
দ্য ওয়াল ব্যুরো: একুশের ভোটের আগে সোমবার বিশিষ্ট ক্রীড়াবিদদের সম্মানিত করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এ ব্যাপারে এদিন নেতাজি ইনডোর স্টেডিয়ামে একটি অনুষ্ঠান ছিল।
মুখ্যমন্ত্রী সেখানে বলেন, “ক্লাবগুলোকে কেন হেল্প করা হবে, তা নিয়ে অনেক বাবুদের রাগ আছে। আমি বলি, ক্লাবগুলোকে হেল্প করলে রাগের তো কারণ থাকতে পারে না। এই ক্লাবগুলো বিপদে আপদে মানুষের পাশে থাকে। কখনও একটু ক্যারাম খেলে, কখনও ফুটবল খেলে, কখনও দৌড়য়, কখনও রক্তদান শিবির করে, কখনও বসে আঁকো প্রতিযোগিতা করে।” মুখ্যমন্ত্রী জানান, গত তিন বছরে ২৬ হাজার ক্লাবকে ১ লক্ষ টাকা করে দিয়েছে রাজ্য সরকার।
আরও পড়ুন: ‘মিষ্টি হাব’ চলেনি, বাতাসা, কদমার উৎপাদন কেন্দ্র ঘোষণা মমতার, সঙ্গে বহু শিল্প পার্ক
যার মানে, তীব্র অর্থ সংকট সত্ত্বেও ক্লাবগুলির প্রতি সরকার সহানুভূতিশীল। তিন বছরে মোট ২৬০ কোটি টাকা ক্লাবগুলোর জন্য খরচ করেছে নবান্ন। এ ছাড়া পুজো বাবদ চাঁদা তো রয়েছেই। প্রথমে ১০ হাজার টাকা করে ২৭ হাজার ক্লাবকে চাঁদা দিত তৃণমূল সরকার। পরে তা বেড়ে হয় ২৫ হাজার। আর এবার কোভিডের পরিস্থিতিতে রাজ্যের রাজকোষ হাতড়ে যখন কানাকড়ি তুলে আনতে হয়েছে, সেই পরিস্থিতি রেকর্ড ৫০ হাজার টাকা করে ক্লাবগুলোকে টাকা দিয়েছে নবান্ন। পুজোতে প্রায় ২৭-২৮ হাজার ক্লাবকে সেই টাকা দেওয়া হয়েছে। মমতার কথায়, দুর্গাপুজোর সময়ে ৫০ হাজার টাকা করে দিয়েছি, কারণ কোভিডের সময়ে ওদের কাছে টাকা ছিল না।
কোভিডের সময়ে ক্লাবগুলো চাঁদা তুলে গরিব মানুষের পাশে দাঁড়াবে সেটাই দস্তুর। কিন্তু তৃণমূল জমানায় সরকারের টাকায় ক্লাব দাঁড়াবে—এমন উলোটপুরান নিয়ে সমালোচনা করেছিলেন বিরোধীরা।
আরও পড়ুন: ‘জলশ্রী’র উদ্বোধন করলেন মমতা, সেটা কী, কোথায়, তাতে কী হবে
তবে সেই সমালোচনায় সরকারের পরোয়া নেই। পর্যবেক্ষকদের মতে, চৌখস রাজনীতিক মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঠিক যেভাবে সমাজের বিভিন্ন স্তরে উপভোক্তা শ্রেণি তৈরি করতে চেয়েছে, এটা সেই বৃহত্তর পরিকল্পনারই অঙ্গ বলে ধরা যেতে পারে। ২৬ হাজার ক্লাবের প্রতিটিতে যদি একশ জন করে সদস্য থাকেন, তা হলে মোট ২৬ লক্ষ সদস্য হয়। বাংলায় মোট ভোটার আট কোটি হলে তার ৩ শতাংশ।
অতীতে বাম জমানায় পাড়ায় পাড়ায় ক্লাবের উপর লোকাল কমিটির নিয়ন্ত্রণ ছিল। বহু ক্লাবের মাথা, মুরুব্বিরা ছিলেন পার্টির কার্ড হোল্ডার বা হোলটাইমার। আর তার মাধ্যমে মতাদর্শগত প্রভাব বিস্তারেরও চেষ্টা হত। অনেকের মতে, তৃণমূলের সে অর্থে কোনও সুনির্দিষ্ট মতাদর্শ নেই। কখনও তারা সাম্প্রদায়িক শক্তির সঙ্গে থেকেছে, কখনও তার বিরোধিতা করছে, কখনও বাইরে বিরোধিতা দেখিয়ে তলে তলে আঁতাত করেছে। ক্লাবগুলির উপর শাসক দলের প্রভাব বহু ক্ষেত্রে অর্থের সম্পর্কের উপর টিকে রয়েছে। সেই কারণেই হয়তো বারবার অনুদান ঘোষণা করে তাদের পাশে রাখার চেষ্টা করা হয়। আজ তাদের মনে করিয়ে দেওয়া হল, এই সরকার কিন্তু তাদের পাশে ছিল।