
এরই মাঝে চাঞ্চল্যকর তথ্য দিল ‘স্ট্র্যান্ডেড ওয়ার্কার্স অ্যাকশন নেটওয়ার্ক’-এর একটি সমীক্ষার রিপোর্ট। তাদের দাবি, ২৬শে এপ্রিল পর্যন্ত সারা দেশের অভিবাসী শ্রমিকদের মাত্র ৬% শ্রমিক মাইনে পেয়েছেন। দেশের বাকি ৯৪ শতাংশ ভিন রাজ্যবাসী শ্রমিকের কাছে প্রাপ্য বেতনের পুরো টাকাটুকুও পৌঁছয়নি। কেউ আবার কিছুই পাননি।
করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোখার জন্য মার্চ মাসের শেষের দিকে দেশজুড়ে লক ডাউনের ঘোষণা করা হয় সরকারের তরফে। তখনই কেন্দ্র, রাজ্য সরকার ও প্রতিটি প্রশাসনিক দফতরের তরফে মালিকপক্ষদের অনুরোধ জানানো হয়েছিল কোনও কর্মচারী, শ্রমিকের মাইনে বাকি না রাখার জন্য। তবে কার্যত যে তা হয়নি, তার প্রমাণ অনেক ক্ষেত্রেই পাওয়া গেছে। এবার জানা গেল বেতনহীন পরিযায়ী শ্রমিকদের কথাও।
আরও পড়ুন: ঢালাই মেশিনের ভিতর ১৮ জন শ্রমিক, ইন্দোর থেকে লখনউয়ে বাড়ি ফেরার পথে আটক
স্ট্র্যান্ডেড ওয়ার্কার্স অ্যাকশন নেটওয়ার্ক সংগঠনের তরফে প্রায় এগারো হাজার পরিযায়ী শ্রমিকের ওপর সমীক্ষা চালানো হয়। তাতেই জানা গেছে, পুরো বেতন পাওয়া শ্রমিকের সংখ্যাটা মাত্র ৬%! আরও অবাক করা তথ্য, এই ১১ হাজার শ্রমিকের মধ্যে ৭৮% শ্রমিক কিছুই পাননি। বাকিরা পেয়েছেন আংশিক।
সমীক্ষার আওতায় আসা এই শ্রমিকদের ৬০% দিনমজুর বলে জানিয়েছে ওই রিপোর্ট। তাঁরা প্রতিদিনের কাজ হিসেবে কারখানায় বা অন্য কোনও ইন্ডাস্ট্রিতে কায়িক শ্রমদানের কাজ করেন। ১১% শ্রমিক গাড়ির চালক ও গৃহপরিচারকের কাজ করেন। ১৬% বিভিন্ন অসংগঠিত ক্ষেত্রে ছোটখাটো কাজ করেন। এদের প্রত্যেকের দিনের আয় গড়ে ৩০০ টাকার কিছু বেশি।
সংগঠনের পক্ষ থেকে এই রিপোর্টে আরও জানানো হয়েছে, ১৪ই এপ্রিল পর্যন্ত এদের ৮৭% এর কাছে একটা কানাকড়ি পর্যন্ত পৌঁছয়নি। ১৩% শ্রমিক অল্প কিছু বেতন জোগাড় করতে পেরেছেন, যা ২৬ এপ্রিল পর্যন্ত ১৬ শতাংশে গিয়ে পৌঁছায়। অনেক শ্রমিক অভিযোগ করেছেন তাঁরা এপ্রিল মাসের মাইনেই পাননি। এমনকি পৌঁছয়নি প্রয়োজনীয় রেশনটুকুও।
যাঁরা বেতন পেয়েছেন, তাঁদের মধ্যেও অনেকেই দুশ্চিন্তায় আছেন। কারণ তাঁরা আশঙ্কা করছেন এই লকডাউনে কর্মহীন থাকার জন্য পরে তাঁদের মাইনে কাটা যেতে পারে।
প্রসঙ্গত, আজ, শনিবারই সকালে খবর মিলেছে দিল্লি থেকে হেঁটে ফিরতে গিয়ে ট্রাকের চাকায় পিষে গিয়েছেন তিন শ্রমিক। মহারাষ্ট্র থেকে উত্তরপ্রদেশে সাইকেলে করে ফিরতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন আরও এক জন।
এই পরিস্থিতিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের তরফে পরিযায়ী শ্রমিকদের ঘরে ফেরার জন্য বাস, ট্রেনের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। দেরিতে হলেও ফিরতে পারবেন কিছু শ্রমিক। কিন্তু ওই সংস্থার রিপোর্ট এ-ও বলছে, যে অনেক শ্রমিকই অভিযোগ করছেন তাঁদের শহরাঞ্চলে থাকার জন্য বাধ্য করা হচ্ছে। ভয় দেখানো হচ্ছে, চলে গেলে আর কাজ থাকবে না বা মাইনে পাবেন না।
এর মধ্যেই দেশে লকডাউন তৃতীয় পর্যায়ে ১৭ই মে পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। করোনা সংক্রমণ রুখতে এটা প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। যদিও লকডাউন অবস্থাতেও দেশে এখনও পর্যন্ত এই মাহামারীতে মারা গেছেন ১২১৮ জন। ফলে লকডাউন আরও বাড়তে পারে বলেই আশঙ্কা সব মহলেই।
এই অবস্থায় যদি দেশজুড়ে থাকা শ্রমিকদের খাদ্য ও আর্থিক সুরক্ষা নিশ্চিত না করা হয় তাহলে করোনায় না হলেও, খাবারের অভাবে দেশের একটা বড় অংশ বিপদের মুখে পড়বে। এমনটাই আশঙ্কা করছেন অনেকে। সাম্প্রতিক রিপোর্ট সেই আশঙ্কাকেই বাড়িয়ে দিচ্ছে।