
অমল সরকার
কাল বাদে পরশু শেষ হচ্ছে রাহুল গান্ধীর (Rahul Gandhi) সাড়ে তিন হাজার কিলোমিটার দীর্ঘ ভারত জোড়ো যাত্রা। পরশু সোমবার শ্রীনগরে (Kashmir) যাত্রার সমাপ্তি সমাবেশে ডাক পেয়েও বেশিরভাগ অকংগ্রেসি দলই সেখানে যাচ্ছে না। কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়্গে বিজেপি বিরোধী যে ২২টি দলকে সেখানে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন তারমধ্যে মাত্র দুটি দলের উপস্থিতি নিয়ে কোনও সংশয় নেই। সেই দুটি দলই জম্মু-কাশ্মীরের।
সোমবারের সমাপ্তি মঞ্চে পাহাড়ি রাজ্যের তিন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ন্যাশনাল কনফারেন্সের ফারুক আবদুল্লা ও তাঁর পুত্র ওমর এবং পিডিপির মেহবুবা মুফতি উপস্থিত থাকবেন। রাজনৈতিক মহলে চর্চা শুরু হয়েছে, কংগ্রেসের সভায় গিয়ে সংহতি জানানোতেই কি থেমে থাকবে তিন দলের সম্পর্ক?
রাহুল গান্ধীর ভারত জোড়ো যাত্রায় ইতিমধ্যেই যোগ দিয়েছেন প্রবীন নেতা ফারুক। তিনি লম্বা বিবৃতি দিয়ে রাহুলের যাত্রার উদ্দেশ্য এবং তাঁর উদ্যমের প্রশংসা করেছেন। যাত্রায় যোগ দিয়ে প্রবীন নেতা বুকে টেনে নেন রাহুল ও প্রিয়ঙ্কাকে।
ফারুক পুত্র ওমরের সঙ্গে রাহুলের বন্ধুত্ব অনেক দিনের। বাবার মতো ওমরও বন্ধু রাহুলের যাত্রার প্রশংসা করেছেন। তিনিও শুক্রবার সদলবলে যোগ দিয়েছেন রাহুলের যাত্রায়।
কিন্তু কংগ্রেস ও রাহুলের প্রশংসায় ফারুক এবং ওমরকে ছাপিয়ে গিয়েছেন পিডিপি নেত্রী তথা রাজ্যের আর এক প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতি। তিনি যাত্রা শুরুর দিনে শুভেচ্ছা বার্তা পাঠানোর পাশাপাশি রাহুলরা জম্মু-কাশ্মীরে প্রবেশের দিনে একটি জনপ্রিয় সর্বভারতীয় ইংরিজি দৈনিকে ভারত জোড়ো যাত্রা নিয়ে দীর্ঘ নিবন্ধ লিখেছেন। শনিবার পা মিলিয়েছেন রাহুলের যাত্রায়।
উপত্যকার বিগত কয়েক বছরের রাজনৈতিক পরিস্থিতি সম্পর্কে ওয়াকিবহাল মহল মনে করছে, এ সবই কেন্দ্র শাসিত জম্মু-কাশ্মীরের প্রধান দুটি দলের কংগ্রেসের কাছাকাছি আসার চেষ্টা। এমনকী আগামী বিধানসভা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে তিন দলের জোটের সম্ভাবনাও উড়িয়ে দিচ্ছে না রাজনৈতিক মহল। বিগত তিন বছরের রাজনৈতিক পরিস্থিতি সেই সম্ভাবনার রাস্তা খুলে দিয়েছে বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
২০১৯-এর ৫ অগাস্ট কেন্দ্রীয় সরকার জম্মু-কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বিলোপ করে সংবিধানের ৩৭০ নম্বর অনুচ্ছেদটি বাতিল করে দি। সেই সঙ্গে রাজ্যটি দুই ভাগে ভাগ করে দুটি কেন্দ্র শাসিত অঞ্চল জম্মু-কাশ্মীর এবং লাদাখ গঠন করে। ভেঙে দেওয়া হয় বিধানসভা। সেই সঙ্গে গৃহবন্দি করা হয় প্রাক্তন তিন মুখ্যমন্ত্রী ফারুক, ওমর এবং মেহবুবাকে। বেশ কয়েক মাস গৃহবন্দি থাকার পর সক্রিয় রাজনীতিতে ফিরেছেন তিনজনই।
কংগ্রেস সরাসরি সরকারি সিদ্ধান্তের বিরোধিতা না করে বিধানসভায় আলাপ আলোচনার মাধ্যমে পদক্ষেপ করা উচিত ছিল বলে জানায়। তবে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীদের গৃহবন্দি করার সিদ্ধান্তেরও তীব্র সমালোচনা করেন সনিয়া, রাহলরা। সংসদেও সরব হন প্রাক্তন দুই কংগ্রেস সভাপতি।
ইতিমধ্যে বিধানসভা ভোটের ঢাকে কাঠি পড়েছে রাজ্যে। এ বছরের শেষ অথবা আগামী বছরের গোড়ায় বিধানসভা নির্বাচন হওয়ার কথা। কিন্তু গোল বেঁধেছে নির্বাচন কমিশন এবার জম্মু-কাশ্মীরে ভিন রাজ্য থেকে যাওয়া লোকজনের নাম ভোটার তালিকার তোলায়। ৩৭০ নম্বর অনুচ্ছেদ বহাল থাকার সময় যা সম্ভব ছিল না। বিধানসভার সীমানা পরিবর্তনের পর জম্মু প্রান্তের আসন সংখ্যা অনেকটা বেড়েছে। এই দুটি সিদ্ধান্তই বিজেপির পক্ষে যাবে বলে মনে করছে উপত্যকার বিরোধী দলগুলি। নরেন্দ্র মোদী, অমিত শাহরা সেখানে একক শক্তিতে সরকার গড়ার লক্ষ্যে এগোচ্ছেন।
এই পরিস্থিতিতে বিজেপিকে আটকাকে আগেই কাছাকাছি এসেছে জন্মু-কাশ্মীরের বিবদমান দুই প্রধান দল ন্যাশনাল কনফারেন্স এবং পিডিপি। কেন্দ্রীয় সরকারের ২০১৯ পরবর্তী সিদ্ধান্তগুলির বিরুদ্ধে একযোগে লড়াইয়ের জন্য উপত্যার সব দল ফারুকের বাড়ির উঠোনে বসে ‘গুপকার ঘোষণা’ প্রকাশ করেছে। শ্রীনগরের গুপকারে অবস্থিত ফারুকের বাড়ি। তাই ঘোষণার ওই নাম।
জম্মু-কাশ্মীরের রাজনৈতিক মহল মনে করছে, গুপকার ঘোষণাকে সামনে রেখে ফারুক, ওমর এবং মেহবুবাদের দলের সঙ্গে রাজ্যের বিধানসভা এবং ২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচনের জন্য কংগ্রেসের বোঝাপড়া অসম্ভব নয়। উপত্যকার এই দুই দলই কংগ্রেস এবং বিজেপির সঙ্গে অতীতে ঘর করেছে। উপত্যকার নেতা গুলাম নবি আজাদ কংগ্রেস থেকে বেরিয়ে নিজের দল গড়লেও তেমন সাড়া পাননি। কংগ্রেস শিবির মোটের উপর অক্ষত উপত্যকায়।
জম্মু-কাশ্মীরের শেষ নির্বাচিত সরকারটি ছিল পিডিপি-বিজেপি জোটের। মাঝপথে সেই জোট ভেঙে দেয় বিজেপি। আবার কংগ্রেসের সঙ্গে পিডিপি পাঁচ বছর সরকার চালিয়েছে এই শতকের গোড়ায়। কংগ্রেসের সঙ্গে ন্যাশনাল কনফারেন্সেরও জোট ছিল একটা সময়।
২০১৯-এর লোকসভা ভোটেও ফারুক-ওমর’দের দল কংগ্রেসের সঙ্গে জোট বেঁধে লড়াই করে। আবার ফারুক কেন্দ্রে অটল বিহারী বাজপেয়ির মন্ত্রিসভার গুরুত্বপূর্ণ সদস্য ছিলেন।
পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে কংগ্রেস-এনসি-পিডিপি বোঝাপড়া অসম্ভব নয় বলে অনেকেই মনে করছেন। সবই স্পষ্ট হলে সোমবার ভারত জোড়ো যাত্রার সমাপ্তির পর। সমাপ্তি সমাবেশ জোটের আভাস মিলতে পারে, মনে করছেন কেউ কেউ।
রাহুলের পাশে মেহবুবাও, পুলওয়ামায় শহিদ জওয়ানদের স্মৃতি স্তম্ভে শ্রদ্ধা জানালেন কংগ্রেস নেতা