Latest News

জল-যন্ত্রণায় দিশাহারা পটাশপুর, ভগবানপুর, পুজোর আনন্দ ভেসেছে বন্যায়

দ্য ওয়াল ব্যুরো: মহালয়া এসে গেলেও এবার মন ভাল নেই পূর্ব মেদিনীপুরের (East Midnapore) বিস্তীর্ণ এলাকায়। অন্যান্য বছর এমন সময়ে এলাকাজুড়ে সাজো-সাজো রব পড়ে যেত। শিউলির গন্ধে, ধানখেতের সবুজে নেচে উঠত মন। গ্রামীণ শারদোৎসবের আসন্ন আনন্দে মুখর হয়ে উঠত চারপাশ। এবার সেই চিত্র অদৃশ্য পটাশপুর ও ভগবানপুরের বন্যাকবলিত এলাকায়। মুখে হাসি নেই বানভাসি মানুষদের। এবারের পুজো তাঁদের কাছে আশঙ্কা আর অভাবের দিনলিপি।

যতদূর চোখ যায়, শুধু জল আর জল। কেলেঘাই নদীর বাঁধভাঙ্গা প্লাবনে গৃহহীন হাজার হাজার মানুষ। এখন তাঁদের অস্থায়ী ঠিকানা ত্রাণ শিবির। কারও বা বাস উঁচু পাকা রাস্তার উপর একচিলতে ত্রিপলের নীচে। গরু, ছাগল ও আরও নানা গৃহপালিত পশু নিয়ে এককোমর জল ঠেলতে ঠেলতে চলছে সংসার। সরকার ও বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার ত্রাণই এখন তাঁদের পরিত্রাণের উপায়।

কয়েক দিন হাবুডুবু দশার পরে এখন জলস্তর কিছুটা কমলেও অধিকাংশ বাড়ি এখনও এক হাঁটু জলের তলায়। জল নামা শুরু হতেই হুড়মুড়িয়ে ভাঙছে কাঁচা বাড়িগুলি। জলবন্দি হয়ে অনেকে বাড়ির চালের উপরে থেকে ঘর আগলে রেখেছেন। সম্পূর্ণ জল নামলে আরও বাড়ি ভেঙে পড়বে। সব মিলিয়ে পুজোর মুখে রীতিমতো আশঙ্কায় মুমূর্ষু বানভাসিরা।

পঞ্চমীতে ঘনাবে নিম্নচাপ! পুজোর এই দিনগুলোতে ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি নামবে

এই কঠিন সময়ে গ্রামবাসীদের লড়াইয়ের দিকে যুগ্মভাবে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে কাঁথির সাংবাদিকদের সংগঠন ‘প্রেস রিপোর্টার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন’ এবং সমাজসেবী সংস্থা ‘লায়নস ক্লাব অফ নয়াপুট শৌলা’। পটাশপুরের তালছিটকিনি গ্রামে, যেখানে কেলেঘাই নদীর বাঁধ ভেঙেছে, তার কাছেই রয়েছে রাধাকৃষ্ণ মন্দির। বুধবার সেই মন্দিরে এই দুই সংস্থার সদস্যরা বানভাসিদের মঙ্গলকামনায় পুজো দেন ও প্রার্থনা করেন। তার পরে গ্রামে রান্না করে ঠাকুরের সেই তরকারি ও অন্নভোগ দু’হাজার গ্রামবাসীদের মধ্যে বিতরণ করা হয়। স্থানীয় রামখালি, ভগবানপুর, সরিদাসপুর, আমগেছিয়া, ডাকবাংলো কলোনি, পাঁচুড়িয়া ও ধকড়াবাঁকা গ্রামের বাসিন্দারা সেই অন্নভোগ গ্রহণ করেন। প্লাবিত গ্রামগুলোর এখন অন্যতম সমস্যা পানীয় জল। দুই উদ্যোক্তা সংস্থা সে কথা বিবেচনা করে এদিন আড়াই হাজার গ্রামবাসীর পানীয় জলের ব্যবস্থাও করেন।

অনিশ্চিত পুজোর মুখে, কঠিন পরিস্থিতিতে উদ্যোক্তা সংস্থাদের এই সেবামূলক কর্মসূচি বানভাসি গ্রামগুলিতে বেশ সাড়া ফেলেছে। উদ্যোক্তা সংস্থাদুটির বক্তব্য, তাঁরা সারা বছরই সংবাদ পরিবেশনের পাশাপাশি নানা সমাজসেবামূলক কাজের সঙ্গে যুক্ত থাকেন। এইবার নিজেদের জেলায় এমন বানভাসি পরিস্থিতিতে মানুষের জন্য কিছু সাহায্য করার চেষ্টা করেছেন।

পটাশপুর ১ পঞ্চায়েত সমিতির সহ সভাপতি পীযুষকান্তি পণ্ডা বলেন, বানভাসি মানুষদের কাছে এখন অন্ন ও পানীয় জলের সংস্থান বড় বিষয়। দুই উদ্যোক্তা সংস্থা পুজোর মুখে সেই চাহিদা কিছুটা পূরণ করেছে।

তবে আদতে মন ভাল নেই বানভাসি পটাশপুর ও ভগবানপুরের বাসিন্দাদের। মহালয়ার পরেও আকাশের মুখ ভার। বেশ কয়েক পশলা বৃষ্টিও হয়ে চলেছে। গ্রামের পর গ্রাম ডুবে যাওয়া ধানক্ষেত, ভেসে যাওয়া পুকুর, জলমগ্ন কাঁচা বাড়িগুলি যেন জল-যন্ত্রণার চালচিত্রের মতো ফুটে উঠছে আশ্বিনের শারদপ্রাতে।

পড়ুন দ্য ওয়ালের সাহিত্য পত্রিকাসুখপাঠ

You might also like