
দ্য ওয়াল ব্যুরো: কলকাতা ময়দানের মিডিয়া মহল তাঁকে ডাকত আলেক্স ফার্গুসন নামে। আধুনিক ফুটবল নিয়ে দারুণ পড়াশুনো করতেন সুভাষ ভৌমিক। দলকে তিনি ৩-৫-২ ছকে খেলিয়েছেন, মিডফিল্ডকে সাজাতেন জমাটভাবে। কোচ হিসেবে তিনি মনে করে এসেছেন একটি দলের মাঝমাঠই হল ভরসাস্থল।
নামী তারকা ছিলেন। বারবার সুভাষ বলতেন, আমরা যখন ইস্টবেঙ্গল মাঠ থেকে জিতে বাড়ি ফিরতাম, সেইসময় সমর্থকদের কালো মাথায় ঢাকা থাকত। বহুবার তাঁদের কাঁধে চড়ে আকাশবানী পর্যন্ত গিয়েছি। মোহনবাগানেও তিনি সফল, যদিও সব মনপ্রাণ জুড়ে থাকত ইস্টবেঙ্গল।
সেই ক্লাবের হয়ে একের এক সাফল্য, প্রথমে ফুটবলার হিসেবে, পরে কোচ হয়ে। কিংবদন্তি তারকা হয়েও জাতীয় পুরস্কার পাননি। তিনি পাননি অর্জুন পুরস্কারও, এই আক্ষেপ তাঁকে বয়ে বেড়াতে হয়েছে জীবনের শেষদিন পর্যন্ত। বলতেন, ‘‘আমি তো সকলের কাছে ব্যাড বয়, আমাকে কেন অর্জুন দেবে বলতে পারেন? আমি সমর্থকদের থেকে যা পেয়েছি, তা এই পুরস্কার কিংবা স্বীকৃতির থেকে কম কিছু ছিল না।’’
সুভাষের মৃত্যুতে তাঁর সমসাময়িক ফুটবলাররা স্মৃতি রোমন্থনে গা ভাসিয়েছেন।
সুব্রত ভট্টাচার্য: ভৌমিকদা বড় মাপের ফুটবলার ছিলেন। তাঁর না থাকা মেনে নেওয়া যাচ্ছে না। ফুটবল জগতের বিশাল ক্ষতি হয়ে গেল। আমি যে সুব্রত হতে পেরেছি, তার জন্য ওঁর অনেক অবদান।
গৌতম সরকার: সুভাষ ছিলেন কিংবদন্তি, অথচ কোনও জাতীয় স্তরের স্বীকৃতি পায়নি, এই দুঃখ আজীবন বয়ে বেড়াবে। সুভাষের মতো ফুটবলারদের মৃত্যু হয় না। সুভাষ বেঁচে থাকবেন ফুটবল প্রেমীদের হৃদয়ে।
শ্যাম থাপা : সুভাষ ও আমি ছিলাম সমসাময়িক। ভারতীয় দলের হয়ে হোক কিংবা ইস্টবেঙ্গল ক্লাব, ও থাকত আমার রুমমেট। আমার প্রিয় বন্ধু ছিল, কিন্তু যে স্বীকৃতি পাওয়ার কথা ছিল, সুভাষ সেটি পায়নি।
মোহনবাগানের কর্তা দেবাশিস দত্ত জানিয়েছেন, ‘‘সুভাষদা-র ম্যান ম্যানেজমেন্ট এবং প্রশাসনিক ক্ষমতা অতুলনীয় ছিল। বড় মনের মানুষ ছিলেন, এত দ্রুত চলে যাবেন ভাবিনি। তবে যেখানেই যান, উনি সকলের মাঝে বেঁচে থাকবেন। ওঁকে কেউ বদলাতে পারবে না। ওঁর সব থেকে বড় গুণ নিজস্বতা। ’৭০-এর দশকে অনেক ফুটবলারই ছিল। কিন্তু উনি একটু ভিন্ন ছিলেন।”
সুভাষের মৃত্যুতে শোকবার্তা পাঠিয়েছে সর্বভারতীয় ফুটবল সংস্থাও। প্রেসিডেন্ট প্রফূল প্যাটেল বিবৃতিতে বলেছেন, ‘‘নিজের প্রজন্মের সেরা ফুটবলার সুভাষদা আর নেই, এটা শুনে অত্যন্ত দুঃখিত। ভারতীয় ফুটবলে ওঁর অবদান ভোলার নয় এবং কোনওদিন ভোলা যাবে না। উনি চিরকাল আমাদের মধ্যেই থাকবেন। ভারতীয় ফুটবল আরও এক নক্ষত্রকে হারাল।’’