
আজ, সোমবার হুগলির পুরশুড়ায় সভা করতে গিয়ে বক্তৃতা দেওয়ার সময়ে বিজেপির বিরুদ্ধে আক্রমণ শানান তিনি। তিনি স্পষ্ট বলেন দেন, “আমি বিজেপির কাছে মাথা নত করব না। তার চেয়ে বরং নিজের মাথা কেটে ফেলব।”
এর পরেই তিনি দুই বাঙালি অভিনেত্রীর উপর আক্রমণের প্রসঙ্গ তুলে বলেন, “ওদের এত বড় সাহস, যে ওরা মা-বোনেদের ইজ্জত নিয়ে টানাটানি করে! আমাকে দেবলীনা, সায়নী বলল, ফেসবুকে বিজেপি নাকি ওদের বলছে, ‘তোরা বাংলার বাইরে যাবি না, তোদের রেপ করে দেব।’ আমি বললাম এত সাহস! একটা করে দেখা না! তার পরে আমি দেখিয়ে দেব মমতা ব্যানার্জীটা কী, আর পশ্চিমবঙ্গটা কী।”
আরও পড়ুন: বিজেপি-বিরোধী জমায়েত শিল্পীদের, মেট্রো চ্যানেলে রাজনীতির রং মুছে জোরালো সামাজিক প্রতিবাদ
সেই সঙ্গেই তিনি উপস্থিত জনতার উদ্দেশে বলেন, “বিজেপি যদি বেশি বাড়াবাড়ি করে, লাল চুল কানে দুল পরে একটু যদি বোমা-বন্দুক বের করে, তাহলে মা-বোনেরা আপনারা হাতা-খুন্তি নিয়ে ভাল করে রান্না করে দেবেন তো?”
আগের দিন পুরুলিয়ার জনসভাতেও এই প্রসঙ্গ তুলেছিলেন মমতা। বলেছিলেন, “সায়নী বলে একটা মেয়ে, তাকে বিজেপি ধমকাচ্ছে। কেন? এত বড় ক্ষমতা! তুমি উত্তরপ্রদেশে ধমকাও, বিহারে ধমকাও, বাংলাতে ধমকানোর আশা রাখো কোথা থেকে? বাংলায় ধমকালে মুখে লিউকোপ্লাস্ট লাগিয়ে দেবে মানুষ। ক্ষমতা থাকে সায়নীর গায়ে হাত দিয়ে দেখাও, ক্ষমতা থাকলে টলিউডের গায়ে হাত দিয়ে দেখাও। ক্ষমতা থাকলে সংস্কৃতিপ্রেমী মানুষের গায়ে হাত দিয়ে দেখাও।”
তিনি সেদিন আরও বলেন, “বয়স হয়ে গেছে (তথাগত রায়ের) তবুও ভীমরতি যায় না। নাতনির বয়সী মেয়ে, তাঁকে প্রতিদিন থ্রেট করছে। কীসের জন্য, তার কি স্বাধীন ভাবে কথা বলার অধিকার নেই। নিশ্চয়ই আছে।”
সায়নীর উপর আক্রমণের সূত্রপাত ঘটে একটি সংবাদ চ্যানেলে। সেখানে অতিথি বক্তা হিসেবে একটি বিতর্কে অংশগ্রহণ করে তিনি বলেছিলেন, ‘‘যে ভাবে ‘জয় শ্রী রাম’ স্লোগানটিকে রণধ্বনিতে পরিণত করা হয়েছে, তা অত্যন্ত ভুল। উপরন্তু, এটি বাঙালি সংস্কৃতির মধ্যেও পড়ে না। ঈশ্বরের নাম ভালবেসে বলা উচিত।’’ এই নিয়ে পরের দিন সকাল থেকে সকাল থেকেই টুইটারে বাক-যুদ্ধ শুরু হয়েছিল মেগালয় ও ত্রিপুরার প্রাক্তন রাজ্যপাল তথাগত রায় ও সায়নী ঘোষের মধ্যে। টুইটারে লড়তে থাকেন দুই পক্ষ। শেষে তথাগত রায় লেখেন, “আর পারছি না, ক্ষ্যামা দে মা লক্ষ্মী।” এখানেই শেষ হয় টুইট।
কিন্তু আসলে যে শেষ হয়নি, তা প্রমাণ করেন তথাগত নিজেই। সায়নীর বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করেন তিনি। ২০১৫ সালে সায়নী ঘোষের টুইটার হ্যান্ডল থেকে একটি ছবি শেয়ার করা হয়েছিল, যাতে একটি শিবলিঙ্গে কন্ডোম পরাচ্ছিলেন এক মহিলা। তাঁকে এইডস সচেতনতার বিজ্ঞাপনের আইকন ‘বুলাদি’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছিল। ছবিটিতে লেখা ছিল, ‘বুলাদির শিবরাত্রি’। সায়নীর শেয়ার করা এ ছবির ক্যাপশনে ছিল, ‘এর থেকে বেশি কার্যকরী হতে পারেন না ঈশ্বর’।
এই ছবিটিকেই অভিযোগের হাতিয়ার করেন বিজেপি নেতা তথাগত রায়। তাঁর অভিযোগ, হিন্দু ধর্মের পবিত্রতা নষ্ট করছেন সায়নী। তিনি শিবের ভক্ত। ১৯৯৬ সালে শিবের পুজো দেওয়ার জন্য পায়ে হেঁটে কৈলাস-মানস সরোবর যাত্রা করেছিলাম। অভিনেত্রী সায়নীর এই ছবিটি দেখে তাঁর ধর্মীয় ভাবাবেগ আহত হয়েছে বলে দাবি করেন।
আর এই পর্বে ফেসবুক, ইউটিউব জুড়ে চলতে থাকে সায়নীকে যথেচ্ছ আক্রমণ। গেরুয়া বাহিনীর সমর্থকদের থেকেই আসতে থাকে একের পর এক ধর্ষণের হুমকি। কদর্য ভাষায় তাঁকে কোণঠাসা করার চেষ্টা করা হয়।
এর পরেই গেরুয়া বাহিনীর তোপের মুখে পড়েন আর এক অভিনেত্রী দেবলীনাও। ওই একই টক শো-তে পরের দিন গায়ক ও পরিচালক অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায় জানান, তাঁর নবমীর দিন গোমাংস খেতে কোনও অসুবিধা নেই। সে কথা প্রসঙ্গে দেবলীনা বলেন, তিনি নিজে নিরামিষাশী হলেও প্রয়োজনে নবমীর দিন অনিন্দ্যর বাড়িতে গিয়েও গোরুর মাংস রান্না করে খেতে দিতে পারবেন, কারণ খাওয়া নিতে তাঁর কোনও ছুৎমার্গ নেই! ‘অপরাধ’ বলতে এই মতামত প্রকাশ্যে জানানোটুকুই। আর এতেই যেন তুষে আগুন পড়ে, যাতে পুড়ে যায় অনেকের ধর্মীয় ভাবাবেগ। আগলবিহীন অসভ্যতার মুখে পড়েন অভিনেত্রী!
এর পরেই গতকাল স্বামী তথাগত মুখোপাধ্যায় ফেসবুকে লিখে জানান, ওই টক শোয়ের পর থেকেই তাঁর স্ত্রীকে নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়াতে শুরু হয় নোংরা আক্রমণ। তথাগত নাম উল্লেখ করে অভিযোগ এনেছেন বিজেপি নেতা তরুণজ্যোতি তিওয়ারির বিরুদ্ধে, তিনি সোশ্যাল মিডিয়াতে নানাভাবে, অশ্লীল ভাষায় আক্রমণ করতে থাকেন দেবলীনাকে। এমনি দেবলীনাকে খুনের হুমকি, রেপ থ্রেট, গণধর্ষণের মতো কথাও বলা হয়। জানতে চাওয়া হয় দেবলীনার ‘রেট’ কত? এই অশ্লীল আক্রমণগুলির স্ক্রিনশটও পোস্ট করেন তথাগত।
এই চরম আক্রমণের আবহে মুখ্যমন্ত্রী জানিয়ে দিলেন, তিনি সবরকম ভাবেই পাশে রয়েছেন দুই অভিনেত্রীর। বিজেপির এই নোংরা হুমকিকে মোটেই ভাল চোখে দেখছেন না তিনি, প্রয়োজনে কড়া পদক্ষেপ করবেন।