
অভিযোগ, সিবিআই চিদম্বরমের বিরুদ্ধে এই আইএনএক্স-মামলায় নজিরবিহীন তৎপরতা দেখাচ্ছে।
পি চিদম্বরম প্রসঙ্গে টুইটে প্রিয়াঙ্কা লেখেন, “প্রচণ্ড শিক্ষিত ও শ্রদ্ধেয় ব্যক্তি এবং রাজ্যসভার সদস্য পি চিদাম্বরমজি সততার সঙ্গে দেশের সেবা করেছেন অর্থমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে। তিনি সর্বদা সত্যের পক্ষে কথা বলেন এবং সরকারের ভুল সকলের সামনে তুলে ধরেন।” তিনি আরও লেখেন, “কাপুরুষদের সত্যি বা সততা কোনওটাই পোষায় না, তাই তাঁকে নির্লজ্জের মতো নিশানা করা হচ্ছে। আমরা তাঁর সঙ্গে রয়েছি এবং সত্যের জন্য সবসময় লড়াই করব, পরিস্থিতি যাই হোক না কেন।”
দেখুন প্রিয়াঙ্কার টুইট।
An extremely qualified and respected member of the Rajya Sabha, @PChidambaram_IN ji has served our nation with loyalty for decades including as Finance Minister & Home Minister. He unhesitatingly speaks truth to power and exposes the failures of this government,
1/2— Priyanka Gandhi Vadra (@priyankagandhi) August 21, 2019
দিল্লি হাই কোর্ট রক্ষাকবচ তুলে নেওয়ার পর থেকেই রীতিমতো বিপাকে প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরম। আদালতের রায়ের পরই মঙ্গলবার রাতে প্রাক্তন অর্থমন্ত্রীর বাড়িতে হানা দেয় সিবিআইয়ের একটি প্রতিনিধিদল। তত ক্ষণে অবশ্য উধাও হয়ে গিয়েছেন পি চিদম্বরম। মঙ্গলবার সন্ধে থেকেই আর পাত্তা পাওয়া যায়নি তাঁর। কিন্তু, তাতেও দমে যায়নি কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। মঙ্গলবারই প্রাক্তন অর্থমন্ত্রীর বাড়িতে একটি নোটিস সাঁটিয়ে দেওয়া হয়। দু’ঘণ্টার মধ্যে তাঁকে ডেপুটি এসপির সামনে হাজিরা দেওয়ার জন্য নির্দেশ দেয় সিবিআই। ওই নোটিসের কপি তাঁকে মেলও করা হয়। দু’ঘণ্টার মধ্যে সিবিআই দফতরে হাজির হননি চিদম্বরম।
তার পরে রাত পার হতেই সকালে ফের তাঁর জোরবাগের বাড়ি পৌঁছে যায় সিবিআই এবং এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের টিম। এই নিয়ে গত আঠারো ঘন্টায় তিন বার চিদম্বরমের বাড়িতে হানা দিল সিবিআই-ইডি।
এক কথায়, এই মুহূর্তে প্রচণ্ড চাপেই রয়েছেন প্রাক্তন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী। তবে তাঁর পাশে রয়েছে দল। বিজেপির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অভিযোগ তুলে সরব হয়েছেন কংগ্রেস নেত্রী প্রিয়াঙ্কা গান্ধী সহ কংগ্রেস মুখপাত্র রণদীপ সিং সুরজেওয়ালা।
এই অবস্থায় আজ এ ব্যাপারে সুপ্রিম কোর্টের শুনানিই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে চলেছে। দিল্লি হাইকোর্ট আগাম জামিনের আবেদন খারিজ করতেই গতকাল তড়িঘড়ি সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন চিদম্বরম। কিন্তু সর্বোচ্চ আদালত গতকালই শুনানিতে রাজি হয়নি। তবে আজ বুধবার সকালে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈয়ের কোর্টে ওই আবেদনের শুনানির কথা। সুপ্রিম কোর্ট তাঁকে কোনও রক্ষাকবচ দিলে একমাত্র তবেই তিনি গ্রেফতারি এড়াতে পারবেন বলে মনে করছেন আইনজ্ঞরা।
চিদম্বরম নিজেও দুঁদে আইনজীবী। তবে সুপ্রিম কোর্টে তাঁর হয়ে সওয়াল করবেন প্রবীণ কংগ্রেস নেতা তথা বিশিষ্ট আইনজীবী সলমন খুরশিদ ও অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি। বস্তুত তাঁদের পরামর্শেই সিবিআইয়ের নোটিসকে চ্যালেঞ্জ করে মঙ্গলবার গভীর রাতেই কেন্দ্রীয় তদন্ত এজেন্সিকে পাল্টা চিঠি দেন চিদম্বরমের আইনজীবী অর্শদীপ খুরানা। সিবিআইয়ের কাছে তিনি প্রশ্ন করেন, আইনের কোন ধারায় দু’ঘন্টার মধ্যে তাঁর মক্কেলকে হাজিরা দিতে বলা হয়েছে? এ ব্যাপারে কোনও উল্লেখ নেই নোটিসে।
খুরানা সিবিআইকে দেওয়া চিঠিকতে এও বলেন, সুপ্রিম কোর্টই তাঁর মক্কেলকে রেহাই দিয়েছে। বুধবার সকাল সাড়ে দশটায় সুপ্রিম কোর্টে শুনানি হবে। সুতরাং তত ক্ষণ পর্যন্ত যেন বিরত থাকে সিবিআই।
আইএনএক্স মিডিয়া দুর্নীতি মামলায় চিদম্বরমকে আগে একাধিক বার জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। অভিযোগ, ২০০৭ সালে চিদম্বরমের ছেলে কার্তি চিদম্বরম আইএনএক্স কোম্পানিকে বেআইনিভাবে বিদেশি অর্থ পাওয়ার সুযোগ করে দেন। এ জন্য বিপুল অঙ্কের কাটমানি নিয়েছিলেন কার্তি।
সেই সময় কেন্দ্রে মনমোহন সিং-এর সরকারে অর্থমন্ত্রী ছিলেন চিদম্বরম। অভিযোগ, সেই প্রভাব খাটিয়েই কার্তি আইএন এক্স মিডিয়াকে বিদেশ থেকে ৩০৫ কোটি টাকা পাওয়ার সুযোগ করে দেন। এ ছাড়াও এয়ারসেল-ম্যাক্সিস সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকার দুর্নীতি মামলাতেও বারবার চিদম্বরম ও কার্তির নাম উঠেছে। যদিও গোড়া থেকেই চিদম্বরম দাবি করেছেন, কোনও অনিয়ম তিনি করেননি। এমনকি এই মামলায় এফআইআর-এও তাঁর নাম নেই। তাঁর বক্তব্য, রাজনৈতিক কারণেই বিজেপি পরিচালিত সরকার তাঁকে টার্গেট করছে। গত বছর তিনি আগাম জামিনের জন্য দিল্লি আদালতে আবেদন করেছিলেন। আদালত তাঁকে অন্তর্বর্তী জামিন দিয়েছিল। কিন্তু মঙ্গলবার তাও নাকচ করে দেওয়া হয়েছে।
কার্তি চিদম্বরমের বিরুদ্ধে এখন তদন্ত করছে এনফোর্সমেন্ট ডায়রেক্টরেট ও সিবিআই। তিনি গত বছর গ্রেফতারও হয়েছিলেন। তাঁকে ২৩ দিন জেলে থাকতে হয়েছিল। ২০০৭ সালে আইএনএক্স মিডিয়ার মালিক ছিলেন পিটার ও ইন্দ্রানী মুখার্জি। তাঁরা এখন শিনা বরা হত্যা মামলায় জেলে রয়েছেন। তাঁরা অভিযোগ করেছেন, পি চিদম্বরম ও কার্তি চিদম্বরম, দু’জনেই তাঁদের কাছে ঘুষ চেয়েছিলেন।