
দ্য ওয়াল ব্যুরো: স্বপ্ন মানুষকে কোথায় পৌঁছে দিতে পারে, তার বড় উদাহরণ এবাদত হোসেন চৌধুরী। বাংলাদেশ যে নিউজিল্যান্ডকে আট উইকেটে হারিয়ে ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট তৈরি করেছে, তার মূল কারিগর এই পেস বোলার। তিনি একাই নিয়েছেন ছয় উইকেট। কিউইদের ঘরকে চুরমার করে দেওয়ার মূলে তিনিই।
এই এবাদতের জীবনটা শুরু হয়েছিল ভলিবলার হিসেবে। তিনি দীর্ঘকায়, সেই কারণে বিপক্ষের কোর্টে জ্যাব করে স্কোর করতে তাঁর জুড়ি ছিল না। কিন্তু জীবন কাকে কোনদিকে নিয়ে যায়, কেউ জানে না। সেই পেসারই দ্বিতীয় ইনিংসে ২১ ওভার বল করে ৪৬ রান দিয়ে একাই নিলেন ৬ উইকেট। ধ্বংস করলেন কিউই ব্যাটসম্যানদের।
ম্যাচ সেরার পুরস্কার নিয়ে তাঁকে এই নিয়ে প্রশ্ন করেন সঞ্চালক। সেইসময় বাংলাদেশের নায়ক বলেছেন, ‘‘ভলিবল থেকে ক্রিকেটে আসার গল্প অনেক লম্বা। আমি ক্রিকেটকে উপভোগ করছি। বাংলাদেশ ও বিমানবাহিনীর প্রতিনিধিত্ব করাটাও।’’ তিনি যেহেতু সেনাবাহিনীতে ছিলেন, সেই কারণেই আউট করে স্যালুট দিয়েছেন। এই নিয়ে তাঁর বক্তব্য, ‘‘আর্মিতে তো স্যালুট দেওয়ার চল রয়েছে, তাই অভ্যাস হয়ে গিয়েছে আমার।’’
Love this fella
Ebadot Hossain’s post match interview after Bangladesh’s win over New Zealand 🙌🏻
He’s been in the Air Force and played volleyball before turning to cricket pic.twitter.com/5OLbLImeQf
— Dan Walker (@mrdanwalker) January 5, 2022
মৌলবি বাজার জেলার বড়লেখা উপজেলার কাঁঠালতলী গ্রাম থেকে উঠে এসেছেন এবাদত। আগে পাড়ার মাঠে মাঝেমধ্যে ক্রিকেট খেলতেন। বাবা চাকরি করতেন বিজিবিতে। বাবার দেখানো পথেই হাঁটলেন এবাদত। শৃঙ্খলিত জীবন গড়বেন বলে ২০১২ সালে যোগ দিলেন বিমান বাহিনীতে।
নিয়মমাফিক জীবনের মধ্যে সুখ খুঁজতে গিয়েও আবিষ্কার করলেন এটি তার জন্য নয়। খেলার মাঠ এবাদতকে খুব টানে। যে কারণে ছকে বাঁধা জীবনে চাকরির পাশাপাশি চলছিল খেলাধুলাও। ভলিবল, হ্যান্ডবল, বাস্কেটবল এসব। এরপর বিমানবাহিনীর নিয়মিত ভলিবল খেলোয়াড় হয়ে যান।
২০১৪ সালে সিটি ক্লাবের হয়ে ঢাকায় প্রথম বিভাগ ক্রিকেট খেলার সুযোগ পান এবাদত। ক্রিকেটে পরিচিত হতে থাকেন ধীরে ধীরে। ২ বছর পর সামনে চলে আসে সূবর্ণ সুযোগ।
২০১৬ সালে বিসিবি আয়োজন করে পেস বোলার খোঁজার জন্য শিবিরের। সারাদেশ থেকে প্রতিভাবান পেসারদের তুলে আনার লক্ষ্য নিয়ে এই পেসার হান্টের আয়োজন করে তারা। এখানেই নিজের ভাগ্য পরীক্ষা করতে যান এবাদত । প্রথমে ঢাকা থেকে এই প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়ার কথা থাকলেও পরবর্তীকালে ফরিদপুর গিয়ে পেসার হান্টে অংশ নেন। সেখানেই চমক দেখান তিনি।
আরও একটি চমকপ্রদ তথ্য, ওই শিবিরে সারা দেশ থেকে মোট ১৪ হাজার পেসার গিয়েছিলেন। এবাদত মাত্র দুটি বল করার সুযোগ পান। ওই বলের গতিবেগ ছিল ১৪০ কিমি। ওই দুটি বলে কেঁপে যায় বিপক্ষ ব্যাটসম্যান। তারপর নির্বাচকরা তাঁকে জাতীয় দলের ট্রায়ালে ডাকেন। জীবনের মোড় ঘুরে যায় নবাগত পেসারের।