
‘নীল রঙে মিশে গেছে লাল’, নীলাভ ঔজ্জ্বল্য কমছে পৃথিবীর, কারণটা কি জলবায়ু বদল?
আর কয়েক বছর পরে হয়ত সত্যিই রঙ বদলে যাবে পৃথিবীর (Earth)। নীল রঙে লালই মিশে যাচ্ছে। এই লাল হল জলবায়ু বদলের ভ্রূকুটি। পৃথিবীর সেই স্নিগ্ধ কিন্তু উজ্জ্বল নীলাভ জ্যোতি ধীরে ধীরে মিলিয়ে যাচ্ছে। আমাদের নীল গ্রহকে ঘিরে যে দ্যুতি বিচ্ছুরিত হত, এখন তা নিভে যাচ্ছে আস্তে আস্তে। ২০ বছর আগের পৃথিবীর সে রঙরূপ আর নেই, এমনটাই জানাচ্ছেন গবেষকরা।
জিওফিজিক্যাল রিসার্চ লেটারে সম্প্রতি একটি গবেষণাপত্র ছাপা হয়েছে। সেখানে গবেষকরা বলছেন, পৃথিবীর নীলাভ রঙের চাকচিক্য স্তিমিত হচ্ছে ক্রমশ। মহাশূন্যে পৃথিবী একসময় জ্বলজ্বল করত, তার নীলাভ দ্যুতি ছড়িয়ে পড়ত চারদিকে। এখন পৃথিবীর প্রতি বর্গমিটারে হাফ ওয়াটেরও কম আলো বিচ্ছুরিত হয়। ফ্যাকাশে হচ্ছে পৃথিবীর পৃষ্ঠদেশ। সাগর-মহাসাগরের নীল রঙের প্রলেপে দূষণের ধূসর ছাপ পড়ছে। গত দুই শতাব্দী ধরে পরিবেশ দূষণ কুড়ে কুড়ে খেয়েছে পৃথিবীর মাটি, বায়ুমণ্ডল ও জলভাগকে। তারই পরিণাম বড় ভয়ঙ্কর হয়ে দেখা দিচ্ছে।
পৃথিবীর ঔজ্জ্বল্যের কারণ হল সূর্য থেকে আসা দ্যুতি এবং পৃথিবী থেকে প্রতিফলিত আলো। এই দুইয়ের মাত্রাই কমেছে। এর কারণ হল, সাগর-মহাসাগরের তাপমাত্রা বাড়ছে। পৃথিবীর পরিমণ্ডলও উত্তপ্ত হচ্ছে। বাড়ছে গ্রিন হাইস গ্যাসের দাপট। তাই আলো প্রতিফলন কমে যাচ্ছে।
রূপ হারাচ্ছে পৃথিবী, ছাড়খাড় করছে উষ্ণায়ণ
সারা পৃথিবীর গবেষক, পরিবেশবিদরাই দুঃসংবাদ দিচ্ছেন। আর কয়েক বছর পরে হয়ত ওই নীল আকাশ, নীল সমুদ্র আর থাকবে না। বদলে যাবে সাগর-মহাসাগরের রঙ, আমাদের নীল গ্রহ দূষণের কালো ছায়ায় ঢেকে যাবে।
গবেষকরা বলছেন, সমুদ্রের জলের উষ্ণতা বাড়ছে। ফলে সাগরের বাস্তুতন্ত্র ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। সামুদ্রিক ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র জীব ফাইটোপ্ল্যাঙ্কটনরা সূর্যের বর্ণালীর এক একটা রঙকে শুষে নিতে পারে। যে ফাইটোপ্লাঙ্কটনরা নীল রঙ শুষে নেয় বলে সাগর, মহাসাগরের রঙ নীল হয়, উষ্ণায়নের দৌলতে সেই প্রজাতি যদি অন্য প্রজাতিতে বদলে যায়, তা হলে তারা আর নীল রঙ শুষে নিতে পারবে না। ফলে, সাগর, মহাসাগরের রঙ তখন বদলে যাবে।
তাছাড়া জলবায়ু বদলের আরও প্রভাব আছে। থিবীর তাপমাত্রা যেভাবে বেড়ে চলেছে তাতে বিপর্যয়ের আর বেশি দেরি নেই। জলবায়ু বদলের আরও একটা ভয়াবহ প্রভাব পড়ছে পৃথিবীর বাস্তুতন্ত্রে। ‘ইন্টারগভর্নমেন্টাল প্যানেল অন ক্লাইমেট চেঞ্জ’ (আইপিসিসি) রিপোর্ট দিয়েছে, পৃথিবীর তাপমাত্রা আরও ১.৫ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড বাড়তে পারে। তাপমাত্রার বদল হলে এর জের পড়বে সমুদ্রের বাস্তুতন্ত্রেও। বাতাসে কার্বন-ডাই-অক্সাইডের পরিমাণ বাড়ছে, বিষাক্ত গ্যাসে ছেয়ে যাচ্ছে পরিবেশ তার থেকেই অনুমান করা যায় ২১০০ সালের মধ্যে জলবায়ুর পরিবর্তন পাঁচ গুণ বেশি বিপর্যয় নিয়ে আসবে পৃথিবীতে। আন্টার্কটিকায় বরফ গলতে শুরু করেছে। পশ্চিম আন্টার্কটিকায় উপকূল বরাবর দুই বিশাল হিমবাহে ভাঙন ধরেছে বলে সতর্ক করেছেন বিজ্ঞানীরা। ইতিমধ্যেই হিমবাহ ভেঙে সমুদ্রের জলস্তর বেড়েছে। বিশাল দুই হিমবাহ পুরোপুরি গলতে শুরু করলে সমুদ্রের জলস্তর ৫ শতাংশ অবধি বাড়তে পারে বলেও মনে করছেন বিজ্ঞানীরা।
গবেষকরা বলছেন, ভাইরাসের সংক্রমণ রোখা যাবে, কিন্তু প্রকৃতির রোষ থেকে বাঁচার কোনও উপায় নেই। গ্রিন হাউস গ্যাসের পরিমাণ বাড়ছে। প্রচণ্ড তাপপ্রবাহ ক্রমেই এগোচ্ছে গ্রিনল্যান্ডের দিকে। দাবানলের আঁচে পুড়ে ছাই উত্তর সাইবেরিয়া, উত্তর স্ক্যান্ডিনেভিয়া, আলাস্কা, গ্রিনল্যান্ড, মেরুপ্রদেশের একটা বিশাল অংশ। ক্যালিফোর্নিয়ার দাবানলের আঁচ পড়েছে সেখানকার পরিবেশে। ধোঁয়া আর ছাইতে আকাশের রঙই বদলে গেছে। আগুনের ফুলকি ছুটছে বাতাসে। তীব্র গরমে বিপজ্জনক ভাবে গলতে শুরু করেছে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম হিমবাহ। এইভাবে হিমবাহের গলন শুরু হলে জলে ডুববে স্থলভাগ, সচেতন না হলে ২০৫০ সাল নাগাদ মানবজাতির একটা বড় অংশই নিশ্চিহ্ন হয়ে যেতে পারে।