
দেবব্রত মুখার্জী
‘সেভেন সিস্টার’ নামে খ্যাত, উত্তর-পূর্ব ভারতের সাত রাজ্যের অন্যতম রাজ্য হল নাগাল্যান্ড। ভৌগোলিক অবস্থান অনুযায়ী, পূর্বে মায়ানমার এবং অরুণাচলপ্রদেশ, পশ্চিমে ও উত্তরে আসাম এবং দক্ষিণে মণিপুরের মাঝে প্রায় ১৬৫৭৯ বর্গ কিমি অঞ্চল জুড়ে রয়েছে, রহস্যে মোড়া, অত্যন্ত প্রাণবন্ত, ঐতিহ্যবাহী, সংস্কৃতিতে ভরপুর অপূর্ব সুন্দর এই রাজ্য। প্রতিবছরের মতোই এবারেও সেখানে অনুষ্ঠিত হর্নবিল ফেস্টিভ্যাল (Hornbill Festival 2022)। বর্ণে-ছন্দে মেতে উঠলেন মানুষ, আজই তার শেষ দিন।






প্রতি বছরই ডিসেম্বরের ১ তারিখ থেকে শুরু হয় হর্নবিল ফেস্টিভ্যাল। এবছর এই ফেস্টিভ্যাল ২৩ বছরে পড়ল। নাগাল্যান্ডের রাজধানী কোহিমা থেকে প্রায় ১২ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত হেরিটেজ গ্রাম কিসামাতে রয়েছে বিশাল এক স্টেডিয়াম। সেখানেই হয় অনুষ্ঠান।

এবার অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেছেন দেশের উপরাষ্ট্রপতি শ্রী জগদীশ ধনখড়। তাঁর পরনে ছিল নাগাল্যান্ডের ঐতিহ্যবাহী শাল আমুলা কাসকা আর পালক লাগানো টুপি সীপি। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন নাগাল্যান্ডের গভর্নর জগদীশ মুখি, মুখ্যমন্ত্রী নেইফিউ রিও এ এবং অন্যান্যরা।






উৎসবে অংশগ্রহণকারী মোট আঠারোটি উপজাতি হল: আংগামি, রেংমা, জেলিয়াং, কুকি, কাছারি, ছাকহেসাং, পোচারী, ছাঙ, আও, কোনিয়াক, ফোম, খিয়ামনিউনগান, ইয়িমখিউয়ং, লাংটাম, লোঠা, লুমি, তিখহিরস এবং গারো।
হর্নবিল উৎসবের বিভিন্ন পর্যায়ে বিভিন্ন উপস্থাপনের মাধ্যমে নাগাল্যান্ডের নানা উপজাতির সংস্কৃতি, জীবনযাপনের গল্প, তাদের সুখ-দুঃখের ইতিবৃত্ত তুলে ধরা হয়। মূল এরিনার আশপাশে বেশ বড় একটা জায়গা জুড়ে বিভিন্ন উপজাতির বাড়ি ঘরের প্রমাণাকৃতির মডেল রয়েছে। সেখানে চোখে পড়ে, তাদের বৈচিত্রময় বসবাস পদ্ধতি, খাবার-দাবার, পোশাক-পরিচ্ছদ ইত্যাদি।






উৎসবের প্রধান আকর্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে ঐতিহ্যবাহী নাগা মোরুংস প্রদর্শনী এবং শিল্প ও কারুশিল্প বিক্রি, খাবারের স্টল, ভেষজ ওষুধের স্টল, ফুলের শো এবং বিক্রয়, গান এবং নাচ, তীরন্দাজি, নাগা কুস্তি, আদিবাসী গেম, ওপেন এয়ার সিনেমা, সঙ্গীত কনসার্ট, রান্না প্রতিযোগিতা ও আরও অনেক কিছু। হর্নবিল ফেস্টিভ্যালকে মূলত নাচ, গান, অভিনয়, প্যারেড, খেলাধুলা, খাদ্য মেলা এবং ধর্মীয় অনুষ্ঠানের একটি রঙিন মিশ্রণ হিসেবে ধরা যেতে পারে।

হর্নবিল ফেস্ট দেখার জন্য বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে পর্যটকরা আসেন নাগাল্যান্ডে। দেশের বিভিন্ন রাজ্য থেকেও বহু মানুষ জড়ো হন রঙের উৎসবে। সারাদিন ধরে নিজেদের সভ্যতা, সংস্কৃতি বিশ্বের দরবারে তুলে ধরার পরে, অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারীদের গ্যালারি পরিষ্কার করার দৃশ্য মন ছুঁয়ে যায়।









ছবি: দেবব্রত মুখার্জী
পাশাপাশি শুয়ে এক কুমিরের পা ধরে টানাটানি করছে আর এক কুমির, ব্যাপারটা কী!