
কী দাবি করেছেন চিনা অধ্যাপক?
রেনমিন ইউনিভার্সিটির ইন্টারন্যাশনাল রিলেশনের অধ্যাপক জিন ক্যানরং তাঁর ছাত্রছাত্রীদের বলেছিলেন, ভারতীয় সেনাদের ঘায়েল করতে নাকি ইলেকট্রোম্যাগনেটিক ওয়েপন তথা মাইক্রোওয়েভ অস্ত্রের প্রয়োগ করেছিল চিনের পিপলস লিবারেশন আর্মি। সীমান্তে যেহেতু গুলি চালানো নিষিদ্ধ, পারস্পরিক বিবাদ মেটাতে আগ্নেয়াস্ত্রের প্রয়োগ না করার জন্যই চুক্তিবদ্ধ দুই দেশের বাহিনী। তাই কৌশলে মাইক্রোওয়েভ অস্ত্রেই ভারতীয় বাহিনীকে উঁচু পাহাড়ি এলাকা ছাড়তে বাধ্য করেছিল লাল ফৌজ। অধ্যাপকের এমন দাবি দ্রুত আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলিতে ছড়িয়ে পড়ে। ব্রিটেনের একটি খবরের কাগজে ছাপা হয়, চিন দাবি করেছে গত ২৯ অগস্ট গালওয়ান উপত্যকায় যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হয়েছিল সেখানেও নাকি এই মাইক্রোওয়েভ অস্ত্রেরই প্রয়োগ করেছিল চিনা বাহিনী। এই অস্ত্র থেকে ছোড়া রশ্মির কারণে অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন ভারতীয় জওয়ানরা। বমি করতে শুরু করেন অনেকেই। পরে পাহাড়ি এলাকা ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য হন।
এই খবর সামনে আসার পরেই হইচই শুরু হয়ে যায়। নিজেদের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে টুইট করে এই খবরকে মিথ্যা বলে দাবি করে ভারতীয় বাহিনী। সেনার তরফে জানানো হয়, লাদাখের উপত্যকা ও পাহাড়ি ফিঙ্গার পয়েন্টগুলিতে বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত তিব্বতি পার্বত্য বাহিনীর মোকাবিলা করতে পারেনি চিনের ফৌজ। তাদের অনধিকার অনুপ্রবেশের চেষ্টাও রুখে দেওয়া হয়েছিল। তাই সাজিয়েগুছিয়ে মিথ্যা গল্প ফেঁদে বিভ্রান্তি ছড়ানোর চেষ্টা হচ্ছে।
Media articles on employment of microwave weapons in Eastern Ladakh are baseless. The news is FAKE. pic.twitter.com/Lf5AGuiCW0
— ADG PI – INDIAN ARMY (@adgpi) November 17, 2020
কী এই মাইক্রোওয়েভ অস্ত্র?
প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞরা বলেন হিট ওয়েপন। এই ধরনের অস্ত্র ইলেকট্রোম্যাগনেটিক রশ্মি ছুড়ে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে পারে। চিনা অধ্যাপক যে মাইক্রোওয়েভ অস্ত্রের কথা বলেছেন, তা চিনে তৈরি হয়েছিল অনেক আগেই। এই অস্ত্রের একটা বিশেষত্ব আছে। মাইক্রোওয়েভে যেমন কোনও কিছু গরম করা হয়, তেমনি এই অস্ত্র মাইক্রোওয়েভের মতোই হিট রে বা অত্যন্ত উত্তপ্ত রশ্মি ছুড়ে লক্ষ্যবস্তুকে কাবু করতে পারে। ০.৬ মাইল দূর থেকেও এই অস্ত্রের নিশানা করা যায়। যদি মানুষের শরীরে এই রশ্মি ঢোকে তাহলে শরীরের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেড়ে যায়। শরীরের জল শুষে নিতে পারে এই রশ্মি। যার প্রভাব পড়ে অঙ্গপ্রতঙ্গগুলিতে। প্রচণ্ড মাথাযন্ত্রণা, বমি ও অন্যান্য শারীরিক সমস্যা দেখা দেয়।
২০১৪ সালে চিন এই ধরনের অস্ত্রের প্রদর্শন করেছিল। যার নাম Poly WB-1। দূরপাল্লার এই অস্ত্রকে চিনা বাহিনী নাম দিয়েছে ‘পেইন বিম ওয়েপন’ । অর্থাৎ উত্তপ্ত রশ্মি ছুড়ে শত্রুসেনার শরীরে জ্বালা-যন্ত্রণা ধরানো সম্ভব। এক কিলোমিটার দূর অবধি ছুটে যেতে পারে সেই রশ্মি। চিনের এই অস্ত্রের সঙ্গে মিল রয়েছে আমেরিকার অ্যাকটিভ ডিনায়াল সিস্টেমের (ADS) । এটিও একধরনের ইলেকট্রোম্যাগনেটিক ওয়েপন যা মার্কিন সেনা আফগানিস্তানে মোতায়েন করেছিল। তবে কোনও মানুষের উপরে এই অস্ত্রের প্রয়োগ হয়নি।
চিনের মাইক্রোওয়েভ অস্ত্রের পাল্টা ভারতেও হাই এনার্জি বা পাওয়ারের অস্ত্র বানাচ্ছে প্রতিরক্ষা গবেষণা সংস্থা ডিআরডিও। এইসব অস্ত্রের নাম ‘ডাইরেক্ট এনার্জি ওয়েপনস’ (DEWs)। প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ধরনের অস্ত্র অনেক প্রযুক্তির হয়। উচ্চ গতির লেজ়ার রশ্মি ছুড়ে আক্রমণ করা যায় অথবা রেডিয়েশন দিয়ে হামলা করা যায়। অনেক সময়েই এই রেডিয়েশন চোখে দেখা যায় না। শব্দের চেয়ে দ্রুত গতিতে অদৃশ্য রশ্মি ছুটে গিয়ে শত্রুপক্ষের মিসাইল সিস্টেম বা যুদ্ধট্যাঙ্ককে তছনছ করে দিতে পারে। অস্ত্র হামলা করা যায় গোপনে, নিঃশব্দে। ‘রিলেটিভিস্টিক ইলেক্ট্রনস বিমস’ প্রযুক্তিকে ব্যবহার করে ভারত তৈরি করেছে মিসাইল ধ্বংসকারী মারণাস্ত্র, একে বলে ‘কিলো অ্যাম্পিয়ার লিনিয়ার ইনজেক্টর’ (KALI) তথা কালি। আমেরিকা, চিনের তৈরি লেজ়ার অস্ত্রের চেয়ে শতগুণে ভয়ঙ্কর এই কালি। যে কোনও রকম ক্ষেপণাস্ত্র শুধু নয় কালির শক্তি এমন পর্যায়ে রয়েছে যে কৃত্রিম উপগ্রহকেও টার্গেট করে ধ্বংস করে দিতে পারে এই মারণাস্ত্র। এই কালিকে রীতিমতো ভয় পায় চিনও।