
সূত্রের খবর, বাইডেন প্রশাসনের নানা পদক্ষেপে অত্যন্ত বিরক্ত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বাংলাদেশ সরকার মনে করছে, মার্কিন সরকার শুধু বাংলাদেশ বিরোধী পদক্ষেপ করছে, তাই-ই নয়, এটা বাংলাদেশের ভাবমূর্তি কালিমালিপ্ত করার পরিকল্পিত উদ্যোগ। সেই কারণেই আমেরিকা এমন একটা সময় বেছে নিয়েছে যখন দেশটি তার স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী পালন করছে।
কূটনৈতির মহলে আমেরিকার পদক্ষেপ ঘিরে দু-ধরনের অভিমত শোনা যাচ্ছে। কারও কারও মতে, মানবাধিকার হরণই অন্যতম কারণ। অন্য কোনও কারণ নেই। তার তাজা দৃষ্টান্ত হল, তিনবারের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী তথা বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে বিদেশে চিকিৎসা করাতে যেতে দিতে সরকারের মানা। তাছাড়া, মারদাঙ্গা করে ভোটে জেতার অভিযোগ তো আছেই। যদিও আমেরিকা বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের শেষবারের নির্বাচন নিয়ে কোনও প্রশ্ন তোলেনি। কিন্তু দেশের মধ্যে বিরোধীরা অত্যন্ত সরব।
অন্যমত হল, চিনের সঙ্গে বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান সুসম্পর্ক মেনে নিতে পারছে না আমেরিকা। ভারতীয় উপমহাদেশে তো বটেই গোটা দক্ষিণ এশিয়ায় চিন আমেরিকা এবং তার মিত্র শক্তির জন্য বিপদের কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে।
মার্কিন প্রশাসন দিন কয়েক আগে বাংলাদেশে মানবাধিকার হরণের গুরুতর অভিযোগ তুলেছে সেদেশের কয়েকজন নিরাপত্তা আধিকারিকের বিরুদ্ধে। তাদের অন্যতম হলেন র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের বা র্যাবের বর্তমান ডিজি
চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন, প্রাক্তন ডিজি ও বর্তমানে বাংলাদেশের পুলিশ প্রধান বেনজীর আহমেদ-সহ ছয় জন আধিকারিক।
মার্কিন প্রশাসনের তরফে গত ১০ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবসে বাংলাদেশের এই অফিসারদের আমেরিকায় প্রবেশাধিকার কেড়ে নেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ বাংলাদেশ সরকার তাঁদের আমেরিকায় কোনও সরকারি কাজে বা কোনও মন্ত্রীর সফর সঙ্গী হিসাবে সে দেশে পাঠাতে পারবে না। তাঁরা ব্যক্তিগত সফরেও আমেরিকা যেতে পারবেন না। এই অফিসারদের বিরুদ্ধে নিজের দেশবাসীর মানবাধিকার হরণের অভিযোগ তুলেছে আমেরিকা।
ছয় অফিসারের উপর নিষেধাজ্ঞা নিয়ে বাংলাদেশে যখন অভ্যন্তরীণ রাজনীতি সরগরম তখন সোমবার খবর এসেছে সে দেশের সদ্য অবসরপ্রাপ্ত সেনা প্রধান আজিজ আহমেদের উপরও নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে মার্কিন প্রশাসন।
কেন আচমকা এই অফিসারদের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হল তা খতিয়ে দেখতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নেতৃত্বে তিন মন্ত্রীর এক কমিটিকে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তবে মনে করা হচ্ছে, নানা অভিযোগের মধ্যে বড় ভূমিকা নিয়েছে এ বছর ফেব্রুয়ারিতে আলজাজিরা টেলিভিশনে ‘অল দ্য প্রাইম মিনিস্টারস মেন’ শীর্ষক খবর। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ সেনা কর্তা ও র্যাব এবং পুলিশের লোকজন গুম খুন সহ মানবাধিকার হরণের নানা ঘটনায় যুক্ত। আজিজ আহমেদ তখন সেনা প্রধানের দায়িত্বে ছিলেন।
তবে বাংলাদেশ সরকার সরাসরি মুখ না খুললেও আওয়ামি লিগ নেতারা মার্কিন নিষেধাজ্ঞাকে সরাসরি ষড়যন্ত্র বলছেন। দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সোমবার বলেন, ষড়যন্ত্রের সম্ভাবনা কীভাবে উড়িয়ে দেওয়া যাবে? আমেরিকা তো বাংলাদেশের স্বাধীনতা চায়নি। তারা বিরোধিতা করেছিল।