
দ্য ওয়াল ব্যুরো: করোনার মধ্যেই চিকেন পক্সের (chickenpox) সংক্রমণ বাড়ছে কলকাতা। গত এক মাসে এই ভাইরাসঘটিত রোগে অন্তত সাত জনের মৃত্যু হয়েছে। স্বাস্থ্য দফতরের রিপোর্ট বলছে, শুধুমাত্র কলকাতাতেই গত এক বছরে চিকেন পক্সে প্রাণ গেছে ৩৫ জনের। আক্রান্ত দু’হাজারেরও বেশি।
বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ঋতু পরিবর্তনের সময়ে হাম (Measles) ও বসন্তের প্রাদুর্ভাব বেশি দেখা যায়। তবে বিশ্ব উষ্ণায়নের ফলে এখন এই সব রোগ হওয়ারও কোনও নির্দিষ্ট সময় নেই। জলবায়ু যেভাবে বদলাচ্ছে, তাতে সংক্রামিত রোগগুলো ক্রমেই বিপজ্জনক হয়ে উঠছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য় সংস্থা (হু) ও ইউনিসেফের সমীক্ষা বলছে, বিশ্বজুড়েই হাম, পক্সে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে।
স্মল পক্স বা গুটিবসন্তের মতো সাংঘাতিক না হলেও জলবসন্তের (chickenpox) সাম্প্রতিক দাপট দেখে চিকিৎসকদের কপালে ভাঁজ পড়েছে। কারণ একটা সময় ছোটবেলায় চিকেন পক্স হলেও তা সেরে যেত। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে, ভ্যারিসেলা জুস্টার নামক ভাইরাস যা চিকেন পক্সের জন্য দায়ী তাই ক্রমশ অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠছে। সংক্রমণ এমন পর্যায়ে পৌঁছচ্ছে যে মানুষজনের প্রাণহানি হচ্ছে। বাঁকুড়া, উত্তরবঙ্গ থেকেও সংক্রমণ ও মৃত্যুর খবর আসছে।
বেলেঘাটা আইডিতে সাত জন চিকেন পক্সের উপসর্গ নিয়ে ভর্তি। দু’জনের অবস্থা সংকটজনক। চিকিৎসকদের মত, রোগীর সংস্পর্শে আসা অন্তত ৮০ শতাংশ মানুষ জলবসন্তে আক্রান্ত হতে পারে। তাই সচেতনতা ও সাবধানতাই আসল দাওয়াই।
চিকেন পক্স হলে কী হয়? কীভাবে ছড়ায় এই রোগ?
বসন্ত রোগ বলতে আমরা সেই রোগটিকেই বুঝি, ডাক্তারি পরিভাষায় যাকে বলা হয় চিকেন পক্স। অনেকে জলবসন্তও বলেন। আর এক ধরনের পক্স আগে হত। সেটা হল স্মল পক্স বা গুটিবসন্ত। এখন আর হয় না। শুধু বসন্তকালে নয়, বছরের যে কোনও সময়েই এই রোগ হতে পারে। তবে বছরের প্রথম ছ’মাস অর্থাৎ জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত এই রোগ হওয়ার আশঙ্কা বেশি থাকে। আবহাওয়ার পরিবর্তনের কারণেই এই রোগের প্রকোপ বেশি দেখা যায়। ইনফ্লুয়েঞ্জার মতোই ভাইরাস ঘটিত রোগ। ভ্যারিসেলা জুস্টার (ভি-জেড ভাইরাস) নামে এক ধরনের ভাইরাসের জন্য এই রোগ হয়।
রোগের লক্ষণ কী কী? চিকেন পক্স হলে আগে জ্বর হবে। পরের ২-৩ দিনের মধ্যে জ্বরের মাত্রা বাড়তে থাকবে। সেই সঙ্গে সারা শরীরে ব্যথা হবে। ছোট ছোট গুটির মতো র্যাশ বের হবে। খসখসে হয়ে যাবে ত্বক, চুলকানি হবে। সারা শরীর, মুখেও র্যাশ ছড়িয়ে পড়বে। ৫-৭ দিন পর্যন্ত র্যাশ বের হবে। পরে ধীরে ধীরে সেগুলিই জলভরা ফোস্কার মতো আকার নেবে। ফোস্কার ভিতরের রস ঘন হয়ে পুঁজের মতো হয়ে শুকিয়ে উঠবে।

চিকেন পক্স খুবই ছোঁয়াচে রোগ। খুব দ্রুত আক্রান্ত ব্যক্তির থেকে সুস্থ মানুষের শরীরে তা ছড়িয়ে পরে। সাধারণত আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি, কাশি বা থুতুর সঙ্গে ভাইরাস ছড়ায়। এমনকি, রোগীর সংস্পর্শে এলেও রোগ ছড়াতে পারে। শরীরে ভাইরাস ঢোকার সপ্তাহ দুয়েকের মধ্যে ধীরে ধীরে উপসর্গ দেখা দিতে শুরু করে। চিকেন পক্সের ভ্যাকসিন নেওয়া থাকলে এই রোগের প্রকোপ থেকে রেহাই মেলে। বাচ্চাদের আগে থেকেই তাই পক্সের ভ্যাকসিন দিয়ে রাখা হয়।
পক্সের কারণে সাধারণত শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সাময়িকভাবে কমে যায়। সচেতন না হলে নিউমোনিয়া, ব্রঙ্কাইটিস, হাঁচি-কাশি, পেটের গোলমাল দেখা দিতে পারে। কোনও পুরনো বা জটিল রোগ থাকলে পক্সের কারণে তা আরও বাড়তে পারে। সময়মতো ব্যবস্থা না নিলে কোনও কোনও ক্ষেত্রে প্রাণহানির আশঙ্কাও থেকে যায়। তাই উপসর্গ দেখা দিলেই দেরি না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।