
দ্য ওয়াল ব্যুরো : বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা (Seikh Hasina) দেশের স্বাধীনতার বিজয় দিবসের সুবর্ণজয়ন্তীতে অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গডা়র শপথ নিলেন। দেশবাসীকেও শপথবাক্য পাঠ করালেন। ঢাকায় জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় বৃহস্পতিবার সরকারি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। সেখান থেকে হাসিনার শপথ বাক্য পাঠের সময় সে দেশের নাগরিকদের সোশ্যাল মিডিয়া, টেলিভিশন এবং অস্থায়ী অনলাইন মাধ্যমে যুক্ত হওয়ার ব্যবস্থা রাখা হয়েছিল। যুক্ত ছিলেন নিচুতলা পর্যন্ত প্রশাসনের সমস্ত কর্মচারী। শপথ পাঠের সময় হাসিনার পাশে ছিলেন তাঁর বোন তথা মুজিবুর রহমানে ছোট মেয়ে শেখ রেহানা।
স্বাধীনতার সূবর্ণ জয়ন্তীতে বিশেষ অতিথি হয়ে তিন দিনের সফরে বুধবার ঢাকা পৌঁছেছেন ভারতের রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ। এদিন তিনি বিশেষ কুচকাওয়াজে অংশ নেন। গতকাল স্বাধীনতার শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান কোবিন্দ।
হাসিনা এদিন সমৃদ্ধশালী বাংলাদেশ গড়ার ডাক দেওয়ার পাশাপাশি অসাম্প্রদায়িক দেশ গড়ার কথাও বলেন। এবার পুজোয় বাংলাদেশে বেশ কিছু সাম্প্রদায়িক অশান্তির ঘটনা ঘটেছিল। তখনই হাসিনা বলেছিলেন, বাংলাদেশে কেউ সংখ্যালঘু নয়। দেশের নাগরিকদের সকলের অধিকার সমান। এদিন শপথ বাক্যেই ছিল সাম্প্রদায়িক ভেদাভেদমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার আহ্বান।
এবছর শেখ মুজিবুরেরও জন্মশতবর্ষ পালিত হচ্ছে। হাসিনার ভাষণে বারে বারেই আসে মুজিবুরের কথা। কীভাবে তাঁর বাবা স্বাধীনতার ডাক দিয়ে দেশবাসীকে লড়াইয়ে নামার আহ্বান জানিয়েছিলেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী এদিন তা বিশদে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, ১৯৭১ সালের ২৫-এ মার্চ মধ্যরাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী রাজারবাগ পুলিশ লাইন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্যান্য স্থানে আক্রমণ করে গণহত্যা শুরু করে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সে রাতেই স্বাধীনতার ঘোষণা করেন।
শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধুর বক্তব্য উদ্ধৃত করে বলেন, ‘ইহাই হয়তো আমার শেষ বার্তা। আজ হইতে বাংলাদেশ স্বাধীন। আমি বাংলাদেশের জনগণকে আহ্বান জানাইতেছি যে, যে যেখানে আছ, যাঁহার যাহা কিছু আছে, তাই নিয়ে রুখে দাঁড়াও। সর্বশক্তি দিয়ে হানাদার বাহিনীকে প্রতিরোধ কর। পাকিস্তানি দখলদার বাহিনীর শেষ শত্রুটিকে বাংলার মাটি হতে বিতাড়িত না করা পর্যন্ত এবং চূড়ান্ত বিজয় অর্জন না করা পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যাও।’
শেখ মুজিবুর রহমান ২৬-এ মার্চের প্রথম প্রহরে তাঁর এই স্বাধীনতার ঘোষণা ঢাকার পিলখানায় তৎকালীন ইপিআর হেডকোয়ার্টার থেকে ওয়ারলেসের মাধ্যমে সমগ্র দেশে পাঠানো হয়। আগে থেকেই ইপিআর-এর সুবেদার মেজর শওকত আলী তাঁর তিনজন সহকর্মীসহ সেখানে অপেক্ষায় ছিলেন।
হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধুর এই বার্তা বাংলাদেশের সকল পুলিশ স্টেশন অর্থাৎ থানায় প্রেরণ করা হয়। থানায় কর্মরত অফিসাররা এই বার্তা সংগ্রাম পরিষদের নেতাদের হাতে ভোর রাতে পৌঁছে দেন। একইসাথে টেলিগ্রাম ও টেলিপ্রিন্টারেও এ বার্তা সমগ্র দেশে পৌঁছে দেওয়া হয়। আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা পায়ে হেঁটে, মুখে চোঙ্গা ফুঁকিয়ে বা রিকশায় করে মাইক দিয়ে জেলা থেকে থানা পর্যন্ত এই বার্তা প্রচার করেন। প্রচারপত্র তৈরি করে বিলি করেন। ২৬-এ মার্চ দুপুরে চট্টগ্রাম বেতার কেন্দ্র থেকে চট্টগ্রাম জেলা আওয়ামি লিগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক আব্দুল হান্নান স্বাধীনতার ঘোষণা প্রথম পাঠ করেন। এরপর একে একে অন্যান্য নেতারা এই ঘোষণা পাঠ করতে থাকেন।
দেশবাসীর উদ্দেশ্যে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর আহ্বান, আসুন আমরা বাংলাদেশের বিজয়ের এই সুবর্ণজয়ন্তী এবং মুজিববর্ষে শপথ গ্রহণ করি যে, আমাদের প্রিয় মাতৃভূমিকে সোনার বাংলা হিসেবে গড়ে তুলবো, বিশ্বসভায় উন্নত সমৃদ্ধ বিজয়ী জাতি হিসেবে আমরা মাথা উঁচু করে চলব।