
দ্য ওয়াল ব্যুরো: উপাসনাস্থল আইনের বিরোধিতা করে সুপ্রিম কোর্টে আরও একটি মামলা দায়ের হয়েছে। ওই মামলাতেও সর্বোচ্চ আদালতের কাছে আর্জি জানানো হয়েছে ওই আইনের তিন, চার এবং পাঁচ নম্বর ধারা তিনটিকে অসংবিধানিক ঘোষণা করা হোক। (Hindutva)
১৯৯১ সালের আইনটির ওই তিনটি ধারার মূল প্রতিপাদ্য হল, ধর্মীয় উপাসনাস্থল হিসাবে চিহ্নিত কোনও কাঠামোর কোনওভাবেই চরিত্র বদল করা যাবে না। যেমন ছিল তেমনই থাকবে। কোনও আদালত কাঠামো এবং চরিত্র বদলের আর্জি গ্রাহ্য করতে পারবে না (Hindutva)।
হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলি দেশ জুড়ে মন্দির পুনরুদ্ধারে নেমেছে। তাদের পয়লা নম্বর টার্গেট বারাণসীর জ্ঞানবাপী এবং মথুরার শাহী ইদগাহ মসজিদ। সংগঠনগুলির দাবি, ওই মসজিদ দুটি যথাক্রমে কাশী বিশ্বনাথ মন্দির এবং শ্রীকৃষ্ণ জন্মস্থানের জমিতে গড়ে তোলা হয়েছিল। মসজিদ দুটি সরিয়ে নিয়ে মন্দিরের জায়গা ফিরিয়ে দিতে হবে।

শুধু কাশী এবং মথুরার মসজিদই নয়, হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলির দাবি, তাজমহলও মন্দির ভেঙে তৈরি হয়েছে। আবার গত সপ্তাহে দিল্লির একটি আদালতে জমা হওয়া আবেদনে এক ব্যক্তি দাবি করেছেন কুতুব মিনার তৈরির সময় ২৭টি হিন্দু ও জৈন মন্দির বিনষ্ট করা হয়েছিল। আদালত মন্দিরের জায়গা পুনরুদ্ধার করে দিক যাতে সেখানে হিন্দুরা পূজা শুরু করতে পারে।
একই ধরনের আর্জি জমা হয়েছে রাজস্থানের অজমেরের একটি আদালতে। সেখানে মামলাকারীর দাবি, অজমের শরিফ দরগাহ তৈরি হয় হিন্দু মন্দির ভেঙে। দরগাহ-র গায়ে এখনও মন্দিরের নিদর্শন রয়েছে, দাবি করা হয়েছে মামলায়। ওই দরগাহ নিয়ে এই প্রথম এমন দাবি উত্থাপন করা হল।
এরই পাশাপাশি সুপ্রিম কোর্ট এবং এলাহাবাদ হাইকোর্টে গুচ্ছ মামলা দায়ের হয়েছে ১৯৯১ সালের উপাসনাস্থল আইনের বিরোধিতা করে। সর্বশেষ মামলাটি গতকাল শুক্রবার সুপ্রিম কোর্টে দায়ের করেছেন মথুরার বাসিন্দা জনৈক দেবকীনন্দন ঠাকুর।

লক্ষণীয় হল, এই ধরনের সব ক’টি মামলাতেই বলা হয়েছে, ওই আইনে হিন্দু, বৌদ্ধ, শিখ, জৈনদের ধর্মীয় উপাসনা করার অধিকার খর্ব করা হয়েছে। আইনটি সংবিধানের ২৫ নন্বর অনুচ্ছেদে উল্লেখিত ধর্মাচরণের অধিকারের পরিপন্থী। যদিও হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলি বাদে অন্য কোনও ধর্মীয় সংগঠন এই ধরনের মামলা দায়ের করেনি। কুতুব মিনার তৈরির সময় জৈন মন্দির ভাঙা হয়েছিল বলে দাবি করে মামলা দায়ের করেছেন হিন্দুত্ববাদী সংগঠনেরই এক নেতা।
অনেকেই মনে করছেন, মুসলিমদের কোণঠাসা করতে এটা গেরুয়া শিবিরের নয়া কৌশল। তারা অমুসলিম অন্য সংখ্যালঘু ধর্মীয় গোষ্ঠীকে কাছে টানার চেষ্টা করছে। আদালতেও একই ভাবে অমুসলিম সংখ্যালঘুদের স্বার্থরক্ষায় সরব হচ্ছে।
অবশ্য সব সংখ্যালঘুকে গেরুয়াবাদীরা কোনও দিনই এক দৃষ্টিতে দেখে না। তাদের বিরোধ মূলত মুসলিম ও খ্রিস্টানদের বিরুদ্ধে। ওই দুটি ধর্মই ভারতীয় উপমহাদেশে বিদেশি শাসকদের হাত ধরে এসেছে।
মন্দির-রাজনীতির মধ্যেই দেশের নানা প্রান্তে উগ্র হিন্দুত্ববাদীদের হাতে খুন হতে হয়েছে বহু খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীকে। কিন্তু হালে লড়াইয়ের পরিবর্তে তাদের কাছে টানার চেষ্টাই শুরু করেছে গেরুয়া শিবির।
সেই তৎপরতা ক্রমশ প্রকাশ পাচ্ছে কেরলে। সেখালে মুসলিমদের বিরুদ্ধে খ্রিস্টানদের জোটবদ্ধ করতে চাইছে তারা। এই লক্ষ্যপূরণে মুসলিমদের বিরুদ্ধে লাভ জিহাদ ইস্যুতে খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের মধ্যে জোরদার প্রচার শুরু করেছে গেরুয়া শিবির।
তাতে তারা যথেষ্ট সফল। হালে সিপিএম এবং কংগ্রেসের কয়েকজন খ্রিস্টান নেতা মুসলিমদের বিরুদ্ধে এই ইস্যুতে মুখ খুলেছেন। আবার খ্রিস্টানদের স্বার্থে কাজ করা কেরলের বেশ কয়েকটি সংগঠনকে একত্রিত করে একটি মঞ্চ গড়েছে বিজেপি। এ মাসের গোড়ায় বিজেপি সভাপতি জেপি নাড্ডা কেরলে গিয়ে ওই মঞ্চের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। তাদের জনসভায় প্রধান বক্তা হিসাবে হাজির হয়েছিলেন নাড্ডা। রাজ্যের বিজেপি নেতারা খ্রিস্টানদের সংগঠনগুলিকে কথা দিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছ থেকে তাদের দাবিদাওয়া আদায় করে দেওয়ার চেষ্টা হবে।