Latest News

সিপিএম চায় নওসাদ জেলে থাকুক, বিস্ফোরক ত্বহা, ‘দালাল’ বলে পাল্টা খোঁচা সেলিমের

রফিকুল জামাদার

একটা সময়ে রাজনীতির ভালমন্দ, সংখ্যালঘুদের অধিকার, কোন দল কতটা ভাল করতে পারে—এইসব নিয়ে ফুরফুরা শরিফের মুখ হয়ে গরম গরম কথা বলতেন পীরজাদা ত্বহা সিদ্দিকি (Twaha Siddiqui)। কিন্তু বেশ কয়েক বছর হল, এই হুজুর যেন কিছুটা চুপ করে গিয়েছেন। এখন তেমন মিডিয়ার সামনেও মুখ খোলেন না। তবে আইএসএফ বিধায়ক তথা পীরজাদা নওসাদ সিদ্দিকির (Nawsad Siddique) জামিন না পাওয়া নিয়ে দ্য ওয়াল-এর কাছে বিস্ফোরক দাবি করলেন ত্বহা।

নওসাদ ইতিমধ্যে ১০ দিন পুলিশ হেফাজতে থেকেছেন। তাঁকে আরও ১৫ দিনের জন্য জেল হেফাজতে পাঠানোর ব্যাপারে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন ফুরফুরার হুজুর। দ্য ওয়াল-এর প্রশ্নের জবাবে ত্বহা বলেন, ‘মনটা ভাল নেই। তবে আমি শুনেছি গতকালই নওসাদের জামিন হয়ে যেত। কিন্তু সিপিএমের জন্য হয়নি। ওরা চায় না নওসাদের জামিন হোক। ওরা আসলে রাজনৈতিক ফায়দা নিতে চায়।’

সিপিএম কী করল? এ ব্যাপারে স্পষ্ট বক্তব্য ত্বহার। তাঁর কথায়, “বুধবার আদালত চত্বরে যেভাবে ভিড় করে হুজ্জুতি পাকিয়েছিল সিপিএমের লোকজন, আমি মনে করি সেই কারণেই নওসাদদের জামিনটা হল না।’

ত্বহার এ হেন অভিযোগের জবাব দিয়েছেন সিপিএম রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম। এদিন দ্য ওয়ালকে সেলিম বলেন, ‘লোকে বুঝতে পারছে ত্বহা কার হয়ে কথা বলছেন, কার ঝোল টানছেন। আমি বাড়তি কিছু বলব না। উনি শুধু যদি একটু বলে দেন কবে থেকে কেন্দ্র আর রাজ্যের শাসকদলের দালালি করা ছেড়ে দেবেন তাহলে মানুষের ভাল হবে।’

ত্বহাকে প্রশ্ন করা হয়, নওসাদকে ভিতরে রেখে সিপিএমের ফায়দাটা কী? এ ব্যাপারে ফুরফুরার এই হুজুরের বক্তব্য, ‘ওদের ফায়দা আছে। নওসাদ জেলে থাকলে সিপিএম ওটাকে ইস্যু করে পলিটিক্যাল মাইলেজ পেতে চাইছে।’

এক্ষেত্রেও পাল্টা জবাব দিয়েছেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক। মহম্মদ সেলিম বলেন, ‘যত উনি সিপিএম দেখতে পাচ্ছেন তত বেশি মানুষ ওঁকে মুকুল রায়, শুভেন্দু অধিকারী আর ববি হাকিমের প্রতিনিধির চেহারায় দেখতে পাচ্ছেন।’

ত্বহার কথায়, তাঁর মন খারাপ হলেও তিনি নওসাদের বিষয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বা ববি হাকিমের সঙ্গে কথা বলতে পারছেন না। পীরজাদা বলেন, ‘আমি এখনও মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কোনও কথা বলিনি। ববি হাকিমের সঙ্গেও না। কারণ নওসাদ রাজনীতির জামা পরে নিয়েছে। ফুরফুরা শরিফে যা কোনওকালে ছিল না। আমাদের ফুরফুরা শরিফে পলিটিক্যাল জামা চলে না। ও জামা না পরলে আমি পাশে থাকতাম। দেখে নিতাম কীভাবে ওকে জেলে ঢোকাত।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমি সেই সময়ে নওসাদকে বারণ করেছিলাম যে, এগুলো কোরো না। রাজনীতিতে যেও না। শোনেনি।’

এ প্রসঙ্গে হুগলি জেলা সিপিএমের এক নেতা বলেন, ‘ত্বহা একটা কথা ঠিকই বলেছেন। একথা ঠিক, ফুরফুরা শরিফে কখনও রাজনীতি ছিল না। রাজনীতির স্বার্থে কখনও ধর্মস্থান ব্যবহৃত হয়নি। কিন্তু জার্সি ছাড়া সেই কাজটা শুরু করেছিলেন ত্বহা নিজে। রাজনীতিতে এসে নওসাদ সেই সুবিধাবাদী অবস্থানকেই চ্যালেঞ্জ করে দিয়েছেন। তাই এইসব বলছেন।’

ভাঙড়ের ঘটনার আঁচ এসে পড়েছিল কলকাতার প্রাণকেন্দ্র ধর্মতলায়। সেখানে অশান্তির ঘটনা থেকেই নওসাদ-সহ বাকিদের গ্রেফতার করে লালবাজার। তারপর ফুরফুরার অন্য অনেক পীরজাদা নিজেদের মধ্যে বৈঠক করে রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিয়েছিলেন। কাশেম সিদ্দিকি সংবাদমাধ্যমের সামনে বলেছিলেন, কলকাতা অচল করে দেবেন। দেখে নেবেন কত পুলিশ রয়েছে।

যাঁরা রাজ্য সরকারের উদ্দেশে এই হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তাঁদেরও সমালোচনায় মুখর হয়েছেন ত্বহা। তিনি বলেন, ‘ফুরফুরার হাতে গোনা দু’একজন খুব বাজে কথা বলছেন। ভুলভাল কথা বলছেন। এগুলো ঠিক নয়। এমনকি যারা পীরের আওলাদ নয় তারাও কেউ কেউ পীরের আওলাদ বলে জাহির করছে। সভা করে মঞ্চে বক্তব্য রাখছে। এগুলো ঠিক নয়। অবশ্য এজন্য ফুরফুরা শরিফ সম্পর্কে মানুষের বিশ্বাস উঠে যাবে বলে মনে করি না।’

পর্যবেক্ষকদের অনেকের মতে, ত্বহা যে সময়ে তৃণমূলের সেকেন্ড ইন কম্যান্ড মুকুল রায়ের সঙ্গে সখ্য রাখতেন সেই সময়ে ফুরফুরায় রাজনৈতিক বিভাজন ছিল। বড় হুজুর ইব্রাহিম সিদ্দিকিরা কখনওই ত্বহার ভূমিকা মেনে নেননি। একটা সময়ে দেখা যেত উরস উৎসবে ত্বহার বাড়িতে মুকুল রায় যাচ্ছেন তো ইব্রাহিমের বাড়িতে গিয়ে লুচি মাংস খাচ্ছেন বিমান বসু। কিন্তু ইদানীং তা প্রকট হয়ে দাঁড়িয়েছে। সেইসঙ্গে এও স্পষ্ট, রাজনীতির কারণেই পীরজাদা ত্বহা এবং বিধায়ক নওসাদের জন্য ঐক্যবদ্ধ নয় ফুরফুরা শরিফ। ফাটলটা স্পষ্ট।

বাঁশ, লাঠি নিয়ে সিপিএমের সভায় তৃণমূলের হামলার অভিযোগ! কোচবিহারে ছড়াল উত্তেজনা

You might also like