
দ্য ওয়াল ব্যুরো: চিন-ভারত সেনা কম্যান্ডার পর্যায়ের বৈঠকেও রফাসূত্র মিলল না। প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর মুখোমুখি অবস্থান থেকে সেনা সরাতে (ডিসএনগেজমেন্ট) চিন যে কোনওভাবেই রাজি নয় তার প্রমাণ ফের মিলল। ভারতীয় সেনা সূত্র জানাচ্ছে, পূর্ব লাদাখ সীমান্তে নতুন করে সামরিক কাঠামো তৈরি করছে পিপলস লিবারেশন আর্মি। গালওয়ান সংঘাতের পরে সীমান্ত বরাবর অস্থায়ী সামরিক কাঠামো বানিয়েছিস লাল সেনা। এবার পাকাপোক্তভাবে লাদাখ সীমান্ত থেকে আকসাই চিন অবধি বিশাল এলাকা জুড়ে সামরিক সজ্জার প্রস্তুতি নিচ্ছে চিন। বাড়ানো হচ্ছে সেনাও।
শীতের আগেই চিনের সেনাদের ঠেকাতে সীমান্তে আরও বেশি সেনা মোতায়েন করেছে ভারত। প্যাঙ্গং রেঞ্জ, গোগরা, দেপসাং সমতলভূমিতে টি-৯০ ও টি-৭২ যুদ্ধট্যাঙ্কের পাশাপাশি একাধিক মিসাইল সিস্টেমও প্রস্তুত রেখেছে ভারতের বাহিনী। সীমান্তে বায়ুসেনার এয়ার ডিফেন্সও যে কোনও পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে তৈরি। ভারতের রণকৌশল দেখে চিন তাই নতুন করে তাদের সেনা বিন্যাস শুরু করেছে। ১৫৯৭ কিলোমিটার প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা বরাবর অস্ত্রশস্ত্র মোতায়েন করার কাজ চলছে।
ভারতীয় সেনার এক শীর্ষ আধিকারিক জানিয়েছেন, প্রায় ৩ লক্ষ বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে সামরিক পরিকাঠামো গড়ে তুলছে চিনের বাহিনী। অধিকৃত আকসাই চিন থেকে গোগরা-হট স্প্রিং অবধি বিস্তৃত এই সামরিক কাঠামো। আয়তনে প্রায় চারটি ফুটবলের মাঠের সমান। এখানে আর্মি ভেহিকল মোতায়েন করা হচ্ছে। মিসাইল সিস্টেম ও রাইফেল ডিভিশন তৈরি করছে পিপলস লিবারেশন আর্মি।
তিব্বতের শিকুয়ানহিতে বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে নির্মাণকার্য চালাচ্ছে চিনের, এমনটাও দেখা গেছে উপগ্রহ চিত্রে। তৈরি হচ্ছে হেলিপ্যাড। অন্তত পাঁচ হাজার সেনা ও অস্ত্রশস্ত্র মোতায়েনের মতো পরিকাঠামো তৈরি হচ্ছে ওই এলাকায়। এর আগে ওই এলাকায় এমন পরিকাঠামো দেখা যায়নি। নতুন করেই নির্মাণকাজ শুরু হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। অন্যদিকে তিব্বতের হোটান এয়ারবেসে চিনের যুদ্ধবিমান ওঠানামা করতে দেখা গিয়েছে। ভারতীয় সেনা সূত্র জানিয়েছে, আকসাই চিনের ভেতরে ৯২ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে সেনা ক্যাম্প তৈরি হয়েছে। সেখান থেকে গালওয়ান রেঞ্জে নজর রাখছে চিনের সেনা। আকসাই চিন থেকে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর পূর্ব লাদাখের প্রায় ৮ থেকে ২০ কিলোমিটার এলাকা চিনের সেনার নজরদারিতে রয়েছে। ভারতীয় বাহিনী কী কী প্রস্তুতি নিচ্ছে তাতে সতর্ক নজর রেখে চলেছে লাল সেনা।
১৩ হাজার ৮৬২ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত প্যাঙ্গং সো লেক ভারত, চিন ও তিব্বতের সীমা অবধি বিস্তৃত। উত্তর ও দক্ষিণ ভাগ মিলিয়ে ৬০০ বর্গকিলোমিটারের বেশি এলাকা রয়েছে। হ্রদের উত্তর ভাগে মিশেছে কারাকোরাম পর্বতশ্রেণি। ওই দিকেই রয়েছে ফিঙ্গার পয়েন্ট ৪। প্যাঙ্গং হ্রদের দক্ষিণ ভাগে রয়েছে বিক্ষিপ্তভাবে ছড়িয়ে থাকা পাহাড় যা ধাপে ধাপে নেমে গেছে স্প্যানগুর লেকের দিকে। এই হ্রদ ও তার সংলগ্ন এলাকার দুই তৃতীয়াংশেই নিজেদের অধিকার ফলাবার চেষ্টা করে চিন যা ভারতীয় সেনার তৎপরতায় রুখে দেওয়া গিয়েছে। কালা টপ, হেলমেট, মুখপারি, রেচিন লা এখন ভারতীয় সেনার নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। তাই পাহাড় চূড়ায় সুবিধা করতে না পেরে, পাহাড়ের পাদদেশে সামরিক কাঠামো তৈরি করতে শুরু করেছে চিন। ফিঙ্গার পয়েন্ট ৩ এর কাছে যুদ্ধট্যাঙ্ক মোতায়েন করেছে লাল সেনা। ভারী ও হাল্কা দু’রকমের যুদ্ধট্যাঙ্কই রয়েছে তাদের সামরিক বহরে।
অন্যদিকে, অরুণাচল সীমান্তেও সক্রিয় চিনের বাহিনী। ভারতীয় সেনা সূত্রে খবর, অরুণাচলের সীমানা বরাবর চার জায়গা যথা আসাফিলা, টুটিং অ্যাক্সিস, চ্যাং জ়ি ও ফিসটেল-২ সেক্টরে সেনা মোতায়েন করতে দেখা গেছে চিনকে। সূত্রের খবর, এই চার এলাকায় আরও বেশি সেনা মোতায়েনের উদ্দেশ্য রয়েছে চিনের। তাদের গতিবিধি থেকেই এটা স্পষ্ট। অরুণাচলের কাছে রাশিয়ার থেকে কেনা পি-৪০০ মিসাইল সিস্টেমও মোতায়েন করেছে চিন। লাদাখে ভারতীয় সেনার প্রস্তুতি দেখে তারা ঘুর পথে নিজেদের সক্রিয়তা বাড়ানোর চেষ্টা করছে। কখনও ভুটান সীমান্তে, কখনও মানস সরোবরের কাছে সেনা মোতায়েন করতে দেখা যাচ্ছে চিনকে।