুরনো এলাকা তাঁর ওয়ার্ডেই। ১৯৮৫ থেকে কাউন্সিলর। দীর্ঘদিনের পোড়খাওয়া রাজনীতিক। সকাল-বিকেল নিয়ম করে প্রচার করছেন। মঙ্গলবার সকালের প্রচারে বেরিয়ে হাতিবাগান মোড় থেকে শুরু করে ঘুরলেন অরবিন্দ সরণির বিভিন্ন বস্তি, বাড়ি ও আবাসনে। সঙ্গে ছিলেন মেয়ে রিকু ওরফে প্রিয়দর্শিনী।
উত্তরের এই ওয়ার্ডের সর্বাঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে পুরনো কলকাতার ছাপ। রয়েছে সাবেকি বাড়ি। আবার একটা বড় অংশের মানুষের বাস বস্তিতে। দক্ষিণ কলকাতার মতো ঝাঁ চকচকে ‘লুক’ না থাকলেও এখানে এখনও অবশিষ্ট রয়েছে পাড়া কালচার। প্ৰতিবেশিরা একে অপরকে মোটামুটি চেনেন।
প্রচারের ফাঁকে বাড়ি থেকে আনা ফ্লাক্সের ঈষদুষ্ণ পানীয়ে গলা ভিজিয়ে বললেন, ‘এই ওয়ার্ডই আমার ঘরবাড়ি। এটা পুরনো কলকাতার একটা ওয়ার্ড। এখানকার পরিকাঠামোও পুরনো। এখানে পরিকাঠামোর রক্ষণাবেক্ষণ করাটাই আসল কাজ। সেটাই করে এসেছি ৩৫ বছর ধরে। আলাদা করে প্রচারের প্রয়োজন নেই। মানুষকে বুথমুখী করতেই বেরোতে হচ্ছে। আগে যে চেহারা ছিল উত্তর কলকাতার, তা অনেক বদলে গিয়েছে। আমরা আরও সুন্দর করে গড়ে তুলছি এলাকাকে।’
বেশকিছু বাড়ির মহিলারা তিনি আসছেন জেনে ফুলের মালা পরিয়ে অভ্যর্থনা জানালেন। অনেকে বললেন, ‘আপনি কেন কষ্ট করে এলেন।’ অতীনের জবাব, ‘আপনাদের সমর্থন চাইতে।’
অনেকক্ষণ হেঁটে ঘর্মাক্ত ভোটপ্রার্থী বিরতি নিলেন। বিশ্রামে বসলেন দলীয় কর্মীর আবাসনের সামনে। গায়ের খয়েরি নেহেরু জ্যাকেট খুলে সেখানেই জলখাবার সারলেন কর্মী-সমর্থকদের সঙ্গে। মেয়ে প্রিয়দর্শিনী-সহ অন্যরা কচুরি তরকারি খেলেও তিনি খেলেন চিনি ছাড়া নুন-মরিচ টোস্ট আর চা।
ফের শুরু হল প্রচার। এক বার সংরক্ষণের কারণে বাদ পড়া ছাড়া ১৯৮৫ সাল থেকে তিনি-ই এই ওয়ার্ডের কাউন্সিলর। এই ওয়ার্ড থেকেই সাত বার কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছেন। সব মিলিয়ে এ বারেও নিজের জয়ের ব্যাপারে একশো শতাংশ আশাবাদী তিনি। বললেন, ‘জেতার পর ফের বস্তি উন্নয়নের কাজ করব। এখানকার বস্তিগুলির বহু ছেলে-মেয়ে এখন উচ্চ প্রতিষ্ঠিত। কিন্তু তাঁরা তাঁদের শিকড় ভোলেনি। কিন্তু বস্তিবাসী বলে তাঁদের মধ্যে একটা হীনমন্যতা কাজ করে। সেটাকেই দূর করতে চাই। বস্তিগুলোর আরও উন্নয়নের মাধ্যমেই সেটা সম্ভব। ওরা যাতে নিজেদের বাসস্থান নিয়ে বন্ধুমহলে রীতিমতো গর্ব করতে পারে।’
তাঁর দাবি, এলাকার মূল সমস্যাগুলোর মধ্যে অন্যতম পানীয় জল নিকাশি ব্যবস্থার ইতিমধ্যেই অনেক উন্নতি হয়েছে। এ ছাড়া রাস্তার আলো, বস্তির রাস্তাঘাট, শৌচালয়ে ২৪ ঘণ্টা জলের সরবরাহ নিশ্চিত করা হয়েছে। শেষ কয়েক বছরে বস্তিবাসীর জীবনযাপনের উন্নয়নে অনেক সংস্কারও করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
এ বারের পুরনির্বাচনে ১১ নম্বর ওয়ার্ডে বিজেপি প্রার্থী মানস সেনচৌধুরী। কংগ্রেস প্রার্থী সুখেন্দু ঘোষ। বামফ্রন্টের প্রার্থী হয়েছেন প্রদ্যুৎ নাথ। কিন্তু গত পুরভোটের নিরিখে অনেক এগিয়ে অতীনই। এলাকার অনেকেই জানালেন, আমফান মোকাবিলা, পানীয়জল, নিকাশি-সহ সবক্ষেত্রেই ভালো কাজের রেকর্ড তাঁর। তিনি নিজে বললেন, ‘আমার ওয়ার্ডে শাসক-বিরোধী দেখা হয়না। সকলের জন্য পৌর পরিষেবাই আমার সাফল্যের মন্ত্র।’
দীর্ঘদিন কলকাতা পুরসভার স্বাস্থ্য বিভাগের মতো গুরুদায়িত্ব সামলানোর পরও ‘ববির ডেপুটি’ হয়ে থাকতে হয়েছে তাঁকে। পুরসভায় জল্পনা, বিষয়টি নিয়ে তাঁর সামান্য অভিমানও ছিল। এবার ভোটের পর তাঁর দায়িত্বের ক্ষেত্রে কী উত্তরণ হতে পারে? উত্তরে বললেন, ‘প্রোমোশনের আশায় কাজ করিনি কোনওদিন। মানুষকে পরিষেবা দিতে পদ লাগেনা। আমাকে শুধু কাউন্সিলর রেখে দিলে, আমি কাউন্সিলর হিসেবেই কাজ করে যাব।’