Latest News

লাদাখের ফিঙ্গার পয়েন্টে পাঞ্জাবি ভাঙরা! তারস্বরে বাজিয়ে দিয়েছে চিনের সেনারা, মজা না কায়দা

দ্য ওয়াল ব্যুরো: প্যাঙ্গং হ্রদ লাগোয়া ৪ নম্বর ফিঙ্গার পয়েন্টের উঁচু পাহাড়ের মাথায় বসে আছে ভারতীয় সেনারা। নীচে পাহাড়ি উপত্যকায় ঘুরঘুর করছে চিনের লাল সেনা। কয়েকদ কদম এগোচ্ছে আবার পিছোচ্ছে। এখন নাকি তারা পাহাড়ের খাঁজে লাউডস্পিকার বসিয়ে পাঞ্জাবি গান চালিয়ে দিয়েছে। উত্তপ্ত লাদাখ সীমান্তে তারস্বরে বাজছে পাঞ্জাবি ভাঙরা।

সীমান্ত এলাকা টহল দেওয়া চিনের সেনাদের কাছে হিন্দি ও পাঞ্জাবি ভাষা অপরিচিত নয়। বরং লাল সেনাদের অনেকেই হিন্দিতে কথা বলতেও পারে। তবে দুই দেশের মুখোমুখি অবস্থানে যেখানে প্রায় যুদ্ধ পরিস্থিতি তৈরি হয়ে আছে সেখানে লাউডস্পিকারে পাঞ্জাবি গান বাজিয়ে চিনের সেনারা ঠিক কী কায়দা করতে চাইছে সেটাই এখন দেখার। প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এর অনেক কারণ থাকতে পারে। প্রথমত, দীর্ঘসময় পাহাড়ি এলাকায় বিপদ ও ঝুঁকি নিয়ে সামরিক প্রস্তুতি চালানো, ভারতের শক্তিশালী প্রতিরক্ষাকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে অশান্তির পরিবেশ জিইয়ে রাখা, এইসব কিছু করতে করতেই হয়তো নাজেহাল হয়ে গেছে লাল সেনা। তাই কিছুটা উদ্বেগ কাটানোর জন্যই তারা এমন করছে।

দ্বিতীয়ত এবং সবচেয়ে বেশি যে সম্ভাবনার কথা ভাবছেন বিশেষজ্ঞরা সেটা হল, ভারতের সেনাদের লক্ষ্যচ্যুত করাই তাদের উদ্দেশ্য। পাহাড়ের কোন এলাকায় ভারতীয় সেনার বিন্যাস কেমন সেটা ঠিক ঠাওর করতে পারছে না লাল সেনারা, তাই তারা ভেবেছে পাঞ্জাবি গান চালিয়ে ভারতীয় সেনাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারলেই তাদের অবস্থানের একটা আন্দাজ পাওয়া যাবে। তাছাড়া, নর্দার্ন সেনা কম্যান্ডে অনেক পাঞ্জাবি জওয়ানরা রয়েছেন। দীর্ঘসময় পাহাড়ি এলাকায় তীব্র ঠান্ডায় তাঁরাও ক্লান্ত। এই গান শুনে যদি তাঁরা সাড়া দেন ও লক্ষ্য থেকে সামান্য বিচ্যুত হন তাহলে সেটাই হবে সুযোগ।

পূর্ব লাদাখের গালওয়ান, গোগরা, কোঙ্গা লা, উত্তর ও দক্ষিণ প্যাঙ্গংয়ে এখন চিন ও ভারতীয় সেনার মধ্যে সংঘাতের পরিস্থিতি তৈরি হয়ে আছে। বিশেষত প্যাঙ্গং হ্রদ লাগোয়া ফিঙ্গার পযেন্টগুলোর দখল নিতে মরিয়া চিনের সেনা। শুধুমাত্র ভারতীয় বাহিনীর জন্যই সেটা তারা পেরে উঠছে না। লাদাখের পাহাড়ি এলাকায় ফাইবার কেবল বসিয়ে আড়ি পাতার চেষ্টাও কতটা সফল হয়েছে সেই নিয়েও সন্দেহ আছে ভারতের সেনার। তাই এখন তাদের নতুন কৌশল ভারতের একনিষ্ঠ পার্বত্য বাহিনীর মনোসংযোগ নষ্ট করে দেওয়া। মজার ছলে গানবাজনা করে ভারতীয় জওয়ানদের মনের উপর চাপ তৈরি করা।

দক্ষিণ প্যাঙ্গং লেকের ৭০ কিলোমিটার জায়গা জুড়ে এখন মুখোমুখি অবস্থানে ভারত ও চিনের ট্যাঙ্কবাহিনী। ক্ষিণে চুসুল, মলডোর কাছে ফের লাল সেনার তৎপরতা লক্ষ্য করা গেছে। প্যাঙ্গং হ্রদের উত্তর সীমায় ৩ নম্বর ফিঙ্গার পয়েন্টের কাছে নতুন করে সামরিক কাঠামো তৈরিতে লেগে পড়েছে লাল ফৌজ। ট্রাকে চাপিয়ে সামরিক সরঞ্জাম নিয়ে এসে মজুত করা হচ্ছে। ভারতীয় সেনা সূত্র এমনটাই জানিয়েছে।

গত ২৯-৩০ অগস্ট চিনের বাহিনী যখন কালা টপের দখল নিতে না পেরে ফিরে গিয়েছিল, তার পর পরই উত্তর প্যাঙ্গংয়ের ৪ নম্বর ফিঙ্গার পয়েন্টে সেনার সংখ্যা বাড়িয়েছিল ভারত। এই মূহূর্তে ওই এলাকায় টহল দিচ্ছে গেরিলা যুদ্ধের প্রশিক্ষণ পাওয়া ভারতের দুর্ধর্ষ মাউন্টেন ফোর্স স্পেশাল ফ্রন্টিয়ারের কম্যান্ডোরা। লেহ-র কাছেই ভারতের বায়ুসেনা ঘাঁটি আছে। সেখান থেকে সুখোই-৩০এমকেআই, মিগ-২৯ যুদ্ধবিমান ইতিমধ্যেই উড়ে এসেছে প্যাঙ্গং রেঞ্জে। হ্রদ পেরিয়ে বিপরীতে চুসুল রেজিমেন্টে টি-৯০ ভীষ্ম ট্যাঙ্ক ও টি-৭২ যুদ্ধট্যাঙ্ক তৈরি হয়েই আছে। সব মিলিয়ে তাই মহা ফাঁপরে পড়েছে চিনের বাহিনী।

১৩ হাজার ৮৬২ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত প্যাঙ্গং সো লেক ভারত, চিন ও তিব্বতের সীমা অবধি বিস্তৃত। উত্তর ও দক্ষিণ ভাগ মিলিয়ে ৬০০ বর্গকিলোমিটারের বেশি এলাকা রয়েছে। হ্রদের উত্তর ভাগে মিশেছে কারাকোরাম পর্বতশ্রেণি। ওই দিকেই রয়েছে ফিঙ্গার পয়েন্ট ৪। প্যাঙ্গং হ্রদের দক্ষিণ ভাগে রয়েছে বিক্ষিপ্তভাবে ছড়িয়ে থাকা পাহাড় যা ধাপে ধাপে নেমে গেছে স্প্যানগুর লেকের দিকে। এই হ্রদ ও তার সংলগ্ন এলাকার দুই তৃতীয়াংশেই নিজেদের অধিকার ফলাবার চেষ্টা করে চিন যা ভারতীয় সেনার তৎপরতায় রুখে দেওয়া গিয়েছে। ভারতের বাহিনীর শক্তি দেখে তার আগ্রাসনের বাহাদুরি দেখাতে পারছে না। তাই আঁটঘাট বেঁধে একটু একটু করে এগোনোর চেষ্টা করছে।  অন্যদিকে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা তথা এলএসি বরাবরও সেনার সংখ্যা বাড়াচ্ছে তারা।

শেষবার চুসুল সীমান্তে সেনা কম্যান্ডার পর্যায়ের বৈঠকের পরে ঠিক হয়েছে দুই দেশের বাহিনীই তাদের নিয়ন্ত্রণাধীন এলাকায় শান্তি বজায় রাখবে, অন্যায়ভাবে আগ্রাসনের চেষ্টা চালাবে না এবং সীমান্ত নীতি ভেঙে বিপক্ষের সেনার উপরে হামলা চালানোর চেষ্টা করবে না। যদিও এইসব শর্ত মেনে চলার কোনও লক্ষণই প্রকাশ পায়নি লাল সেনার মধ্যে। সম্মুখ সমরে ভারতের বাহিনীকে হারাতে পারবে না জেনে, তারা এখন ঘুরপথে ‘মাইন্ড গেম’খেলার চেষ্টা করছে, এমনটাই দাবি করেছেন প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞরা।

You might also like