
দ্য ওয়াল ব্যুরো: লাদাখ সংঘাতের পর থেকেই সমুদ্র সুরক্ষা কয়েকগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে ভারত। চিনকে আরও কড়া বার্তা দিতে সমুদ্রেও রণসজ্জা তৈরি হয়েছে। ভারত মহাসাগরে মোতায়েন করা হয়েছে নৌবাহিনীর যুদ্ধজাহাজ। চিন এবং পাশাপাশি পাকিস্তান– এই দুই বিরোধী শক্তিকে রুখতে সবরকম প্রস্তুতি চূড়ান্ত করার পরিকল্পনা চলছে দফায় দফায়। গত তিন সপ্তাহ ধরে ভারত মহাসাগর ও বঙ্গোপসাগর চষে ফেলছে এমকিউ-৯বি সি গার্ডিয়ান ড্রোন। আমেরিকার থেকে লিজ নিয়েছে ভারত।
নৌসেনার অ্যাডমিরাল করমবীর সিং বলেছেন, ভারত মহাসাগরে বরাবরই আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা চালাচ্ছে চিন। পূর্ব লাদাখে সীমান্ত সংঘাতের পর থেকে সমুদ্রেও চোরাগোপ্তা পথে হামলা চালানোর ছক কষছে তারা। তাই সুরক্ষা কয়েকগুণ বাড়ানো হয়েছে। চেন্নাইয়ের ৮০ কিলোমিটার পূর্বে আরাক্কোনাম এয়ারবেস থেকে নামানো হয়েছে দুটি সি গার্ডিয়ান ড্রোন।
সি গার্ডিয়ান হল হাই অল্টিটিউড লং এন্ডুর্যান্স (HALE) ড্রোন যা সমুদ্রের উপরে ৪০ হাজার ফুট উচ্চতা অবধি উড়তে পারে। টানা ৩৩ ঘণ্টা আকাশে ঘুরে নজরদারি চালাতে পারে। রিমোর্ট কন্ট্রোলে চালনা করা যায় এই ড্রোন।
নৌসেনা জানাচ্ছে, শীত নেমেছে লাদাখে। তাপমাত্রা পৌঁছেছে হিমাঙ্কের নিচে। তুষারপাত শুরু হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে পাহাড়ি এলাকায় বদলে সমুদ্রে হামলা চালানোর চেষ্টা করতে পারে চিন। বিশেষত সমুদ্র উপকূলীয় দ্বীপগুলিতে নজরদারি আরও বাড়ানো হয়েছে।
গত ১৫ জুন গালওয়ান উপত্যকায় সংঘর্ষের পরেই আন্দামান-নিকোবরের কাছে মালাক্কা প্রণালীতেও নৌবহর বাড়িয়েছে ভারত। রণকৌশলগত ভাবে এই এলাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ ভারত মহাসাগরে চিনা বাহিনীর প্রবেশের এটাই একমাত্র জলপথ। চিনের নৌবাহিনী এই পথেই ভারতীয় নৌবাহিনীর গতিবিধির উপর নজরদারি চালায়। বহু পণ্যবাহী চিনা জাহাজও এই পথে যাতায়াত করে। প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞদের অনুমান, এই পথ দিয়ে ভারতীয় সীমায় ঢোকার চেষ্টা চালাতে পারে চিনের নৌবহর। এই এলাকায় নজরদারি চালাচ্ছে সি গার্ডিয়ান ড্রোন। তাছাড়া নৌসেনার পি-৮১ আই বিমানও নামিয়েছে ভারতীয় নৌবাহিনী। উপকূল এলাকায় নজরদারি, শত্রুপক্ষের জাহাজ এবং সাবমেরিনের অবস্থান জানা এবং প্রয়োজনে আঘাত হানার ক্ষেত্রে এই বিমান ভারতীয় নৌবাহিনীর অন্যতম বড় অস্ত্র। হারপুন ব্লক-২ ক্ষেপণাস্ত্র এবং হালকা ওজনের টর্পেডোকে এই বিমানের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। শক্তিশালী রেডিও সিগন্যালের মাধ্যমে শত্রুসেনার যুদ্ধজাহাজ বা ডুবোজাহাজের খোঁজ পেয়ে ধ্বংস করতে পারবে এই বিমান। এমনকি গোপনেও যদি শত্রুপক্ষের সাবমেরিন হানা দেয়, তাহলেও তা রুখে দিতে পারবে ক্ষেপণাস্ত্রবাহী এই বিমান।
আমেরিকার থেকে প্রিডেটর ড্রোন কেনার পরিকল্পনাও আছে ভারতের। এই প্রিডেটর ড্রোনকে বলা হয় ‘মিডিয়াম অল্টিটিউড লঙ-এন্ডুর্যান্স’ (MALE) সশস্ত্র প্রিডেটর-বি ড্রোন। প্রিডেটর-বি ড্রোনকেই বলা হয় এমকিউ-৯ রিপার (MQ-9 Reaper) । চালকবিহীন এই ড্রোন তৈরি করেছে জেনারেল অ্যাটোমিক্স অ্যারোনটিক্যাল সিস্টেম। মার্কিন বায়ুসেনা এই ধরনের অত্যাধুনিক ড্রোন ব্যবহার করে। প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞরা এই প্রিডেটর-বি ড্রোনকে বলেন ঘাতক ড্রোন। উঁচু পাহাড়ি এলাকায় নজরদারি চালানো এবং দুর্গম এলাকায় অতর্কিতে শত্রুঘাঁটির উপরে হামলা চালাতে এই ড্রোনের জুরি মেলা ভার। এর উন্নত রাডার ও সেন্সর সিস্টেম অনেক উঁচু থেকেই শত্রুঘাঁটি চিনে নিতে পারে। প্রতিপক্ষ টের পাওয়ার আগেই নির্ভুল লক্ষ্যে আঘাত হানতে পারে।