
এই ঘোষণাতেই বিপদে পড়েছেন চিকিৎসকরা। উপসর্গ লুকিয়ে বা মিথ্যে বলে পরীক্ষা দিতে গেলে, ধরা পড়লে আইনি সাজা হবে বলে জানানো হয়েছে। শুধু চিকিৎসকরা নন, পোস্ট গ্র্যাজুয়েট পরীক্ষা দেবেন এমন নার্সদেরও একই অবস্থা। এমডি, এমএস, ডিএম এবং এমসিএইচ– এই প্রতিটি কোর্সেরই পরীক্ষা দেওয়া হবে না দেশের অসংখ্য জুনিয়র ডাক্তার, হাউস স্টাফ এবং ইন্টার্ন চিকিৎসকের।
দেশের ১৫০টি সেন্টারে এই পরীক্ষা হয় প্রতি বছর। কিন্তু এই বছর কিছু বিশেষ নির্দেশিকা জারি হয়েছে, ১১ জুনের আসন্ন পরীক্ষার জন্য। তাতেই বলা হয়েছে, উপসর্গহীন পরীক্ষার্থীরাই পরীক্ষা দিকে পারবেন। কোনও কোভিড রোগীর সংস্পর্শে না আসা নিয়েও মুচলেকা দিতে হবে তাঁদের। কেউ মিথ্যে বলেছেন বলে জানা গেলে আইনি পদক্ষেপ করা হবে তাঁর বিরুদ্ধে।
তথ্য বলছে, এই নির্দেশিকা মানতে গেলে মোট পরীক্ষার্থীর ৭০ শতাংশই এইমসের স্নাতকোত্তর পরীক্ষা বসতে পারবেন না। কারণ দেশের সমস্ত প্রান্তের প্রায় প্রতিটি হাসপাতালে জুনিয়র চিকিৎসক, ইন্টার্ন, হাউস স্টাফরা নিত্য করোনা ওয়ার্ডে ডিউটি করছেন, রোগীদের সংস্পর্শে আসছেন। বহু চিকিৎসক ইতিমধ্যেই কোভিডে আক্রান্তও হয়েছেন। এই পরিস্থিতিতে পরীক্ষা পিছোনোর দাবি করেছেন অনেকেই।
দিল্লির বৈভব ত্রিবেদী নামের এক চিকিৎসক সংবাদমাধ্যমকে বলেন, “এটা কি ঠিক হচ্ছে? আমি মানুষের জন্য সেবা করছি, তার এই প্রতিদান? একদিকে চিকিৎসকদের হিরো বানানো হচ্ছে, ফুল দিয়ে পুজো করা হচ্ছে, অন্য দিকে এটা কী? তাদের পরীক্ষাই দিতে দেওয়া হবে না!” গুড়গাঁওয়ের রচিত সিঙ্ঘানিয়ার কথায়, “আমরা যারা কোনও উপসর্গহীন, তারাও নিজেদের অজান্তেই বহন করতে পারি রোগের জীবাণু। পরীক্ষাকেন্দ্রে সেক্ষেত্রেও সংক্রমণ ছড়াতে পারে। ফলে এই পরিস্থিতিতে পরীক্ষা পিছোনোই ঠিক হতো।”
শুধু তাই নয়, সারা দেশে যেহেতু এখনও গণপরিবহণ চালু হয়নি, ফলে পরীক্ষাকেন্দ্রে পৌঁছনোই দায় হবে অনেকের পক্ষে। এমনও উদাহরণ রয়েছে, এক রাজ্যের পরীক্ষার্থীকে পরীক্ষা দিতে যেতে হবে অন্য রাজ্যে। কয়েকশো কিলোমিটারের দূরত্ব। প্রশ্ন উঠেছে, সেক্ষেত্রে কীভাবে পরীক্ষা দেওয়া সম্ভব? গাড়ি করে আসা তো সকলের পক্ষে সম্ভব নয়। এছাড়াও বহু পরীক্ষার্থীর বাড়ি কনটেনমেন্ট জ়োনের আওতায়। পরীক্ষার্থীদের মধ্যে অনেকেই কোয়ারেন্টাইনে। এই সব মিলিয়ে পরীক্ষা স্থগিত করার দাবিই জোরদার হয়েছে।
এইমসের ডিরেক্টর, ডক্টর রণদীপ গুলেরিয়া জানিয়েছেন, পরীক্ষা স্থগিত করার কোনও উপায় নেই। তার ওপর করোনা সংক্রমণ এখন যে পর্যায়ে রয়েছে, তাতে আরও দু’-তিন মাসের আগে পরিস্থিতি স্বাভাবিক নাও হতে পারে। সেক্ষেত্রে গোটা শিক্ষা বৎসর নষ্ট হয়ে যাবে। এইমসের আর এক চিকিৎসক আকাশ প্রতাপ সিং দাবি করেন, যাঁরা কোভিড রোগীদের সংস্পর্শে এসে চিকিৎসা করছেন, তাঁরা সত্যিটা বললে তাঁদের আলাদা রুমের ব্যবস্থা করা হবে পরীক্ষা দেওয়ার।